তামিম-মুশফিকে ভাগ্য বদলাতে পারবে বরিশাল?

ছবি: সংগৃহীত

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
এমন বিপিএলে বিদেশিরা কেউ বিনিয়োগ করবে না: মিজানুর
১১ ফেব্রুয়ারি ২৫
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যেন চার-ছক্কার বৃষ্টি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসার পর জনপ্রিয়তা বেড়েছে ২০ ওভারের ক্রিকেটের। বিনোদনের খোরাক পেতে লিগগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন সমর্থকরা। ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) যাত্রা শুরু হলেও এখনও অন্য সবার মতো করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে যেতে পারেনি। তবুও বিপিএলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্দা উঠছে বিপিএলের ১০তম আসরের। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রিকফ্রেঞ্জির আয়োজনে আপনাদের জানানো হবে কে কেমন দল সাজিয়েছে, শক্তিমত্তায় কারা এগিয়ে, কারাই বা পিছিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে থাকছে ফরচুন বরিশাল।
বিপিএলের শুরুর দিকে বরিশালকে দেখা গেছে বুলস ও বার্নাস নামে। তবে মাঝে কয়েক মৌসুমে ছিল বরিশালের কোনো দল। কয়েক মৌসুমের বিরতি দিয়ে বরিশালকে প্রতিনিধিত্ব করতে আসে ফরচুন নামে। সবশেষ কয়েক মৌসুমের মতো এবারও একই নামে থাকছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। তামিম ইকবালকে অধিনায়ক বিপিএলে যাত্রা শুরু করেছিল তারা। তবে সেবার তেমন কিছুই করতে পারেনি। পরের মৌসুমে শিরোপা জিততে সাকিব আল হাসানকে দলে টানে বরিশাল। ফাইনালে তুললেও শেষ পর্যন্ত ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের।
সবশেষ মৌসুমেও বরিশালের তারকা ছিলেন সাকিব। এবার তাদের বিদায় নিতে হয়েছে এলিমিনেটর থেকেই। নিজেদের ভাগ্য বদলাতে আরও একবার তামিমকে নিয়ে মাঠে নামছে দলটি। বাংলাদেশের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়কের সঙ্গে এবার বরিশালের ডেরায় থাকছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, কামরুল ইসলাম রাব্বি, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং সৌম্য সরকারের মতো ক্রিকেটার।
বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবেও অভিজ্ঞতায় ভরপুর বরিশালের ড্রেসিংরুম। বিপিএলের নিয়মিত মুখ শোয়েব মালিকের সঙ্গে ফখর জামান, পল স্টার্লিং, ডেভিড মিলার। তরুণ হিসেবে আব্বাস আফ্রিদি, দুনিথ ওয়াল্লালাগে, আকিফ জাভেদ, মোহাম্মদ ইমরানরা নিজেদের ছাপ রাখতে চাইবেন বরিশালের জার্সিতে। তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের মতো দেশের তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে এবার নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারবে বরিশাল?
কোথায় এবং কেন এগিয়ে বরিশাল—
টপ অর্ডারে অফুরন্ত অপশন—
সবশেষ আসরে ওপেনিং নিয়ে অনেকটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে বরিশালকে। মিরাজ, এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ছিলেন চতুরঙ্গা ডি সিলভা। তাতে করে বেশিরভাগ ম্যাচেই প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি তারা। এবার অবশ্য এমন আনকোরা ওপেনিং জুটিতে যাওয়ার সুযোগ নেই তাদের। গত মৌসুমে যেখানে নিজেদের দূর্বলতার জায়গা ছিল এবার যেন সেটিই সবচেয়ে শক্তিশালী। তামিম থাকায় এক পাশে তিনি থাকবেন এটা প্রায় নিশ্চিতই। তার সঙ্গে ব্যাটিং করার জন্য আছে একগাদা অপশন। বরিশাল চাইলে যেকাউকে খেলাতে পারে। দেশিদের নিয়ে ওপেনিং জুটি করতে চাইলে তামিমের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো অপশন সৌম্য।
নউজিল্যান্ড সফর দিয়ে জাতীয় দলে ফেরা বাঁহাতি এই ব্যাটারও আছেন ছন্দেই। সৌম্য চোটে পড়লে প্রান্তিক নওরোজ নাবিল হতে পারেন আরেকটি অপশন। তবে দেশি-বিদেশি কম্বিনেশন করতে চাইলে সেখানেও আছেন তিনজন। শুরুতে পাওয়া যাবে পাকিস্তানের ফখর ও আফগানিস্তানের ইব্রাহিম। তাদের দুজনের যে কেউই তামিমকে সঙ্গ দিতে পারেন। বরিশাল হয়ত বেছে নিতে পারে তামিম-ফখর জুটি। শেষ দিকে তামিমের সঙ্গে যোগ দেবেন স্টার্লিং। অফুরন্ত অপশন থাকায় খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না বরিশাল। এবারের মৌসুমে এটিই হয়ত তাদের সবচেয়ে শক্তির জায়গা।

মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞতা, ফিনিশিংয়ে ছক্কা—
বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল, মানছেন সালাহউদ্দিনও
২৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
টপ অর্ডারের মতো এত এত অপশন না থাকলেও বরিশাল মিডল অর্ডারে ছক্কা মেরেছে অভিজ্ঞদের নিয়ে। সবশেষ মৌসুমে বরিশালের হয়ে খেললেও প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করা মাহমুদউল্লাহ এবার বরিশালের তুরুপের তাস হতে পারেন। রিয়াদের সঙ্গে মিডল অর্ডারে আছেন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার মুশফিকও। গত মৌসুমে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলা মুশফিককে এবার ড্রাফট থেকে দলে নিয়েছে বরিশাল।
বিপিএলে বরাবরই অন্যতম সেরা পারফর্মারদের একজন মুশফিক। অভিজ্ঞ ব্যাটারের ধারাবাহিকতা অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে বরিশালকে। দেশের দুই তারকার সঙ্গে এখানে আছেন মিরাজও। সাম্প্রতিক সময়ে মিডল অর্ডার ও টপ অর্ডারে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের সঙ্গে মাঝের ওভারে ম্যাচটা ধরে রাখতে পারেন মিরাজ। লোয়ার মিডল অর্ডার কিংবা ফিনিংশে বরিশালের ভরসা পাকিস্তানের মালিক।
পাকিস্তানের মালিক। লোয়ার অর্ডারে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন তিনি। বিপিএল কিংবা বিশ্বের যেকোনো জায়গাতেই ব্যাট হাতে বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন তিনি। বিপিএল ও বাংলাদেশের কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় বাজি ঘোড়া হবেন। পিএসএলের কারণে পুরো মৌসুমে পাওয়া যাবে না তাকে। তবে সেটার জন্য ব্যাকআপও রেডি করে রেখেছে বরিশালে। সেখানেই যেন সবচেয়ে বড় ছক্কাটা মেরেছে গত মৌসুমে এলিমিনেটর থেকে বাদ পড়া দলটি। বিপিএলের শেষ দিকে আসবেন মিলার।
এসএ২০ খেলতে থাকায় শেষ দিকের কয়েকটি ম্যাচে পাওয়া যাবে ‘কিলার মিলার’ খ্যাত প্রোটিয়া এই ব্যাটারকে। ফিনিশার হিসেবে পুরো বিশ্ব জুড়েই খ্যাতি আছে মিলারের। আইপিএল, পিএসএল থেকে শুরু করে বিভিন্ন লিগে নিজের ব্যাটিং কারিশমা দেখিয়েছেন তিনি। দুই বিদেশির সঙ্গে এখানে আছেন বাংলাদেশের সাইফউদ্দিনও। পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি শেষ দিকে এসে দ্রুত রান তুলতে পারেন তিনিও। সাইফউদ্দিন ধারাবাহিকতা দেখাতে পারলে উপকৃত হবে বরিশাল।
স্পিনে বৈচিত্র—
বাংলাদেশের কন্ডিশনে বরাবরই বড় ভূমিকা রাখেন স্পিনাররা। গত মৌসুমের মতো এবারও বরিশালের স্পিন বিভাগ তুলনামূলক শক্তিশালী। এখানে নেতার ভূমিকায় থাকবেন অফ স্পিনার মিরাজ। বাংলাদেশের হয়ে নিয়মিত খেলা এই ক্রিকেটারের বিকল্পও আছে স্কোয়াডে। অফ স্পিনারের প্রয়োজন হলে অভাব পূরণ করতে পারেন মালিক ও মাহমুদউল্লাহরা। দলের প্রয়োজনে প্রায়শই নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে গেছে অভিজ্ঞ এই দুই ক্রিকেটারকে।
অফ স্পিনের পাশাপাশি বাঁহাতি স্পিনারও আছে স্কোয়াডে। যেখানে সবচেয়ে বড় নাম তাইজুল। টেস্টের নিয়মিত ক্রিকেটার হলেও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারেন টি-টোয়েন্টিতে। বাঁহাতি স্পিনার আছেন আরও দুজন। দেশের তরুণ ক্রিকেটার রাকিবুল হাসান জুনিয়র থাকবেন ব্যাকআপ হিসেবে। তাইজুলের চেয়ে বেশি ম্যাচও পেতে পারেন রাকিবুল। বাঁহাতি স্পিনে আছেন শ্রীলঙ্কার দুনিথ ওয়াল্লালাগে। সাম্প্রতিক সময়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন বেশ ভালোভাবেই।
সবশেষ এশিয়া কাপে ভারতের টপ অর্ডারকে ধসিয়ে দেয়ার কাজটা একাই করেছিলেন ওয়াল্লালাগে। বাঁহাতি এই স্পিনারও অবদান রাখতে পারেন বিপিএলে। টি-টোয়েন্টিতে স্পিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র লেগ স্পিন। এখানে তাদের কালেকশন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যারিয়াহ। খুব বেশি অভিজ্ঞ না হলেও ব্যাটারদের ভড়কে দিতে পারেন ভালোভাবেই। সব মিলিয়ে বরিশালের স্পিন বিভাগে আছে প্রায় সবকিছুই।
দূর্বলতা—
পেসে অভিজ্ঞতার অভাব—
টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার কিংবা স্পিনে দারুণ এক দলই সাজিয়েছে বরিশাল। শক্তি সামর্থ্যে এগিয়েই থাকতে পারে তারা। তবে বরিশালে আছে দূর্বলতাও। গত মৌসুমে এলিমিনেটর থেকে বাদ পড়া বরিশালের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা পেস বোলিংয়ে। যেখানে দেশি হিসেবে আছেন কামরুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ এবং মেহেদী হাসান রানা। তাদের তিনজনেরই বড় সমস্যা খরুচে বোলিং করা। এবারও সেখানে ভোগাতে পারে বরিশালকে। দেশিতে কিছু অভিজ্ঞ থাকলেও বিদেশি বোলিং যেন অনেকটা নড়বড়ে।
মোহাম্মদ আমিরকে সাইন করালেও শেষ পর্যন্ত বিপিএলে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকি??্তানের এই পেসার। তবে বিকল্প হিসেবে শ্রীলঙ্কার থুসারার মতো একজনকে পেয়েছে তারা। দারুণ বোলিংয়ে কদিন আগে আইপিএলের নিলামে বড় দাম হাঁকিয়েছেন তিনি। দল পেয়েছেন সাউথ আফ্রিকার এসএ২০ লিগেও। তবে সমস্যাটা হচ্ছে তাকে পাওয়া যাবে প্রোটিয়াদের লিগ শেষ হওয়ার পর, বিপিএলের শেষ দিকে।
এর আগে বরিশালকে ভরসা রাখতে হবে পাকিস্তানের তিন তরুণ পেসার আকিভ জাভেদ, মোহাম্মদ ইমরান এবং আব্বাস আফ্রিদিতে। পিএসএল খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও অভিজ্ঞতায় বেশ পিছিয়ে তারা। আপাতত তরুণ এই পেসারদের প্রতিভার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বরিশালের ম্যানেজমেন্টকে। এবারের মৌসুমে বরিশালের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে অনভিজ্ঞ পেস ইউনিট।
ফরচুন বরিশাল—
দেশি ক্রিকেটার— তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, খালেদ আহমেদ, মেহেদী হাসান রানা, মুশফিকুর রহিম, রকিবুল হাসান জুনিয়র, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সৌম্য সরকার, কামরুল ইসলাম রাব্বি, প্রিতম কুমার, তাইজুল ইসলাম এবং প্রান্তিক নওরোজ নাবিল।
বিদেশি ক্রিকেটার— ইব্রাহিম জাদরান, শোয়েব মালিক, পল স্টার্লিং, ফখর জামান, আব্বাস আফ্রিদি, দুনিথ ওয়ালল্লাগে, ইয়ানিক ক্যারিয়াহ, দীনেশ চান্দিমাল, মোহাম্মদ ইমরান, আকিফ জাভেদ, ডেভিড মিলার এবং নুয়ান থুসারা।