পাপনের সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক?

ছবি:

নিদাহাস ট্রফির অলিখিত সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিলো সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ দল। সেই জয়ের পর পুরো দলকে এক কোটি টাকা পুরষ্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
বিসিবি প্রধান হয়তো ক্রিকেটারদের পারফর্মেন্সে খুশি হয়েই বোনাসের ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো একটি সিরিজের মাঝপথে এই বোনাস ঘোষণার রীতি কতটা যৌক্তিক? জানা গেছে এই প্রথা নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেক বোর্ড কর্মকর্তাদেরই। অন্তত একটি সিরিজ চলাকালিন সময়ে এমন পুরস্কার দেয়ার ঘোষণার পদ্ধতি খুব একটা ভালো দেখায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিসিবি কর্মকর্তা জানিয়েছেন সকলের সাথে আলোচনা করে এবং মতামত গ্রহণ করে তবেই বোনাস ঘোষণা দেয়া উচিৎ ছিলো বোর্ড প্রধানের। অন্তত একচেটিয়াভাবে নিজের সিদ্ধান্ত বজায় রাখা ঠিক নয় জানিয়ে তিনি বলছিলেন,
'যেভাবে বোনাস ঘোষণা করা হয়, এভাবে না দিয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ প্রস্তাবনা আকারে বোর্ড মিটিংয়ে পাস করিয়ে নিতে পেরে। না হলে মনে হতে পারে, বোনাস নির্ভর করে বোর্ড সভাপতির খুশি-অখুশির ওপর। টাকার অঙ্ক যেহেতু নেহাত কম নয়, এ ধরনের আর্থিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পরিচালনা পর্ষদের মতামতের গুরুত্ব বা প্রতিফলন থাকা উচিত।'

সেই বোর্ড কর্মকর্তা আরো বলেন, 'হ্যাঁ, প্রেসিডেন্টের বোনাস ঘোষণার এখতিয়ার আছে। কিন্তু তাঁর উচিত সহকর্মীদের যোগ্য সম্মান দেওয়া, যেহেতু তিনি আগে পরিচালক, পরে সভাপতি। আমরা সবাই চাই, খেলোয়াড়েরা আর্থিকভাবে লাভবান হোক। সবই হোক নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে।'
বিসিবি প্রধানের এই বোনাস ঘোষণা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন বলে জানানা আরেকজন কর্মকর্তা। পৃথিবীর আর কোনো দেশেই একটি সিরিজের সময় এভাবে বোনাস দেয়া হয় না। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডও তাদের ক্রিকেটারদের উদবুব্ধ করতে বোনাসের ঘোষণা দেয়নি। বিসিবির সেই কর্মকর্তা এই প্রসঙ্গে বলেন,
‘ক্রিকেট বিশ্বে পাকিস্তান বোর্ড নিয়ে হাসাহাসি হয়। পিসিবিতেও কিন্তু এত হুটহাট বোনাস ঘোষণার সংস্কৃতি আমরা দেখি না। এ ছাড়া বাকি ক্রিকেট বিশ্বেও এভাবে বোনাস দেওয়ার খবর পাওয়া যায় না। শ্রীলঙ্কা এই টুর্নামেন্টেই ভারতকে হারিয়েছে। এই টুর্নামেন্ট জেতা তাদের জন্য বেশি জরুরি ছিল। কই, শ্রীলঙ্কান বোর্ড তো ক্রিকেটারদের বাড়তি বোনাস ঘোষণা দিল না।’
অবশ্য এই বোনাস দেয়ার প্রথাটি সমর্থন করছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক গাজি আশরাফ হোসেন লিপু। যদিও বোনাসের প্রক্রিয়াতে আপত্তি রয়েছে তাঁর। তিনি মনে করেন এই বোনাসের অঙ্কটি ক্রিকেটারদের বেতনের সাথে যুক্ত করলে আরো বেশি কার্যকরী হবে। তিনি বললেন,
‘এ ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার বিপক্ষে নই। একজন ক্রিকেটারের খেলোয়াড়ি জীবন খুব দীর্ঘ নয়। শুধু জাতীয় দলের কেন, প্রণোদনা দেওয়া উচিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদেরও। যেটি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া দিয়ে থাকে। জিতলেই বছরে তিন-চার কোটি টাকার প্রণোদনা না দিয়ে এটা বেতনকাঠামোয় যোগ করলে আরও ভালো হয়। খেলোয়াড়েরা তাতে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবে।’