চেন্নাইয়ে বড় হার চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে

ছবি:

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
চেন্নাই টেস্টের প্রথম দুদিনের সকালটা ছিল কেবলই পেসারদের। তবে তৃতীয় দিনে এসে বদলে গেছে দৃশ্যপট। শুভমান গিল ও ঋষভ পান্ত সেঞ্চুরিতে দিনটা কেবলই ব্যাটারদের হয়ে থাকল। সকালে পান্ত ও গিল দাপট দেখালেও শেষ বিকেলটা কেবলই রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। ডানহাতি অফ স্পিনারের ফাঁদে পড়ে সাজঘরের পথে হেঁটেছেন সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিমরা। ভারতের এত এত দাপুটে পারফরম্যান্সের ফাঁকে বাংলাদেশের হয়ে একটুখানি লড়াই করলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের অধিনায়কের হাফ সেঞ্চুরিতে তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৫৮ রান। টেস্ট জিততে এখনও ৩৫৭ রান করতে হবে সফরকারীদের।
এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্যটা একেবারে পাহাড়সম। ভারতকে তাদের মাটিতে হারিয়ে জিততে হলে চতুর্থ ইনিংসে ৫১৫ রান তাড়ার বিশ্ব রেকর্ড গড়তে হবে সফরকারীদের। এমন লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ইনিংসের বাজে ব্যাটিং মনে করিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য কাজটা কতটা কঠিন। তবে জসপ্রিত বুমরাহকে দুই চার মেরে ভালো শুরুর আভাসই দিলেন জাকির হাসান। সময় যত বেড়েছে ততবেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করেছেন জাকির ও সাদমান ইসলাম।
চা বিরতিতে যাওয়ার আগে ভারতের পেসারদের খুব বেশি সুযোগ দেননি তারা দুজন। তাতে ওয়ানডে মেজাজে পঞ্চাশ রানের উদ্বোধনী জুটিও পেয়েছেন তারা। টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো পঞ্চাশ পেরোনো জুটির দেখা পেয়েছেন জাকির ও সাদমান। ৫৬ রান নিয়ে চা বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ ফিরতেই উইকেট হারিয়ে বসে। বুমরাহর অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি জাকিরের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় গালিতে। সেখানে দাঁড়িয়ে যশস্বী জয়সাওয়াল নিচু হওয়া ক্যাচটি লুফে নিয়েছেন দারুণভাবে। জাকিরকে সাজঘরের পথে হাঁটতে হয় ৩৩ রানে।
জাকিরের মতো উইকেটে থিতু হয়েছিলেন সাদমানও। তবে বাঁহাতি ওপেনারের মতোই ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শর্ট বলে লিডিং এজ হয়ে শর্ট মিড উইকেটে থাকা শুভমান গিলকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাদমান। প্রথম ইনিংসে শুরুতেই ফেরা সাদমান এবার করেছেন ৩৫ রান। বাংলাদেশের এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে চেন্নাই টেস্টে প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছেন অশ্বিন। সাদমান ফেরার শান্তকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন মুমিনুল হক। তবে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ককে বড় ইনিংস খেলতে দেননি অশ্বিন।
ডানহাতি অফ স্পিনারের দারুণ এক ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন মুমিনুল। প্রথম ইনিংসে গোল্ডেন ডাক মারা বাঁহাতি ব্যাটার এবার ফিরেছেন ১৩ রানে। ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করছেন মুশফিকুর রহিমও। চেন্নাই টেস্টের তৃতীয় দিনে এসে উইকেট থেকে বাড়তি সুবিধা পেতে শুরু করেছেন অশ্বিন। সেটাকে বেশ ভালোভাবে কাজেও লাগিয়েছেন তিনি। ৩৮ বছর বয়সী স্পিনারের ওভারের প্রথম ডেলিভারিটি ছিল অফ স্টাম্পের একটু বাইরে। ডিফেন্স করার চেষ্টায় অবশ্য ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিক। পরের বলটি বাড়তি টার্নে আঘাত করেছিল মুশফিকের কোমড়ের একটু উপরে।

এমন অবস্থায় পরের বলে অশ্বিনের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে সুইপ করে ছক্কা মেরেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ছক্কা মারার পরের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিড অনে থাকা লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন মুশফিক। অন ফিল্ড আম্পায়াররা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকায় টিভি আম্পায়ার শেষ পর্যন্ত আউট দিয়েছেন ১৩ রান করা এই ব্যাটারকে। এদিকে উইকেটে নামার পর থেকেই খানিকটা আক্রমণাত্বক মেজাজে ছিলেন শান্ত। বাজে বল পেলেই চার কিংবা ছক্কায় সীমানা ছাড়া করেছেন বেশ কয়েকবারই।
লম্বা সময় ধরে রানের খোঁজে থাকা বাংলাদেশের অধিনায়ক অবশেষে রানের দেখা পেয়েছেন। শেষ বিকেলে অশ্বিনের বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে ৫৫ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন শান্ত। ১০ ইনিংস এবং ১০ মাস পর টেস্টে পঞ্চাশের দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। আলোকস্বল্পতার কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বাকিটা সময় পার করেছেন ৫১ রানে অপরাজিত থাকা শান্ত। এদিকে ৫ রানে অপরাজিত আছেন ব্যাট হাতে ছন্দের খোঁজে থাকা সাকিব।
আগের দিনের ৩ উইকেটে ৮১ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকেন গিল ও পান্ত। দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন গিল। মেহেদী হাসান মিরাজের একই ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার। উইকেটের খোঁজে একপ্রান্তে মিরাজ এবং আরেক প্রান্তে পেসারদের ব্যবহার করেন শান্ত। কিন্তু কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। হাফ সেঞ্চুরির পর আরও দেখেশুনে খেলতে থাকেন গিল। তিনে নামা ব্যাটারের মতো সতর্কতা অবলম্বন করেন পান্তও।
৮৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ভারতের উইকেটকিপার ব্যাটারও। নিজের ফেরার ম্যাচটা দারুণভাবে রাঙিয়েছেন তিনি। দিনের ২৪তম ওভারে প্রথম বল হাতে নেন সাকিব আল হাসান। তাকে দেখে যেন মারমুখী হয়ে ওঠেন পান্ত-গিলরা। চার দিয়ে সাকিবকে স্বাগত জানান পান্ত। হাসান মাহমুদের করা পরের ওভারে পান্তের চার-ছক্কায় ১৩ রান তোলে ভারত। পরের ওভারে পান্তের সহজ ক্যাচ মিস করেন শান্ত। সাকিবকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল উপরে তুলে দেন পান্ত, লং অন থেকে দৌড়ে গিয়ে মিড উইকেটে সেটা লুফে নিতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
৭২ রানে বেঁচে যান পান্ত। প্রথম সেশনে ২৮ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ১২৪ রান তোলে ভারত। মধ্যাহ্নভোজের পর আবারও সাকিবের ওপর চড়া হন পান্ত। একই ওভারে চার-ছক্কায় ১১ রান তুলে সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে যান তিনি। সাকিবের পরের ওভারেই সেঞ্চুরি পেয়ে যান তিনি। ১২৪ বলে পাওয়া সেঞ্চুরিটি তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ। সেঞ্চুরি করার পরের ওভারেই মিরাজের শিকার হন পান্ত। মিরাজকে সজোরে হাঁকাতে গিয়ে কট এন্ড বোল্ড হয়ে ফিরেন পান্ত। ফেরার আগে ১২৮ বল খেলে ১৩টি চার ও চারটি ছক্কায় ১০৯ রান করেন তিনি।
পান্তের বিদায়ে ভাঙে গিলের সঙ্গে তার ১৬৭ রানের জুটি। বাঁহাতি এই ব্যাটার ফেরার একটু পর সেঞ্চুরির দেখা পান গিল। সাকিবের ওভারে টানা দুটি চার মেরে নিজের রান আরও বাড়িয়ে নেন তিনি। ১৬১ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন তরুণ এই ব্যাটার। সেঞ্চুরির পর আরও দ্রুত রান তুলতে থাকেন গিল। তাকে সঙ্গ দেন রাহুল। খুব দ্রুত ভারতের লিড পাঁচশ পেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই ইনিংস ঘোষণা দেন রোহিত শর্মা। চার উইকেটে ২৮৭ রান নিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরত যান গিল-রাহুলরা। তাতে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১৫ রানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)-
ভারত (প্রথম ইনিংস)- ৩৭৬/১০ (৯১.২ ওভার) (অশ্বিন ১১৩, জাদেজা ৮৬) (হাসান ৫/৮৩, তাসকিন ৩/৫৫)
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ১৪৯/১০ (৪৭.১ ওভার) (শান্ত ২০, সাকিব ৩২, লিটন ২২, মিরাজ ২৭)
ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস)- ২৮৭/৪ (৬৪ ওভার) (ইনিংস ঘোষণা) (গিল ১১৯*, পান্ত ১০৯; মিরাজ ২/১০৩)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস) (লক্ষ্য ৫১৫ রান)- ১৫৮/৪ (৩৭.২ ওভার) (জাকির ৩৩, সাদমান ৩৫, শান্ত ৫১*, মুমিনুল ১৩, মুশফিক ১৩, সাকিব ৫*)