জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ, অপেক্ষা ৩ উইকেটের

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট, সিলেট থেকে ||
‘বিকল্প আছে কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেমন করবে আগে থেকে বলা মুশকিল’
৮ ঘন্টা আগে
‘সিরিজটা আমরা জিততে চাই।’ সিলেট টেস্ট শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে আত্মবিশ্বাসের সুরেই এমনটা বলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই স্বপ্ন পূরণের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পর নিউজিল্যান্ডকে আরও একবার টেস্টে হারানোর সুযোগ স্বাগতিকদের। কিউইদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেতে আরও মাত্র ৩ উইকেট দূরে শান্তর দল। শেষ দিনে নিউজিল্যান্ডের তিন ব্যাটারকে দ্রুত ফেরাতে পারলেই দ্বিতীয়বারের মতো তাদের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পাবে বাংলাদেশ। সিলেট টেস্ট জিততে শেষ দিনে বাংলাদেশের যেখানে মাত্র ৩ উইকেট দরকার সেখানে কিউইদের করতে হবে ২১৯ রান।
৩৩২ রান তাড়ায় ভালো শুরুর বিকল্প ছিল না নিউজিল্যান্ডের সামনে। তবে সেটা করতে পারেননি টম লাথাম ও ডেভন কনওয়ে। কিউইদের ব্যাটিং ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। শুরু থেকেই অফ স্টাম্পের বাইরে বোলিং করে যাচ্ছিলেন শরিফুল, লাথামও ঝুঁকি না নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছিলেন। ওভারের শেষ বলটা শরিফুল করলেন আগের থেকে একটু ভেতরে। বাঁহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারি বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছুঁয়ে যায় লাথামের ব্যাট। নুরুল হাসান সোহান সহজ ক্যাচ নিলে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারাতে হয় নিউজিল্যান্ডকে।
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেও এবার কেন উইলিয়ামসনকে টিকতে দেননি তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের অফ এবং মিডল স্টাম্পের উপর করা টসড আপ ডেলিভারিতে ডিফেন্স করলেও বলের লাইনে যেতে পারেননি উইলিয়ামসন। বল প্যাডে আঘাত হানতেই জোরালো আবেদন করে বাংলাদেশ, আম্পায়ারও আঙুল তুলে দেন। রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি ১১ রান করা উইলিয়ামসনের। নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়কের পর দ্রুতই ফিরে গেছেন হেনরি নিকোলস। মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
সুইপ করলেও সেটা টপ এজ হয়ে সরাসরি শর্ট ফাইন লেগে থাকা নাঈম হাসানের হাতে চলে যায়। সহজ ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি তিনি। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হওয়া নিকোলস এবার ফিরেছেন মাত্র ২ রানে। টপ অর্ডার ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে এক প্রান্ত আগলে রাখার চেষ্টা করছিলেন কনওয়ে। অনেকটা সময় টিকেও ছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। বাংলাদেশের স্পিনারদের সামলাতে বারবার উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলছিলেন কনওয়ে। স্পিনাররা যাতে বাড়তি টার্ন না পায় সেই ভাবনা থেকেই হয়ত এমনটা করছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে উইকেট দিয়েই ফিরতে হয়েছে তাকে।
তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে একটু এগিয়ে এসে সামনের পায়ে ভর দিয়ে মিড অফের দিকে ব্লক করতে চেয়েছিলেন। তবে বল ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগে শর্ট লেগে থাকা শাহাদাত হোসেন দিপুর হাতে চলে যায়। দিপু অনায়াসে ক্যাচ নিলে ফিরতে হয় ৭৬ বলে ২২ রান করা কনওয়েকে। সময় যত বাড়ছিল তাইজুল ততই বেশি বিপদজনক হয়ে উঠছিলেন। কনওয়ে, উইলিয়ামসনের পর টম ব্লান্ডেলকেও নিজের শিকার বানান বাঁহাতি এই স্পিনার। লেংথে পড়ে তাইজুলের টার্ন এবং লাফিয়ে উঠা বল নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে যাওয়ার আগে ব্লান্ডেলের ব্যাট ছুঁয়ে যায়। জোরালো আবেদন করতেই আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
দিনের শেষ বেলায় গ্লেন ফিলিপসকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেছেন নাঈম। যদিও শুরুতে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরবর্তীতে রিভিউ নিয়ে ফিলিপসকে সাজঘরে পাঠায় স্বাগতিকরা। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মিডল স্টাম্পে ইমপ্যাক্ট ও লেগ স্টাম্পে হিটিং হয়েছে। ফলে ১২ রান করে ফিরে যেতে হয়েছে ফিলিপসকে। এরপর কাইল জেমিসনকে নিজের শিকার বানিয়েছেন তাইজুল। তাতে করে ৭ উইকেটে ১১৩ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। ইশ সোধিকে সঙ্গে নিয়ে শেষ দিনে ব্যাটিংয়ে নামবেন ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা ড্যারিল মিচেল।

এর আগে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল যতটা সম্ভব লিড বাড়ানো। তবে সেখানে ছেদ পড়ে শান্তর বিদায়ে। সাউদির লেগ স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে গ্লান্স করতে চেয়েছিলেন শান্ত। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক করতে না পারায় ব্যাটের কানায় ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে থাকা ব্লান্ডেলকে গ্লাভসে। আগের দিনের সঙ্গে মাত্র এক রান যোগ করে শান্ত ফিরে গেছেন ১০৫ রানের ইনিংস খেলে। এদিকে দারুণ ব্যাটিংয়ে আগেরদিনই হাফ সেঞ্চুরি পেতে পারতেন মুশফিক। তবে সিলেটের আলোকস্বল্পতা অপেক্ষা বাড়িয়েছে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের হাফ সেঞ্চুরির।
অশ্বিনের চোখে বরুণই ছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা
১১ মার্চ ২৫
চতুর্থ দিন সকালে অবশ্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে। শান্ত ফেরার পরই পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিনি। সাউদির লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাক ফুটে গিয়ে ব্লক করতে চেয়েছিলেন মুশফিক। এজ হয়ে স্লিপের পাশ দিয়ে বল চলে যায় বাউন্ডারি লাইনের কাছে। চার না হলেও দুই রান নিয়ে ৭৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরির পর বিদায় নিয়েছেন দিপু। প্রথম ইনিংসে ২৪ রান করা দিপু এবার ফিরেছেন ১৮ রান করে। সৌধির স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারিতে ডিফেন্স করে বলের লাইন মিস করেন তিনি।
বল প্যাডে আঘাত হানতেই জোরালো আবেদন করে নিউজিল্যান্ড। আম্পায়ারও অনায়াসে আউট দিয়ে দেন তাকে। মুশফিকের সঙ্গে কথা বললেও শেষ পর্যন্ত রিভিউ নেননি দিপু। পঞ্চাশ পেরোনোর পর আউট হয়েছেন মুশফিকও। প্যাটেলের ফুলার লেংথে করা আর্ম ডেলিভারিতে সহজাত ডিফেন্স করেছিলেন তিনি। তবে বলের লাইনে একেবারেই যেতে পারেননি। বল ও ব্যাটের মাঝে ফাঁকা ছিল অনেকটা। বল প্যাডে আঘাত করার পর আবেদন করতেই মুশফিককে আউট দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলেও সেটা কাজে আসেনি ৬৭ রানের ইনিংস খেলা মুশফিকের।
স্ত্রী ও সদ্যজাত সন্তানের পাশে থাকতে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে ছুটি নিয়েছেন লিটন দাস। যার ফলে কিউইদের বিপক্ষে সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) ব্যাট হাতে রান পাওয়া সোহান। তবে সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। প্রথম ইনিংসে ২৯ রান করা সোহান এবার আউট হয়েছেন ১০ রানে। ফিলিপসের টসড আপ ডেলিভারিতে বোলারের মাথার উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সোহান। তবে প্রত্যাশিতভাবে শটটি খেলতে পারেননি। ফলো থ্রুতে অনায়াসে ক্যাচ লুফে নেন ফিলিপস। যার ফলে ফিরে যেতে হয় সোহানকে।
মিরাজ ও নাঈমের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল লিড বাড়ানোর। সেটা করতে পারেনি তাদের এই জুটি। লাঞ্চ থেকে ফেরার পর তৃতীয় বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সোধির লাফিয়ে উঠা গুগলিতে লেগ সাইডে পুশ করতে চেয়েছিলেন নাঈম। শর্ট লেগে থাকা টম লাথাম ক্যাচ লুফে নিলে ফিরতে হয় তাকে। পরের ওভারে তাইজুল ইসলামকে হারায় বাংলাদেশ। এজাজ প্যাটেলের ঝুলিয়ে দেয়া ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে থাকা নিকোলসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
এরপর শরিফুলকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের লিড বাড়াতে থাকেন মিরাজ। সেই সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। প্যাটেলের বলে কভারে ঠেলে দিয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মিরাজ। যদিও ডানহাতি এই ব্যাটারের হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার ওভারেই অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ। প্যাটেলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়েছেন শরিফুল। তাতে ৩৩৮ রানে অল আউট হয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩২ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (চতুর্থ দিন শেষে):
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৩১০/১০ (৮৫.১ ওভার) (জয় ৮৬, জাকির ১২, মুমিনুল ৩৭, মুশফিক ১২, মিরাজ ২০, দিপু ২৪, সোহান ২৯; ফিলিপস ৪/৫৩)
নিউজিল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)- ৩১৭/১০ (১০১.৫ ওভার) (লাথাম ২১, কনওয়ে ১২, উইলিয়ামসন ১০২, নিকোলস ১৯, মিচেল ৪১, ফিলিপস ৪২, সাউদি ৩৫, জেমিসন ২৩; তাইজুল ৪/৮৯, মুমিনুল ৩/৪)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ৩৩৮/১০ (১০০.৪ ওভার) (জাকির ১৭, জয় ৮, শান্ত ১০৫, মুমিনুল ৪০, মুশফিক ৬৭, দিপু ১৮, মিরাজ ৫০*, সোহান ১০)
নিউজিল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস, লক্ষ্য- ৩৩২ রান)- ১১৩/৭ (৪৯ ওভার) (কনওয়ে ২২, উইলিয়ামসন ১১, মিচেল ৪৪*; তাইজুল ৪/৪০)