‘চোকার্স’ তকমা মুছতে পারল না সাউথ আফ্রিকা, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে সমর্থন দেবেন মিলার
৬ মার্চ ২৫
চারবার সেমিফাইনালে গেলেও ফাইনালে উঠা হয়নি সাউথ আফ্রিকার। সেমিফাইনাল দুঃখ গাঁথা হয়ে আছে প্রোটিয়াদের হৃদয়ে। তবে ভারত বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকাকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল একটু ভিন্ন। গ্রুপ পর্বে রীতিমতো উড়তে থাকা টেম্বা বাভুমার দল এবার বোধহয় ফাইনালের মঞ্চে পা রাখতে পারবে। এমনটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন অনেকে। তবে মনের কোণে ভয়ও ছিল সমর্থকদের। পুরো টুর্নামেন্টে ভালো খেলে সেমিফাইনালে গিয়ে ‘চোক’ করা যেন তাদের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে তাদেরকে ডাকা হয় ‘চোকার’ হিসেবে।
নিজেদের বদনাম ঘুচানোর সুযোগ ছিল বাভুমার দলের সামনে। তবে ভাগ্য বিধাতা এবারও সহায় হলো না প্রোটিয়াদের। গ্রুপ পর্বে ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ে সবার নজর কাড়া ডি কক, রাসি ভ্যান ডার ডাসেনরা মুখ থুবড়ে পড়লেন অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের সামনে। যেটুকু লড়াই তার সবটাই করলেন ডেভিড মিলার। বাঁহাতি এই ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে ২১২ রানের পুঁজি পেলেও সেটাকে ডিফেন্ড করতে পারেননি বোলাররা। তাবরাইজ শামসি ও কেশভ মহারাজ মিলে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেললেও আটাকানো যায়নি তাদের ৩ উইকেটের জয়। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর লড়াইয়ে জিতে আরও একবার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ২১৩ রান তাড়া করতে নেমে খুব বেশি তাড়াহুড়োর প্রয়োজন ছিল না অস্ট্রেলিয়ার। এমনকি দ্রুত রান তোলার চাপও ছিল না পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। তবুও ডেভিড ওয়ার্নার এবং ট্রাভিস হেড মিলে কাগিসো রাবাদা এবং মার্কো জেনসেনের বিপক্ষে রান তুললেন প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত। তাতে মাত্র ৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়া রান তোলে বিনা উইকেটে ৬০। পুরো টুর্নামেন্টে ভালো বোলিং করলেও এদিন সুবিধা করতে পারেননি জেনসেন।
পেসাররা প্রত্যাশা মেটাতে না পারলেও ইনিংসের সপ্তম ওভারেই স্পিনারের দ্বারস্থ হন টেম্বা বাভুমা। শামসি ও মহারাজ থাকলেও উইকেটে দুই বাঁহাতি থাকায় বাভুমা বল তুলে দেন মার্করামের হাতে। বোলিংয়ে এসে উইকেটও এনে দিলেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। মার্করামের বলে একটু জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ওয়ার্নার। দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি এই ওপেনার আউট হয়েছেন ১৮ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেও এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি মিচেল মার্শ।
রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে জোরের উপরে খেলেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। কভারে দাঁড়িয়ে থাকা ডাসেন ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। ডাসেনের ‘অবিশ্বাস্য’ ফিল্ডিংয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় মার্শকে। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পরও অস্ট্রেলিয়াকে চাপে পড়তে দেননি হেড ও স্মিথ। ৪০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন হেড। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা হেডকে ফিরিয়েছেন মহারাজ। বাঁহাতি এই স্পিনারের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে সামনের পায়ে ভর দিয়ে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন হেড।

বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট-প্যাডের মাঝে অনেকটা ফাঁকা ছিল। সেখান দিয়ে মহারাজের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারি আঘাত হানে হেডের স্টাম্পে। বাঁহাতি এই ওপেনার ফিরে যান ৬২ রানের ইনিংস খেলে। মার্নাস ল্যাবুশেনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শামসি। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি ১৮ রান করা এই ব্যাটারের। দ্রুতই ফিরে গেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শামসির শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বলের লাইন মিস করে ফিরে গেছেন বোল্ড হয়ে।
পিএসএলকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে আইপিএলে খেলবেন বশ
৮ মার্চ ২৫
নিজের সবশেষ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করা ম্যাক্সওয়েল এদিন আউট হয়েছেন ১ রানে। সবশেষ ৬৭ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে সাউথ আফ্রিকা। তবে তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্মিথ ও জশ ইংলিস জুটি। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৭ রান। স্মিথকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন জেরাল্ড কোয়েতজে। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন। বল সোজা উপরে উঠে যাওয়ায় ক্যাচ লুফে নেন ডি কক। লম্বা সময় টিকে থাকা স্মিথকে ফিরতে হয় ৬২ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে।
স্মিথ ফেরার পর স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইংলিস। তখনও হাতে পর্যাপ্ত বল থাকায় চাপ নেয়ার তেমন প্রয়োজন ছিল না তার। অস্ট্রেলিয়া যখন জয় থেকে ২০ রান দূরে তখন সাজঘরে ফেরেন ইংলিস। কোয়েতজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ৪৯ বলে ২৮ রান করা অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ব্যাটার। তবে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করেন কামিন্স ও স্টার্ক। সাউথ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন কোয়েতজে এবং শামসি।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরু পায়নি সাউথ আফ্রিকা। বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে থাকলেও ভারতে এসে নিজের ফর্ম হারিয়েছেন টেম্বা বাভুমা। বাকিদের কল্যাণে সেটির প্রভাব খুব বেশি না পড়লেও সেমিফাইনালে চোখে পড়ল স্পষ্ট। সেমিফাইনালের মঞ্চে এগিয়ে থাকতে ভালো শুরুর বিকল্প ছিল না প্রোটিয়াদের। অধিনায়ক হিসেবে বাভুমার দায়িত্বটা আরও বেশি। অথচ ডানহাতি এই ওপেনার সাজঘরে ফিরে গেলেন প্রথম ওভারেই।
স্টার্কের অফ স্টাম্পের বাইরের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা ইংলিসকে ক্যাচ দিয়েছেন রানের খাতা খুলতে না পারা বাভুমা। প্রোটিয়া অধিনায়ককে ফেরানোর পর স্টার্ক ও হেজেলউড মিলে কুইন্টন ডি কক এবং রাসি ভ্যান ডার ডাসেনকে রীতিমতো চেপে ধরলেন। ওয়ার্নার, ল্যাবুশেনদের অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ের কল্যাণে বাউন্ডারি বের করতে পারছিলেন না তাদের দুজনের কেউই। তাতে করে ক্রমশই চাপ বাড়ছিল ডি কক ও ডাসেনের উপর। সেই চাপ সরাতে গিয়েই যেন বিপদ ডেকে আনলেন ডি কক।
হেজেলউডের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন কামিন্সের হাতে। নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামা ডি কক সেমিফাইনালে করলেন মাত্র ৩ রান। যদিও পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা প্রোটিয়াদের কতটা চেপে ধরেছিল সেটা স্পষ্ট হবে পাওয়ার প্লের স্কোর দেখলেও। ২ উইকেট হারানো সাউথ আফ্রিকা প্রথম ১০ ওভারে তোলে মাত্র ১৮ রান। চারে নামা এইডেন মার্করামকে দেখে খানিকটা স্বস্তি পেতেই পারতো তারা। শুরুটাও করেছিলেন সেভাবেই। তবে টিকতে পারলেন না বেশিক্ষণ।
স্টার্কের বলে সোজা ব্যাটে ড্রাইভ করতে গিয়ে আউট সাইড এজ হয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েছেন ১০ রান করা এই ব্যাটার। লম্বা সময় টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের বিপদ বাড়িয়ে ফিরে গেছেন ডাসেনও। হেজেলউডের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে থাকা স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ডাসেনের ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ বলে ৬ রান। অজিদের আগুনে বোলিংয়ে মাত্র ২৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর সাউথ আফ্রিকাকে টেনে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন মিলার ও হেনরিখ ক্লাসেন।
রয়েসয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছিলেন তারা দুজন। দেখেশুনে খেললেও দুই-এক ওভার পরপর বাউন্ডারি মেরে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছিলেন মিলার ও ক্লাসেন। তাদের জুটি ভাঙতে ম্যাক্সওয়েলের পর হেডের শরণাপন্ন হন কামিন্স। বোলিংয়ে এসে সাফল্যও এনে দেন তিনি। যদিও ক্লাসেনের বিপক্ষে ওভারটি শুরু করেছিলেন দুটি চার হজম করে। তবে চতুর্থ ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরে যেতে হয় ৪৭ রানের ইনিংস খেলা ক্লাসেনকে। পরের বলে আউট হয়েছেন জেনসেনও।
তাদের দুজনকে দ্রুত হারানোর পর ৭০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মিলার। এরপর কোয়েতজেকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন তিনি। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৫৩ রান। কোয়েতজের বিদায়ে ভাঙে তাদের এই জুটি। কামিন্সের বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে ফিরে গেছেন তিনি। ক্যাচ আউট হয়ে ফিরলেও পরবর্তীতে রিপ্লেতে দেখা যায় বল কোয়েতজের গ্লাভস নয় কাঁধে লেগেছে। তাতে করে রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন ১৯ রান করা এই ব্যাটার। দ্রুত ফিরেছেন মহারাজও।
দলকে একাই টেনে নিয়ে এসে শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মিলার। কামিন্সের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করে ছক্কা মেরে ১১৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সেঞ্চুরির পাওয়ার পরের বলেও একই শট খেলেছিলেন তিনি। তবে এবার আর বাউন্ডারি ছাড়া করতে পারেননি মিলার। ধরা পড়তে হয়েছে হেডের হাতে। শেষ দিকে রাবাদা ১০ রান করলে সাউথ আফ্রিকা ২১২ রানের পুঁজি পায়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন কামিন্স ও স্টার্ক। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন হেজেলউড ও হেড।