টাইগারদের নতুন কোচের পাঁচ চ্যালেঞ্জ

ছবি:

বাংলাদেশ দলের প্রধাণ কোচ হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার স্টিভ রোডস। আগামী ২০ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে টাইগারদের দায়িত্ব নেবেন তিনি। বাংলাদেশ দলের সাথে কাজ করবেন আগামী ২০২০ সাল পর্যন্ত।
এরই মধ্যে দুইটি বিশ্ব আসরে খেলবে রোডসের শিষ্যরা। এর মধ্যে রয়েছে আগামী বছর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তার পরের বছর টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজও। ফলে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে নব নিযুক্ত এই কোচকে।
ক্রিকেটের জনপ্রিয় পোর্টাল ক্রিকইনফো সম্প্রতি একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন স্টিভ রোডসের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে। ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য সরাসরি তুলে ধরা হলোঃ
আত্মবিশ্বাসের সংকট
গত বছরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেবার তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই হোয়াইট ওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। এটিই ছিল চান্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে বাংলাদেশ দলের সবশেষ সিরিজ। তারপর থেকেই আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভূগছে বাংলাদেশ দল।
চলতি বছরের শুরুতে নিজ দেশে ত্রিদেশীয় সিরিজসহ শ্রীলঙ্কার কাছে টেস্ট ও টি-টুয়েন্টিতে হার। মাঝে নিদাহাস ট্রফিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সম্প্রতি আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশের ল??্জায় পড়তে হল বাংলাদেশকে। সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ।
২০১৫ সালে দুর্দান্ত খেলে আত্মবিশ্বাসের যে চূড়ায় উঠেছিল বাংলাদেশ দল। সেখানে নিয়ে যেতে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে রোডসকে। দলের সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটারের সাথে বিশ্বকাপের আগেই মুস্তাফিজুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও সৌম্য সরকারদের মতো তরুণ প্রতিভাবানদের গড়ে তুলতে হবে। এটাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ টাইগারদের নতুন কোচের।

দেশের বাইরে খেলা
২০১৫ সালে বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের উত্থানের পেছনে সবচেয়ে সহায়ক ছিল ঘরের মাঠে টানা সিরিজ খেলা। সেবার নিজেদের কন্ডিশবে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোর সাথে সিরিজ জিতে ছিল বাংলাদেশ দল।
তবে, এবার ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশ দলের। আগামী বিশ্বকাপের আগে বেশিরভাগ ম্যাচই খেলতে হবে দেশের বাইরে। কদিন পরেই পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাবে বাংলাদেশ দল। তারপরেই ভারতে এশিয়া কাপ। এরপর আছে নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফর।
নতুন এফটিপি অনুযায়ী ২০২০ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে টাইগাররা ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের মাটিতে খেলবে টাইগাররা। দেশের বাইরেও বাংলাদেশ দলকে ভালো দল হিসেবে গড়ে তুলতে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে রোডসকে।
বোর্ড প্রধানের সংশ্লিষ্টতা
অন্যকোন সময় হলে রোডসকে এটা নিয়ে ভাবতে হতো না। কিন্তু বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন হওয়ার কারণেই বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবনায় পড়তে হবে রোডসকে। বিসিবির বর্তমান প্রধান সমালোচনা, প্রশংসা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে বেশ স্পষ্টবাদী।
অনেকেই এটাকে ‘হস্তক্ষেপ’ মনে করলেও নিজেকে সঠিক মনে করেন পাপন। দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে টিম মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন তিনি। দল নির্বাচনেও বড় ভূমিকা থাকে তার। কোচিংয়ের পাশাপাশি রোডসের চ্যালেঞ্জ হবে বিসিবির সমর্থন আদায় করে নেয়া ও বোর্ড প্রধানের ‘হস্তক্ষেপে’ ভারসাম্য রাখা।
ভালো করার স্বল্প মেয়াদী বাসনা
রোডসকে বাংলাদেশ দলের তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে ভালো করার দীর্ঘমেয়াদী বাসনা গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক টাইগার ক্রিকেটারই শুরুতে আলোড়ন ফেলে দিলেও সময়ের স্রোতে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। যেমন সৌম্য সরকার, সোমাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। মুস্তাফিজুর রহমান ও সাব্বির রহমানও শুরু দিকে চমক জাগালেও সেই ধার ধরে রাখতে পারেননি দীর্ঘ সময়। রোডসের প্রধান কাজ হবে তরুণ খেলোয়াড়দের দীর্ঘ সময় ধরে ভালো খেলার তাগিদ তৈরি করা।
ওয়ানডে খেলুড়ে দেশের তকমা
বাংলাদেশ ওয়ানডেতে ভালো দল। এমন একটা তকমা লেগে গেছে। রোডসকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে ওয়ানডে খেলুড়ে দেশের তকমা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনা। সত্যিকার অর্থেই ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল যতটা ভালো করছে, টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটে এতোটা ভালো করতে পারছে না। অভিজ্ঞ ও তরুণদের সমন্বয়ে টাইগারদের ওয়ানডে স্কোয়াডটিও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। তবে টেস্ট ও টি২০ দলটাকেও শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে রোডসকে।