মার্শের অনবদ্য ১৭৭*, হার দিয়েই বিশ্বকাপ শেষ করল বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
দীর্ঘ সময় পর ইংল্যান্ডের ওয়ানডে একাদশে রুট
৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট কাটতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো খেলার বিকল্প নেই বাংলাদেশের। এমন ম্যাচেও হেরেছে বাংলাদেশ। মিচেল মার্শের সেঞ্চুরির ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয় আট উইকেটে। এই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে সফলতা পেলেও বল হাতে একেবারেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি বাংলাদেশ।
পুনেতে ম্যাচটিতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রান করেছে বাংলাদেশ। ৭৪ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহে অবদান রেখেছেন তাওহীদ হৃদয়। জবাবে ৪৪.৪ ওভারেই লক্ষ্য তাড়া করেছে আরও আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়া।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে সতর্ক সূচনা করে অস্ট্রেলিয়া। যদিও বেশীক্ষণ তাদের স্থায়ী হতে দেননি তাসকিন আহমেদ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বিপজ্জনক ট্রাভিস হেডকে ইনসাইড এজে বোল্ড করে বিদায় করেন তাসকিন। তার ব্যাক অব দ্যা লেংথ ডেলিভারিটি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় ব্যাট চালানো হেডের ব্যাটে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে। ফেরার আগে ১১ বলে ১০ রান করেন অজি এই ওপেনার।
হেড ফেরার পর দ্রুত রান তুলতে থাকেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। উইকেটে এসেই আগ্রাসীভাবে খেলতে থাকেন মার্শ। শেখ মেহেদীর একই ওভারে তিনটি চার মারেন তিনি। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদকে একটি করে চার ছক্কা মারেন তিনি। অষ্টম ওভারেই দলীয় রান পঞ্চাশ ছাড়ায় অজিদের। ৩৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মার্শ। এরপর ওয়ার্নার হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৫২ বলে।
হাফ সেঞ্চুরির পর ওয়ার্নারকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। এই টাইগার পেসারের ফুলার লেংথ বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। ওয়ার্নারের ইনিংস শেষ হয়েছে ৫৩ রানে। ওয়ার্নার ফেরার একটু পরই সেঞ্চুরির দেখা পান তার সঙ্গে ১২০ রানের জুটি গড়া মার্শ। ৮৭তম বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরির পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মার্শ। প্রতি ওভারেই চার-ছক্কা হাঁকিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে সিঙ্গেলস-ডাবলস নিয়ে ম্যাচ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্টিভ স্মিথও।
দেখতে দেখতে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন স্মিথও। এদিকে মার্শও ১৫০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ১৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন এক জুটি গড়েন এই দুজন। ৬৪ বলে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন স্মিথ। ১৭টি চার ও নয়টি ছক্কায় ১৩২ বলে ১৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন মার্শ।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে দেখেশুনে খেলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস। জস হ্যাজেলউডের করা প্রথম ওভারে কোনো রানই নিতে পারেননি তারা। পঞ্চম ওভারে লিটন সেই হ্যাজেলউডকেই পুল করে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙার ইঙ্গিত দেন।
পরের প্রজন্মের জন্য ট্রফি জিততে চান মিরাজ
১১ ঘন্টা আগে
পরের ওভারে প্যাট কামিন্সকে লেংথ বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে এক্সটা কাভার দিয়ে চার মারেন তানজিদ। পাওয়ার প্লে'তে বাংলাদেশের দুই ওপেনারই হাতখুলে খেলেন। ১০ ওভারে বিনা উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬২ রান। অবশ্য দারুণ শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তানজিদ।
শেন অ্যাবোটের বলে লিডিং এজ হয়ে বোলারের হাতেই ক্যাচ দেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। আউট হওয়ার আগে তানজিদের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে ৩৬ রান। বাংলাদেশ ৭৬ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে। তানজিদ ফেরার পর শান্তকে নিয়ে কিছুটা ধীর গতিতে খেলছিলেন লিটন।
তবে এক পর্যায়ে অ্যাডাম জাম্পার ওপর চড়াও হতে গিয়ে তিনি আউট হন। জাম্পার করা টসড আপ ডেলিভারিতে লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন লিটন, তবে ব্যাটে বলে না হলে তা ধরা পড়ে সীমানায় ফিল্ডিং করা মার্নাস ল্যাবুশেনের হাতে।
লিটন ফিরলেও বেশ ভালোভাবেই অ্যাডাম জাম্পা-ট্রাভিস হেডদের সামাল দিচ্ছিলেন শান্ত। চার নম্বরে নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে তার চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিলেন হৃদয়। তবে শান্ত হাফ সেঞ্চুরির আগেই ফিরেছেন রান আউট হয়ে। অ্যাবোটের বলে পুল করতে চেয়েছিলেন শান্ত। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি।
বল চলে যায় মিড উইকেটে ল্যাবুশেনের হাতে। তার দ্রুত গতির থ্রোতে বল হাতে পেয়েই স্টাম্প ভেঙ্গে দেন জস ইংলিস। দুই রান নিতে গিয়ে শান্ত ডাইভ দিয়েও ক্রিজের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। নাজমুল হোসেন শান্ত ফেরার পর বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং তাওহীদ হৃদয়।
যদিও দলীয় ২১৪ রানে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৮ বলে ৩২ রান করে আউট হন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। হৃদয় ছিলেন স্ট্রাইকে, বলটি মোকাবেলাও করেন তিনি। কিন্তু রান নেয়ার জন্য একটু আগে চলে আসা মাহমুদউল্লাহকে ডিরেক্ট থ্রো'তে বিদায় করেন ল্যাবুশেন।
হৃদয়ের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটিটি ছিল ৪৪ রানের। এই ইনিংসের মাধ্যমে বিশ্বকাপ শেষ করলেন ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ। মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ৬১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তাওহীদ হৃদয়। এবারের বিশ্বকাপে এটাই হৃদয়ের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।
মুশফিকুর রহিমও ভালো শুরুর ফায়দা নিতে পারেননি। জাম্পার শর্ট মিড উইকেট দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন প্যাট কামিন্সের হাতে। এর ফলে শেষ হয়েছে মুশফিকের ২৪ বলে ২১ রানের ইনিংস। হৃদয়ের সম্ভাবনাময় ইনিংসের ইতি টেনেছেন মার্কাস স্টইনিস।
এই অজি পেসারের ফুল টস ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন হৃদয়। তবে সীমানা পাড় করতে পারেননি। বল চলে যায় ল্যাবুশেনের হাতে। ফলে ৭৯ বলে ৭৪ রানে শেষ হয় হৃদয়ের ইনিংস। তার ইনিংস জুড়ে ছিল ২টি ছক্কা ও ৫টি চারের মার।
এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদের ব্যাটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩০০ ছাড়ায়। শেষ ওভারে অ্যাবোটের বলে পুল করতে গিয়ে কাভারে কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ২৯ রান করা মিরাজ। নাসুম হন রান আউট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ৩০৬/৮ (৫০ ওভার) (লিটন ৩৬, তানজিদ ৩১, শান্ত ৪৫, হৃদয় ৭৪; জাম্পা ২/৩২, অ্যাবোট ২/৬১)।
অস্ট্রেলিয়া- ৩০৭/২ (৪৪.৪ ওভার) (মার্শ ১৭৭*, স্মিথ ৬৩*, ওয়ার্নার ৫৩; তাসকিন ১/৬১)।