তামিমরা কি বিসিবির হাতের ময়লা?

ছবি:

বিপিএলের খেলা দেখতে যান কেন? এই প্রশ্নটি যদি কোনো ক্রিকেট প্রেমী দর্শককে করা হয় তাহলে হয়তো তিনি কখনোই বলবেন না লো স্কোরিং ম্যাচ দেখার প্রত্যাশায় তাঁর আগমন। ঠিক তাই, ক্রিকেট বিশ্বে বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে কেউই একঘেয়ে এবং লো স্কোরিং ম্যাচ দেখার জন্য মাঠে যাননা।
কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা এই বিষয়টি সহজে বুঝতে পারলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবির হয়তো তা বোঝার ক্ষমতা নেই। অথবা হয়তো তারা সেটি বুঝতেই চায় না। আর এই কারণেই বিপিএলের মতো চার ছক্কার টুর্নামেন্টের উইকেটকে তারা রীতিমত ব্যাটসম্যানদের মৃত্যুফাঁদ বানিয়ে রাখতেও দ্বিধা করে না।
এবার আসা যাক মূল বক্তব্যে। সদ্য শেষ হওয়া বিপিএল আসরে সবচেয়ে লো-স্কোরিং ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও মাশরাফির রংপুর রাইডার্সের। বিপিএলের ৩৫তম ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৯৭ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিলো রংপুর।
পরবর্তীতে এই রান তাড়া করতেও রীতিমত ঘাম ঝড়াতে হয়েছিলো তামিমদের। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৪ উইকেটে জয় তুলে নিলেও ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে উইকেট নিয়ে ঠিকই খেদ ঝেড়েছিলেন কুমিল্লা অধিনায়ক তামিম।
ক্রিস গেইল, ব্র্যান্ডন ম্যাককালামদের মতো তারকা ব্যাটসম্যানেরাও যেই উইকেটে রান পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই উইকেট অন্তত টি টোয়েন্টির জন্য আদর্শ উইকেট ছিলো না এটি বলা যায় হলফ করেই। আর তাই কোনো প্রকার রাখঢাক না করেই উইকেটের সমালোচনা করেছিলেন তামিম। বিশেষ করে পিচ কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার প্রতিই বেশি ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন,
'সবসময় একটি অজুহাত দেওয়া হয় যে মিরপুরে অনেক খেলা হয়। এবার তো ১০ দিন খেলা হলো না। এরপর এমন উইকেট, এটা কিউরেটর উত্তর দিতে পারবে ভালো। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করা উচিত। সবচেয়ে খারাপ লাগছে, এত দর্শক এল মাঠে। কিন্তু এসে দেখল একদল ৯৭ করছে, আরেক দলের সেটি করতে শেষ ওভার পর্যন্ত যেতে হয়েছে, দর্শকের জন্য এটি হতাশাজনক। কী কারণে এরকম উইকেট বানানো হচ্ছে, আমার ধারণা নেই।'

তামিমের এই উক্তির পর তাঁকে অবশ্য ছেড়ে দেয়নি বোর্ড। সাথে সাথেই তাঁকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে। এতেই ক্ষান্ত হয়নি বোর্ড। বৃহস্পতিবার শুনানিতেও ডাকা হয়েছে তামিমকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু বোর্ড কর্মকর্তা জানিয়েছেন,উইকেটের সমালোচনা অনেকটা বেশ খারাপভাবেই নাকি করেছেন তামিম। শুধু তাই নয়, উইকেটের আচরণ ও প্রকৃতি নিয়ে টেকনিক্যাল ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বলে অভিমত তাঁদের। এই কারণেই বোর্ডে চক্ষুশূল হিসেবে গণ্য হলেন কুমিল্লা অধিনায়ক।
তবে শুধু তামিমই নয়, উইকেট নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন কিউই ওপেনার ব্র্যান্ডন ম্যাককালামও। কই সে সময় তো বিসিবি তাঁকে তলব করেনি! তাঁকে কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়নি। ম্যাককালাম বিদেশি বলেই কি তবে তাঁর সাতখুন মাফ? আর বাংলাদেশের সেরা ওপেনার হওয়া সত্ত্বেও তামিমকে দাঁড়াতে হবে কাঠগড়ায়!
ঠিক আছে মানা গেল তামিমের সমালোচনার ধরণটি ভালো লাগেনি বলেই বিসিবি তাঁকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে, কিন্তু মিরপুরের উইকেট যে টি টোয়েন্টির জন্য আদর্শ ছিলো না মোটেই সেটি স্বীকার তো অন্তত করতে পারতেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। কিসের কি! উল্টো তামিমকে বলির পাঁঠা বানানোর জন্য যেন উঠেপড়েই লেগেছেন তাঁরা।
তামিমের বিরুদ্ধে বিসিবির শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগও এনেছেন তাঁরা। এখন প্রশ্ন হলো বিসিবির সকল অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করাটাই কি শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে? পান থেকে চুন খসলেই যদি ক্রিকেটারদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়া করানো হয় তাহলে দেশের ক্রিকেটের উন্নতি হবে কি করে?
আর তামিম তো নিজের জন্য কিছু বলেননি। বলেছিলেন বিপিএলের স্বার্থে, বিপিএল দেখতে আসা হাজারো দর্শকদের স্বার্থে। কোনো দর্শক অন্তত ৭০০ কিংবা ১০০০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে লো স্কোরিং ম্যাচ দেখতে আগ্রহী হবেন না।
তামিমের বক্তব্যে বিসিবির এই অ্যাকশন যে অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো এই বিষয়টি কি কেউ ভেবে দেখেছে? বোর্ডের আতে ঘা লাগলেই ক্রিকেটারদের চক্ষুশূল বানানোর এই রীতি থেকে যতদিন না বের হয়ে আসা সম্ভব হবে ততদিন বাংলাদেশের ক্রিকেট যেই তিমিরে সেই তিমিরেই পড়ে থাকবে এটি হলফ করে বলা যায়।
দেশের জন্য যেই ক্রিকেটার নিজেকে মাঠে বিলিয়ে দেন, বাইরের দেশের কিংবদন্তী ক্রিকেটাররা পর্যন্ত যাকে সম্মান করেন, সেই তামিম ইকবালদের মতো ক্রিকেটাররা নিজের দেশের মাটিতে যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে!
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। টেস্ট ফরম্যাটে ৫২ ম্যাচে ৩৯.২৫ গড়ে ৩৮৮৬ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। আর ওয়ানডেতে ১৭৪ ম্যাচে ৩৪.৩২ গড়ে ৫৭৬৬ রানের মালিক তিনি। টি টোয়েন্টিতেও কম যাননা চট্টগ্রামের খান সাহেব। ১৫৫টি টোয়েন্টিতে ৩০.২৯ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৪২৪১ রান।
এমনই বর্ণাঢ্য যার ক্রিকেট ক্যারিয়ার সেই তামিমই কিনা বারংবার অপমানিত হচ্ছেন বোর্ডের কাছে! এক্ষেত্রে তাই বলা যায় বিসিবির কাছে এসকল পরিসংখ্যানের কোনোই মূল্য নেই। দিন শেষে তাই প্রশ্ন থেকেই যায়- তামিমরা কি বিসিবির হাতের ময়লা?