এক 'অকুতোভয়' যোদ্ধার শিরোপা জয়ের লড়াই

ছবি:

বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেট ভক্তদের সৌভাগ্যই বলতে হবে যে তারা কখনও একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ না দেখলেও অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধাকে ঠিকই দেখতে পেরেছে। যিনি ক্রিকেট মাঠে নিজেকে দেশের তরে উজাড় করে দেন প্রতিনিয়তই।
হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে ক্রিকেটের সাথে যুদ্ধের সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে বৈকি। যখন ক্রিকেট খেলাকে একটি দেশে ধর্মের কাতারে ফেলা হয় তখন অবশ্যই সেটি যুদ্ধের পর্যায়েই পরে।
এর উদাহরণ পেতে খুব বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালেই এর যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ক্রিকেটকে রীতিমত জাতীয় খেলা বানিয়ে ফেলা এই দেশটি ক্রিকেটারদের ভগবান মানতেও দ্বিধা করেনা।
কিন্তু যখন সেই ভগবান প্রতিম ক্রিকেটারটিই যখন খারাপ খেলেন তখন তাঁকে পায়ের নিচে নামিয়ে আনতেও দ্বিধা করেননা সেখানকার ক্রিকেট ভক্তরা। অবশ্য শুধু ভারতেই নয়, বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে ক্রিকেট খেলা পরিণত হয়েছে জাতীয় খেলায়।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে যদি এদেশের জাতীয় খেলা কোনটি সেই প্রশ্ন করা হয় তাহলে হলফ করে বলা যায় ৯৯ ভাগই মানুষই ক্রিকেটের কথা বলবেন। সেই ক্রিকেট নামক যুদ্ধে যারা দেশের জন্য নিজেদের সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে খেলেন তারা নিঃসন্দেহে বীরের পর্যায়েই পড়েন।
আর তেমনই একজন ‘বীর যোদ্ধার’ নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা। যিনি দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে কখনোই কার্পণ্য করেননা। পায়ের সাতবার অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও মাঠে নামেন দলকে জেতানোর জন্য।

কোনো দলের বিপক্ষে পরাজয়ের পরও দলকে উৎসাহ দেন পরবর্তী ম্যাচে ভালো খেলার জন্য। যার অধীনে পুরো বাংলাদেশ দলেরই খোলনচে পাল্টে গেছে তাঁকে এই প্রজন্মের বীর যোদ্ধা হিসেবে আখ্যা দেয়া কি অনেক বড় ধৃষ্টতার সামিল হবে?
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে মাশরাফি আদর্শ হিসেবেই বিবেচিত। আর জাতীয় দলে খেলা তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানদের মতো তরুণরা তাঁকে মানেন অভিভাবক এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে।
আলোর দিশারী হিসেবেই নিজেকে বারংবার সকলের কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি। নিজের নেতৃত্বগুণে দেশে তো বটেই, বাইরেও মাশরাফির সুনাম ছড়িয়ে গেছে ব্যাপকভাবে।
বিশ্ব ক্রিকেটের সাবেক কিংবদন্তী ক্রিকেটারদের থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকারদেরকেও মাশরাফি বন্দনায় মাততে দেখা গেছে। শুধু দেশের হয়েই নয়, ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) আসরেও অনন্যসাধারণ অধিনায়কত্বের নজীর রেখেছেন ম্যাশ।
এখন পর্যন্ত বিপিএলের সবথেকে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। বিপিএলের প্রথম তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন দলকেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তাঁর অধীনে প্রথম দুই আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো।
এরপরের আসরে দল পাল্টে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলতে নেমে আবারো বাজিমাত করেন ম্যাশ। নিতান্তই সাদামাটা একটি দল নিয়ে শিরোপা মাশরাফির নেতৃত্বে শিরোপা ঘরে তোলে তারা। এরপরের আসরেও তাই তাঁর ওপরই আস্থা রেখেছিলো কুমিল্লা।
যদিও শেষ পর্যন্ত গতবার শিরোপা জিততে পারেননি তিনি। শেষ হাসি হেসেছিলো সাকিবের ঢাকা ডাইনামাইটস। তবে এক আসর পরে আবারো চিরচেনা রূপে আবির্ভূত হলেন মাশরাফি।
দারুণ অধিনায়কত্বে এবার রংপুরকে ফাইনালে তুললেন তিনি। একই সাথে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলের চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলার অপেক্ষাতেও আছেন ম্যাশ। যেই কীর্তি ইতিপূর্বে আর কারোরই নেই।
শেষ পর্যন্ত কি চতুর্থবারের (হতে পারে শেষ বার) মতো কি ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক’ উঁচিয়ে ধরতে পারবেন বিপিএল ট্রফি? সেই প্রশ্নের জবাব আজ সন্ধ্যাতেই পাওয়া যাবে। আর সেই জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন হাজারো মাশরাফি ভক্তরা।