নিজেদের নাম খোদাইয়ের চ্যালেঞ্জ

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
বিপিএলে শাস্তি পেয়ে ডিপিএলে ২ ম্যাচ নিষিদ্ধ সাকিব
৩১ জানুয়ারি ২৫
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যেন চার-ছক্কার বৃষ্টি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসার পর জনপ্রিয়তা বেড়েছে ২০ ওভারের ক্রিকেটের। বিনোদনের খোরাক পেতে লিগগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন সমর্থকরা। ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) যাত্রা শুরু হলেও এখনও অন্য সবার মতো করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে যেতে পারেনি। তবুও বিপিএলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্দা উঠছে বিপিএলের ১০তম আসরের। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রিকফ্রেঞ্জির আয়োজনে আপনাদের জানানো হবে কে কেমন দল সাজিয়েছে, শক্তিমত্তায় কারা এগিয়ে, কারাই বা পিছিয়ে। প্রথম পর্বে থাকছে গত মৌসুমের রানার্স আপ সিলেট স্ট্রাইকার্স।
বিপিএলের প্রতিটি আসর শুরুর আগে বেশিরভাগ সমর্থকই বোধহয় একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে। প্রশ্নটা এমন, ‘এবারের বিপিএলে সিলেটের দলের নাম কি কারাই বা খেলবে? সেটার অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। স্ট্রাইকার্স আসার আগের তিন মৌসুমে খেলেছে তিনটি ভিন্ন নামে, ভিন্ন মালিকানায়। কখনও সানরাইজার্স, কখনও থান্ডার আবার কখনও সিক্সারস নামে। এবার অবশ্য তেমন দুশ্চিতার সুযোগ নেই। সবশেষ আসরে সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে থাকা স্ট্রাইকার্স এবারও থাকছে দেশের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে।
রিটেইনের সুযোগ থাকায় আগের মৌসুমের দল থেকে মাশরাফি বিন মুর্তজা, জাকির হাসান এবং তানজিম হাসান সাকিবকে রেখে দেয় সিলেট। সরাসরি চুক্তিতে একজন দে???ি ক্রিকেটার দলে নেয়ার সুযোগ থাকায় নাজমুল হাসান শান্তকে বাজিতে ধরেছে তারা। গত মৌসুমে সিলেটের ফাইনালে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের এই ক্রিকেটারের। এরপর ড্রাফট থেকেও নিজের পছন্দ সই ক্রিকেটার নিয়ে দল সাজিয়েছে তারা। দেশি কয়েকজন ভালো ক্রিকেটার থাকলেও বিদেশিতে নেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিশেষ কোনো বড় নাম। গত মৌসুমে সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে সিলেটের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ এবার নিজেদের নাম খোদাই করার।
কোথায় এগিয়ে সিলেট—
সিলেটের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গাটা নেতৃত্বে। বিপিএলের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি আছেন তাদের দলে। গত মৌসুমে কাগজে-কলমে শক্তিশালী না হলেও তরুণদের থেকে পারফরম্যান্স বের করে এনে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। এবারও সিলেটের নেতৃত্বে দেখা যাবে তাকেই। এমনটা হলে নেতৃত্বগুনে সিলেটকে আরও একবার শিরোপার স্বপ্ন দেখাতে পারেন মাশরাফি। তবে মাঠের ক্রিকেটে ব্যাটে-বলের লড়াইয়েও অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে। ব্যাটিংয়ে সিলেটের সবচেয়ে বড় তারকা নাজমুল শান্ত এবং জাকির হাসান।
নিজেদের প্রথম আসরে ফাইনালে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তারা দুজন। জাকির ও শান্ত দুজনই করেছিলেন চারশর বেশি করে রান। টপ অর্ডারে এবারও তাদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে সিলেট। টপ অর্ডারে তাদের শক্তির সঞ্চার করতে পারেন আয়ারল্যান্ডের হ্যারি টেক্টর। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে থাকা টেক্টরকে দেখা যেতে পারে তিনে। মিডল অর্ডারে সিলেটকে আশা দেখাতে পারেন বিপিএল ও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার মোহাম্মদ মিঠুন এবং ইয়াসির আলী রাব্বি। সবার কাছ থেকে পারফরম্যান্স বের করে আনতে পারলে যে কোনো দলকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে গত বারের রানার্স আপরা।

সিলেটকে এগিয়ে দিতে পারে অলরাউন্ডার ক্যাটাগরিও। যেখানে আছেন রায়ান বার্ল, বেন কাটিং এবং বেনি হাওয়েলের মতো ক্রিকেটাররা। যারা কিনা ব্যাটে-বলে যেকোনো সময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। ফিনিশারের দায়িত্বটাও পালন করবেন তাদের তিনজনের যেকোনো দুজন। কাটিং ও হাওয়েল পেস বোলিং করতে পারায় সিলেটের সুযোগ থাকবে একজন পেসার কমিয়ে একজন বেশি ব্যাটার খেলানোর। যা সিলেটকে আল্টিমেটলি এগিয়েই দেবে। তবে সিলেটের সবচেয়ে শক্তির জায়গা তাদের পেস বোলিং। পেস বোলার হিসেবে মাশরাফির সঙ্গে আছেন দেশি তানজিম হাসান সাকিব, রেজাউর রহমান রাজা এবং শফিকুল ইসলাম।
বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল, মানছেন সালাহউদ্দিনও
২৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
বিদেশি হিসেবে তাদের কালেকশনে আছেন জিম্বাবুয়ের রিচার্ড এনাগারাভা এবং জর্জ স্ক্রিমশ। বিপিএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন মাশরাফি। ডানহাতি এই পেসারের সঙ্গে যারা আছেন তারাও নিয়মিত পারফর্মার। জাতীয় দলে নিয়মিতই ভালো করছেন তানজিম সাকিব। রাজা, শফিকুলরা ঘরোয়াতে বাজিমাত করছেন প্রায়শই। বর্তমান সময়ে উইকেটটেকিং বোলার হিসেবে অন্য সবার চেয়ে এগিয়েই থাকবেন এনগারাভা। জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি এই পেসার অনেকটাই এগিয়ে রাখবে সিলেটকে। যথেষ্ট বিকল্প থাকায় বেগ পোহাতে হবে না তাদের।
আছে দূর্বলতাও—
নাজমুল শান্ত, জাকির, মিঠুনদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং ইউনিট সিলেটের যেমন শক্তির জায়গা তেমনি দূর্বলতার জায়গাও এটি। একাদশে খেলানোর মতো যথেষ্ট ব্যাটার থাকলেও সিলেটের ব্যাটিং ইউনিটে নেই ভালো মানের ব্যাক আপ। নাজমুল শান্ত, মিঠুন খারাপ করলে কাদের খেলাবে সিলেট? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম আসতে সালমান হোসেন কিংবা জাওয়াদ রোয়েনের। তবে তাদের জায়গাটা কতটা পূরণ করতে পারবেন এটা একটা বড় প্রশ্ন তৈরি করবে। দূর্বলতা আছেন স্পিনেও। এবারের মৌসুমে স্পিনার হিসেবে সিলেটের হয়ে খেলবেন নাজমুল ইসলাম অপু এবং নাঈম। টি-টোয়েন্টি সাফল্য পাওয়ার রেকর্ড আছে অপুর পক্ষে।
এদিকে নাঈম নিয়মিত টেস্ট খেলায় টি-টোয়েন্টিতে কতটা প্রত্যাশা মেটাতে পারবেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খেতেই পারে। সবশেষ মৌসুমে সিলেটের হয়ে খেলেছিলেন ইমাদ ওয়াসিম। পাকিস্তানের বাঁহাতি এই স্পিনার চলে যাওয়ার পর এসেছিলেন সাউথ আফ্রিকার জর্জ লিন্ডে। এবার বিদেশি হিসেবে খেলবেন সামিত প্যাটেল এবং দুশান হেমন্থ। বয়স হলেও এখনও পারফরম্যান্সে ধার আছে সামিতের। তবে বাংলাদেশের মাটিতে কতটা নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। টি-টোয়েন্টির নামকরা স্পিনার না থাকায় এখানে অন্যদের চেয়ে খানিকটা পিছিয়েই থাকবে সিলেট।
বড় চ্যালেঞ্জও আছে সিলেটের—
সবশেষ মৌসুম ফাইনাল খেলার পেছনে জাকির, নাজমুল শান্তদের যতটা অবদান ছিল ঠিক ততটা অবদান ছিল তাওহীদ হৃদয় এবং মুশফিকু রহিমের। চারশর বেশি রান করে নিজের ক্যারিয়ারটাই বদলে ফেলেন হৃদয়। খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপেও। তবে এবারের মৌসুমে সিলেটের জার্সিতে দেখা যাবে না তরুণ এই ব্যাটারকে। ড্রাফটের আগে সরাসরি চুক্তিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পাড়ি জমান হৃদয়। তিনশর বেশি রান করা মুশফিকও নেই সিলেটের ডেরায়। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার খেলবেন ফরচুন বরিশালের জার্সিতে।
ব্যাটিংয়ে তাদের দুজনের অভাব পূরণ করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সিলেটের জন্য। মুশফিক ও হৃদয়ের জায়গা পূরণে হ্যারি টেক্টর এবং মিঠুনের উপর বাজি ধরতে যাচ্ছে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দেই আছেন টেক্টর। আইরিশ এই ব্যাটার ভালোভাবেই পূরণ করতে পারেন হৃদয়ের জায়গা। এদিকে বিপিএলের নিয়মিত পারফর্মার মিঠুন। ঘরোয়ার পারফরম্যান্স ক্যারি করতে পারলে মুশফিকের অভাবও পূরণ করা সম্ভব। সিলেটের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হবে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির এবং ইমাদের অভাব পূরণ করা।
সিলেটের উইকেট নেয়া বোলার ছিলেন আমির। মিতব্যয়ী বোলিংয়ে সিলেটকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিলেন বাঁহাতি এই পেসার। আমির না থাকায় ডেথ ওভারে বড় চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে এনগারাভা, তানজিম সাকিবদের। এদিকে গত মৌসুমে স্পিনে একাই সিলেটকে টেনেছিলেন ইমাদ। মিতব্যয়ী বোলিংয়ের সঙ্গে উইকেট এনে দিতে পারায় বেশ পটু। এবার অবশ্য দেখা যাবে সিলেটের জার্সিতে। ইমাদের অভাব পূরণ সিলেটের হাতে আছেন অপু, নাঈম, সামিত প্যাটেল এবং শ্রীলঙ্কার দুশান হেমন্থ। মাঠের ক্রিকেটে মুশফিক, হৃদয়, আমির, ইমাদের অভাব কিভাবে পূরণ করে সিলেট সেটাই আপাতত নজরে থাকবে।
সিলেট স্ট্রাইকার্স—
স্থানীয় ক্রিকেটার— মাশরাফি বিন মুর্তজা, নাজমুল হোসেন শান্ত, সালমান হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, জাকির হাসান, ইয়াসির আলী রাব্বি, আরিফুল হক, নাজমুল ইসলাম অপু, তানজিম হাসান সাকিব, নাঈম হাসান, শফিকুল ইসলাম, রেজাউর রহমান রাজা, জাওয়াদ রোয়েন।
বিদেশি ক্রিকেটার— রায়ান বার্ল, হ্যারি টেক্টর, বেন কাটিং, দুশান হেমন্থ, জর্জ স্ক্রিমশো, রিচার্ড এনগারাভা, বেনি হাওয়েল, সামিত প্যাটেল