সাদামাটা দল নিয়ে ‘দুর্দান্ত’ হতে প্রস্তুত ঢাকা

ছবি: সংগৃহীত

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
‘একার খুশির চেয়ে সবার খুশিটা হলে ভালো হতো’
১৯ ফেব্রুয়ারি ২৪
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যেন চার-ছক্কার বৃষ্টি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসার পর জনপ্রিয়তা বেড়েছে ২০ ওভারের ক্রিকেটের। বিনোদনের খোরাক পেতে লিগগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন সমর্থকরা। ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) যাত্রা শুরু হলেও এখনও অন্য সবার মতো করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে যেতে পারেনি। তবুও বিপিএলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্দা উঠছে বিপিএলের ১০তম আসরের। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রিকফ্রেঞ্জির আয়োজনে আপনাদের জানানো হবে কে কেমন দল সাজিয়েছে, শক্তিমত্তায় কারা এগিয়ে, কারাই বা পিছিয়ে। এবারের পর্বে থাকছে দুর্দান্ত ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যবচ্ছেদ।
বিপিএলের অন্যতম সফল দল ঢাকা। প্রথম আসরেই রাজধানীর ফ্র্যাঞ্চাইজি দল `ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস' নামে নিজেদের প্রথম শিরোপা জেতে। যেখানে তারা শহিদ আফ্রিদি, ইমরান নাজির, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, কাইরন পোলার্ডদের নিয়ে দল সাজিয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢাকার মালিকানায় এসেছে পরিবর্তন, সঙ্গে নামও ছিল পরিবর্তনশীল। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস, ঢাকা ডাইনামাইটস, ঢাকা প্লাটুন, ঢাকা ডমিনেটরস। বিপিএলের দশম আসরে এসেও দলটি পরিবর্তনশীল। নিউটেক্স গ্রুপের মালিকানায় ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি এবার খেলবে ‘দুর্দান্ত ঢাকা’ নামে।
বেক্সিমকো গ্রুপ ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানা ছেড়ে দেয়ার পর লম্বা সময়ের জন্য থিতু হওয়া আর কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি পায়নি ঢাকা। ফলে সময়ের সঙ্গে ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি হারিয়েছে জৌলুশ। আসন্ন আসরের জন্যও বেশ সাদামাটা দল সাজিয়েছে তারা। যেখানে দলটিকে নির্ভর করতে হবে স্থানীয় ক্রিকেটারদের উপর। তবে দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যেও তারকাখ্যাতি রয়েছে মাত্র দুজনের। তাসকিন আহমেদ ও শরীফুল ইসলাম। এছাড়াও জাতীয় দলের পরিচিত দুই মুখ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও নাইম শেখ রয়েছে দলটিতে। ফলে দলটির সাফল্যের জন্য ঢাকার সমর্থকদের চেয়ে থাকতে হবে তাদের উপরই।
বিদেশিদের মধ্যেও নেই কোনো তারকাখ্যাতি ক্রিকেটারের নাম। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কয়েকজন তরুণ প্রতিভাদের নিয়েই মাঠে নামবে ঢাকা। যেখানে ঢাকার হয়ে খেলতে দেখা যাবে সদ্যই পাকিস্তান টেস্ট দলে অভিষেক হওয়া সাইম আইয়ুবকে। আছেন আরেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার উসমান কাদির। কিন্তু আসরের মাঝ পথেই তারা উড়াল দেবেন নিজেদের ঘরোয়া লিগ পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে। এছাড়াও আছে লঙ্কান ক্রিকেটার চতুরাঙ্গা ডি সিলভা, লাসিথ ক্রুসপুল্লে, দানুস্কা গুনাতিলকা। তবে বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে তাদের সব থেকে বড় নাম বলা যেতে পারে দারুণ ছন্দে থাকা লঙ্কান মিডল অর্ডার ব্যাটার সাদিরা সামারাবিক্রমা।

কোথায় এগিয়ে ঢাকা-
বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল, মানছেন সালাহউদ্দিনও
২৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
ঢাকার দলের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় কম দামে ভালো কিছুর আশায় আছেন তারা। তাই স্থানীয় ক্রিকেটার দিয়েই সাগর পাড়ি দিতে হবে তাদের। যেখানে দলটির সবথেকে বড় অস্ত্র হতে পারেন শরিফুল। গত বছর এই পেসার দারুণ ছন্দে ছিলেন। কিছুদিন আগেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে দাপট দেখিয়েছেন শরিফুল। যেখানে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তুলেছিলেন ৬ উইকেট। তাসকিনকে সঙ্গী করে প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন শরিফুল।
বড় নাম না থাকলেও দলটি ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করা প্রতিভাদের নিয়ে দল সাজিয়েছে। যেখানে নাইম, সাইফ হাসান, সাব্বির হোসেনের মতো সফল ব্যাটাররাও আছেন দলটিতে। দেখা যাবে সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইরফান শুক্কুরকে। ১৫ ম্যাচে ৬৩.৯০ গড়ে ৭০৩ রান করা শুক্কুর ঢাকার জন্য বড় কিছু করে দেখাতে পারেন এই আসন্ন আসরে।
ঢাকার দলে বড় কোনো নাম না থাকলেও আছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। কোচ হিসেবে লম্বা সময় বিপিএলে কাজ করেছেন সুজন। গত বছর খুলনা টাইগার্সের কোচ ছিলেন তিনি। আছে জাতীয় দলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা। ফলে সুজনের হাত ধরে ভালো কিছুর আশা করতেই পারে দলটি।
ঢাকার দূর্বলতা -
সাদামাটা দল হওয়ায় অনেকটা হিসেব কষেই এগাতে হবে ঢাকাকে। দলটির প্রধান দূর্বলতা দেশীয় ক্রিকেটারদের উপর নির্ভরতা। বিদেশি ক্রিকেটার বলতেও যারা আছেন, তারাও তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। লঙ্কান ক্রিকেটার সামারাবিক্রমাই তাদের সবথেকে বড় নাম।
স্থানীয় ক্রিকেটারদের উপর নির্ভর থাকায় দলটির বোলিংয়ে তাদের মূল কাজটা করতে হবে তাসকিন ও শরিফুলকে। ম্যাচের ৮ ওভারের চাপ যে এই দুজনকেই সামাল দিতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু চোট থেকে মাঠে ফেরা তাসকিন নিজেকে কতটুকু মেলে ধরতে পারবেন, সেটাও দেখার বিষয়। এটাই ঢাকার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ঢাকার ব্যাটিংটাও সামলাতে দেখা যাবে স্থানীয় ক্রিকেটারদের। দলটির হয়ে ওপেনিং করবেন দুই দেশীয় ক্রিকেটার নাইম ও সাইফ হাসান। মিডল অর্ডারে মোসাদ্দেক বেশ বড় ভূমিকা পালন করলেও তাদের সমস্যাটা হবে দ্রুত গতির রান তোলার ক্ষেত্রে। কারণ দলটিতে নেই দ্রুত গতিতে রান তোলার মতো স্থানীয় ক্রিকেটার। এর জন্য তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে বিদেশিদের উপর।
দুর্দান্ত ঢাকা-
দেশি খেলোয়াড়: তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি, শরীফুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন, সাইফ হাসান, ইফরান শুক্কুর, আলাউদ্দিন বাবু, মেহরব হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম, সাব্বির হোসেন, জসিমউদ্দিন।
বিদেশি খেলোয়াড়: সাদিরা সামারাবিক্রমা, চতুরঙ্গা ডি সিলভা, সাইম আইয়ুব, উসমান কাদির, লাসিথ ক্রসপুল্লে, দানুস্কা গুনাথিলাকা।