বিপিএলে বেটিং কোম্পানি আসার সম্ভাবনা ও বাস্তবতা

ছবি: বিসিবি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
দ্য হান্ড্রেডের ড্রাফটে বাংলাদেশের ২৯ ক্রিকেটার
৫ মার্চ ২৫
বেটউইনারের কথা মনে আছে? এই বেটিং ওয়েবসাইটেই শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যোগ দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের অধিনায়কের এমন কাণ্ডে পুরো বাংলাদেশে তখন তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সাকিব ঠিক করেছেন নাকি ভুল করেছেন। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল টিভি মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা চায়ের কাপে আড্ডায়।
বলা চলে সাকিবকে তখন কচুকাটা করেছিলেন দেশের ক্রীড়ামোদি থেকে সাধারণ মানুষ। আইন যেমনই হোক না কেন বেশিরভাগই তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন সাকিবের নৈতিকতা নিয়ে। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা হওয়ায় বেটিং কোনো কোম্পানির সঙ্গে জড়িত হতে পারেন না সাকিব। বেশিরভাগ মানুষেরই ভাষ্য ছিল ঠিক এমনই। বিসিবির কাছে ব্যাপারটা ছিল নৈতিকতার সঙ্গে আইনের। বিতর্কের জন্ম দিয়ে শেষ পর্যন্ত সাকিব নিজেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন বেটউইনারের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে।
বছরখানেকের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়া ঘটনাটা সামনে আনতে হলো আবারও। সেটার অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। পুরো বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে জুয়া কিংবা বেটিং কোম্পানিগুলো দাপট। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের পরিধি বাড়ায় আরও সহজে জেঁকে বসার সুযোগ পেয়েছে বেটিং কোম্পানিগুলো। বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টই এখন বেটিং কোম্পানিগুলোর দখলে। তাদের দাপটযে ক্রমশই বেড়ে চলছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য এর বিকল্প পথও খোলা আছে বিসিবির সামনে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) কথাই ধরুন না। ২০১২ সালে শুরু হওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে নেই কোনো বেটিং কোম্পানি। শুধু কি তাই এত বড় একটা টুর্নামেন্ট সেখানে আইপিএলের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি, এসএ২০ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলএস), সবখানেই ঘাঁটি গেঁড়েছে তারা। তাহলে বিপিএলে কেন নেই? তারা কি আসলে আসতে চায় না?

এমন প্রশ্ন শোনা যায় প্রায়শই। ‘যৌক্তিক’ এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইসমাইল হায়দার মল্লিক। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নিশ্চিত করেছেন বেশ কয়েকবারই তাদের প্রস্তাব দিয়েছে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। তবে টুর্নামেন্টের মালিকানা হারানোর ‘ভয়ে’ ভারতীয় সেই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের প্রস্তাব মেনে নেয় না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
ইসমাইল হায়দার বলেন, ‘আসতে চায় না বা না আসার কোনো কারণ নেই। তারা অনেকবারই আমাদের অ্যাপ্রোচ করেছিল। বোর্ডের সিদ্ধান্ত এরকমই যে আমাদের টুর্নামেন্টটাকে আমাদের দেশীয় স্টাইলেই চালাতে চাই। আমরা এরকম কোনো কিছু করতে চাই না যে টুর্নামেন্টের রাইটসটা আমাদের হাতে থাকবে না। অন্য কারও কাছে রাইটসটা চলে যাবে।’
অনেকে মনে করেন বিসিবির এমন চাওয়ার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে বিপিএল। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগকে প্রতিযোগিতায় টেকাতে চাইলে বিদেশি কোম্পানির দিকে ছুটতে হবে বিসিবিকে। তবে বেটিং কোম্পানির বাইরে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো খুব বেশি টাকা খরচ করতে চায় না বলে ধারণা আছে। বেশি টাকা পেতে তাই বেশির লিগগুলো নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করছে বেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
লিগগুলোর মতো জাতীয় দলেরও সুযোগ আছে বেটিং কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। আইসিসির অনুমতি থাকায় লিগ কিংবা জাতীয় দলের জার্সিতে তাদের লোগো ব্যবহারে সমস্যা নেই। বাংলাদেশের পরে চালু হয়েও এখন বড় লিগে পরিণত হয়েছে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। বর্তমান বাস্তবতায় বিপিএলকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে বেটিং কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার বিকল্প হয়ত নেই বিসিবির সামনে। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে বিসিবি কি বিপিএলের সঙ্গে তাদের যুক্ত হতে দেবে?
এমন প্রশ্নে ইসমাইল হায়দার বলেন, ‘ভবিষ্যতে হতে পারে।’ কিন্তু আসলেই কি সম্ভব? বাংলাদেশের আইনই বা কি বলছে? সংবিধানে নতুন করে নিয়ম না থাকায় এখনও ১৯৭২ সালের আইনই ব্যবহার করা হয়। জানা যায়, সেই সময় জুয়াকে বাংলাদেশে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সেখানে খানিকটা ফাঁক রয়েছে। সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদের ২ উপদফা বলেছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
(এর অর্থ এই নয় যে সংবিধান শর্তহীনভাবে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ করেছে। উপরন্তু কোনো নাগরিক এই অনুচ্ছেদের কার্যকরতা বলবৎ করার জন্য হাইকোর্টে রিট দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার আশা করতে পারে না। কারণ, বাহাত্তরের সংবিধানই বলে দিয়েছে, এই বিধান আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য নয় (প্রথম আলো থেকে উদ্ধৃত)। তাতে করে আপনি চাইলেই জুয়া খেলতে পারবে না কিংবা তার সঙ্গে সম্পৃ্ক্ত হতে পারবেন না।
২০১৪ সালের ১৮ জুন জুয়াবিরোধী একটি রায় দেন বিচারপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ। যেখানে বলা হয় অর্থ দিয়ে সব খেলাই অবৈধ। সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হাইকোর্টের এই নির্দেশনাই প্রচলিত আইন। অর্থাৎ জুয়া সম্পৃক্ত এমন কিছুর সঙ্গে যুক্ত হবার সুযোগ নেই। শুধু বাংলাদেশের আইনই নয় বিসিবির নিয়মেই এমন কিছুর সঙ্গে যুক্ত হবার নিয়ম নেই।