‘আমি খুব সিম্পল চিন্তা করি’

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
‘খেললেই জিম্বাবুয়ে বুঝবে নাহিদ কত গতিতে বল করে’
১ ঘন্টা আগে
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে নিয়মিত পারফর্ম করছেন হাসান মুরাদ। বাঁহাতি স্পিনে ব্যাটারদের বোকা বানাতে বেশ পটু তরুণ এই স্পিনার। যার ফল পেয়েছেন কদিন আগে জাতীয় দলে ডাক পেয়ে। বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ দলে সুযোগ পেলেও ম্যাচ পাননি মুরাদ।
ম্যাচ খেলতে না পারলেও অবশ্য আক্ষেপ নেই তার। বরং যা শিখতে পেরেছেন সেগুলো সামনে কাজে লাগাতে চান। একান্ত সাক্ষাৎকারে মুরাদের কথা শুনেছেন ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি আবিদ মোহাম্মদ। যেখানে কথা বলেছেন জাতীয় ডাক পাওয়ার অনূভূতি, নিজের ভবিষ্যত ভাবনা এবং নেতিবাচক বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখা নিয়ে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: জাতীয় দলে প্রথমবার ডাক পেয়েছিলেন। অনুভূতিটা কেমন ছিল এবং কার কাছে প্রথম খবরটা শুনতে পান?
হাসান মুরাদ: এটা প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পাওয়া। অনুভূতিটা অনেক ভালো যা আসলে বলে বোঝানোর মতো না। সব ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। আমার ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু ছিল এমন না। অন্য সবার মতো আমারও জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন। ডাক পাওয়ার পর অনেক ভালো লাগা কাজ করেছে। তখন আমি রাজশাহীতে এনসিএলের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ খেলছিলাম। আমি ফিল্ডিং করতেছিলাম এমন সময় রাজশাহীর একেকজন আসতেছে আর আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি যে তারা সবাই কেন আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। পরে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম অভিনন্দন জানাচ্ছেন কারণটা কী? পরে একজন বললেন, ‘তোমাকে তো জাতীয় দলের স্কোয়াডে রেখেছে।’ এটা শুনে আমি পুরোপুরি অবাক হয়ে যাই। আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আমি জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। সবার কাছ থেকেই অবশ্য জানতে পারছিলাম আমাকে ডাকতে পারে। আমি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম। ম্যাচ শেষে সন্ধ্যার দিকে নাফিস ভাই (নাফিস ইকবাল) নিশ্চিত করলেন। এরপর আসলে নিশ্চিত হয়ে গেলাম।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: নাফিস ইকবাল যখন নিশ্চিত করলেন তখন সবার আগে কাকে ফোন দিয়েছেন?
হাসান মুরাদ: যখন নিশ্চিত হতে পারলাম তখন সবার প্রথমে আব্বু-আম্মুকে ফোন দিয়েছি। তাদের সবাইকে জানালাম। তারা শুনে তো সবাই খুশি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: ডাক পাওয়ার পর কি মনের মাঝে এমন শঙ্কা ছিল যে তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানরা আছেন। ম্যাচ না পেতে পারেন?
হাসান মুরাদ: না, আমি কখনই ওইভাবে চিন্তা করিনি উনারা আছে তাই আমি ম্যাচ পাবো না। আমার নিজের একটা পরিকল্পনা ছিল যদি সুযোগ আসে তাহলে আমি এতদিন যেভাবে খেলেছি ওইভাবেই খেলব। আমার একেবারে সাধারণ একটা পরিকল্পনা ছিল যে নতুন কিছু চেষ্টা করবো না। যেভাবে খেলতেছি সেভাবেই শুরু করবো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: চান্ডিকা হাথুরুসিংহে, রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে তো কাজ করলেন। বিশেষ কিছু তারা বলেছে?
হাসান মুরাদ: তাদের সঙ্গে বিশেষ কোনো কথা হয়নি। তখন যেহেতু একটা সিরিজ চলতেছিল তাই সিরিজ নিয়েই বেশিরভাগ কথা হয়েছে। কিভাবে করলে ভালো হয়, যদি সুযোগ আসে আমি খেলি তাহলে কি করতে হতে পারে, কি ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। এসব নিয়ে কথা হয়েছে আরকি। বোলিং কোচ রঙ্গনা আর হেড কোচ তাদের দুজনের সঙ্গে প্রায় একই কথা হয়েছে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: হেরাথ থেকে বিশেষ টিপস পেয়েছেন যেটা এখন কাজ লাগছে...
হাসান মুরাদ: হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি যেখানে আছি এখান থেকে আরও কি ভালো করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে আমাকে কি কি ফেস করতে হতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সেটাও। আর আমার যা স্কিল আছে সেটাতে আরও কিছু যোগ করা যায় কিনা এসব নিয়ে কথা হয়েছে। কারণ আপনার স্কিল যত বেশি থাকবে তত আপনার গুরুত্ব বেশি থাকবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: এনসিএলে আপনি আর নাঈম হাসান একই দলের হয়ে খেলেন। একবার আপনি বেশি উইকেট নিলে দেখা যায় পরেরবার নাঈম বেশি পেয়েছে। চট্টগ্রামে দুজনের কার ভূমিকা কি থাকে?
হাসান মুরাদ: দল থেকে আসলে বিশেষ কিছু বলে দেয়া হয় না যে তুমি এমন করবা ওই এমন করবে। উনি অনেক দিন ধরে খেলছে, আমিও প্রথশ শ্রেণিতে অনেক ম্যাচ খেলেছি। তো আমরা দুজনই জানি পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের দুজনকে কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে হবে। আগে থেকে সেভাবে কোনো কিছু পরিকল্পনা করি না। উনি জাতীয় দলে খেলতেছে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও অভিজ্ঞ। আমি উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি। উনি অনেক ভালো মনের মানুষ, আমাকে অনেক কিছু শেয়ার করে। এমনকি উনারও যদি কোনো কিছু নিয়ে সমস্যা হয় আমার সাথে কথা বলে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশে সবসময়ই বাঁহাতি স্পিনারদের দাপট ছিল। মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাক এখন সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম। কাউকে দেখে কি বাঁহাতি স্পিনার হওয়া?
হাসান মুরাদ: কাউকে দেখে শুরু করেছি এমন না। যখন ক্রিকেট খেলাটা শুরু করি তখন এত কিছু বুঝতাম না। যেহেতু ছোট ছিল তখন সবাইকে নাম ধরে ধরে চিনতামও না। হয়ত খেলা দেখেছি কিন্তু জানতাম না কার নাম কি। সবাই যেভাবে শুরু করে খেলা আমিও সেভাবেই শুরু করেছি। যখন খেলাটা বুঝতে শুরু করেছি তখন সাকিব ভাইকে বেশি টিভিতে দেখতাম। তখন উনি প্রতিনিয়ত খেলত, প্রতিনিয়ত পারফর্ম করতো। উনাকে দেখে নিজের মাঝে কিছুটা অনুপ্রেরণা কাজ করতো।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনাকে অনেকটা সময় দেখা যায় বল ঝুলিয়ে দিয়ে ব্যাটারদের বোকা বানাচ্ছেন। এটার উপর কি বেশি ভরসা করেন?
হাসান মুরাদ: আমি এতো কিছু জানিও না আসলে, বলে বোঝাতেও পারব না। আমি সব সময় বলে আসছি আমি খুব সিম্পল চিন্তা করি, বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করি না। বোলিংয়ে জটিল কিছু করি না, প্রক্রিয়া মেনে চলার চেষ্টা করি। সবারই একটা শক্তির জায়গা থাকে, আমি আমার ওই জায়গাটা ঠিক রেখে সব করার চেষ্টা করি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি লাল বলের সুযোগ পেয়েছিলেন। ঘরোয়াতেও লাল আপনার পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। আপনার নিজের ভাবনাও কি এটা ঘিরেই নাকি অন্য ফরম্যাটেও নজর রাখছেন।
হাসান মুরাদ: সব মিলিয়ে আমি ক্রিকেটটাকেই উপভোগ করতে চাই। কোন ফরম্যাটটাকে আলাদা করে দেখতে চাই না। যেখানেই খেলি, যে ফরম্যাটই হোক কোন ফরম্যাটকে আলাদা করতে চাই না। এমন কোনোদিন ভাবিনি যে এক ফরম্যাট দিয়েই ক্যারিয়ার কাটিয়ে দিব। ক্রিকেটটা উপভোগ করতে চাই, এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এটাই উপভোগ করছি... যেখানেই খেলি মনোযোগ পুরোপুরি থাকে। দলের জন্য কি করলে দলের লাভ হয় তা নিয়েই বাড়তি ভাবনা থাকে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: যুব দলের হয়ে তো বিদেশে খেলেছেন। আমাদের এখানে তো নিয়মিতই খেলেন। বাইরে ও আমাদের এখনকার উইকেটের মাঝে পার্থক্য কোথায়?
হাসান মুরাদ: আমাদের তো এখন অনেক ভালো ভালো উইকেট হচ্ছে, রাজশাহী-বগুড়া বিশেষ করে। শেষ বিসিএলে আমার মনে হয় শেষ দুই তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো উইকেট ছিল। স্পোর্টিং উইকেট বলতে যেটা বলে, বিসিএলে শুরুর দুইদিন ব্যাটারদের হেল্প ছিল এরপর স্পিনারদের জন্য কাজে এসেছে। যখন স্পিনারদের জন্য কোন কিছু চ্যালেঞ্জিং থাকে তখন রোলটা ঠিকভাবে পালন করলে সফলতা আসবেই। এরপর যে কোন উইকেটেই আপনি শেষ দুই দিন উপকার পাবেন স্পিনার হিসেবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: চ্যালেঞ্জের কথা বললেন, এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই তো নিচ্ছেন। তাই না?
হাসান মুরাদ: আপনি তো বোলিং না করে মাঠ ছেড়ে যেতে পারবেন না, বা ম্যাচটা ছেড়ে যেতে পারবেন না। যেহেতু খেলবেন, ইতিবাচকই নিতে হবে। এমন কেউ বলবে না যে এই উইকেটে আমি বোলিং করতে পারব না তাই চলে গেলাম। এমন কেউ চিন্তা করে না। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মাথায় এটা থাকে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, নিতে হবে। এখানে কি করার আছে নতুন কিছু। এভাবেই রাখি আমি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: সবকিছু ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। এখন তো আসলে চারপাশে নেতিবাচকটা বেশি। তার মাঝেও এমন ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখার প্রক্রিয়াটা কি?
হাসান মুরাদ: আমি এতো বিস্তারিত বলব না, আমি শুধু বলব আমি নেতিবাচক ভাবনা ও কথা দুইটা থেকেই দূরে থাকি। আমি শুধু ভাবি এর চেয়ে কি ভালো করা যায়, আমি কি মিস করে গিয়েছি তা জানার চেষ্টা করি। কারও থেকে কিছু শেখার থাকলে আগ্রহ দেখাই। শেখার চেষ্টা করি যে এর চেয়ে ভালো কি করা যায়। খেলোয়াড় বাইরেও খেলাটাকে নিয়ে ভাবি বিধায় হয়তো ইতিবাচক মানসিকতাটা আসে।
চট্টগ্রামের হয়ে খেলার সময় আমার অধিনায়ক ছিলেন মুমিনুল ভাই, দলে ছিলেন ইরফান ভাই, ইয়াসির আলী ভাই। উনারা নিয়মিত খেলতে আসতেন তখন আমরা জুনিয়র ছিলাম ৪-৫জন। দিপু, জয়, শামীম এরা। উনাদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি, কিভাবে বড় সময় ধরে খেলতে হবে, প্রক্রিয়াটা কি সেটা তারা খুব ভালোভাবেই আমাদের বুঝিয়েছেন। উনাদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি, কোন সমস্যা হলে বাকিদের সঙ্গে আলাপ করি। এখান থেকেই হয়তো পরিবর্তনটা এসেছে।