বাংলাদেশের টানা হার, নিউজিল্যান্ডের তিনে তিন

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
নাহিদ রানার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট শান্ত
১৭ মার্চ ২৫
নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডকে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছল বাংলাদেশ। কিউইদের বিপক্ষে জিতে নিজেদের আরও এগিয়ে নেয়ার সুযোগ ছিল সাকিব আল হাসানের দলের। তবে তা হলো না। উল্টো ৮ উইকেটে হেরে বাংলাদেশের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ধূসর হতে শুরু করেছে।
মাঝারি লক্ষ্য পাড়ি দিতে নামা নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ছিল বেশ নড়বড়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পেসারদের সামনে শুরুতে রান তুলতে ধুঁকতে হয়েছে কিউই ওপেনারদের। উইকেটের দেখা পেতেও বাংলাদেশকে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে মুস্তাফিজুর রহমানের অফ স্টাম্পের একটু বাইরে ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৯ রান করা রাচিন রবীন্দ্র।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ডেভন কনওয়েকে নিয়ে ৮০ রানের জুটি গড়েন কেন উইলিয়ামসন। বেশ ভালই খেলছিলেন কনওয়ে। দুজনই যখন একের পর এক বাউন্ডারিতে রান বাড়াচ্ছেন তখনই বাংলাদেশের পেসারদের চাপে দুই ওভার উইকেট শূন্য ছিল নিউজিল্যান্ড। তাসকিন আহমেদকে ফ্লিক করে সেই শূন্যতা ভেঙেছেন কনওয়ে।
১৩তম ওভারে সেই কনওয়ের ব্যাটেই পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় কিউইদের ইনিংস। পঞ্চম বলে ওয়াইড করেছিলেন তাসকিন। যদিও বাংলাদেশের ফিল্ডাররা কট বিহাইন্ডের আবেদন করেছিলেন। অধিনায়ক সাকিব অবশ্য রিভিউ নিতে চাননি। অনাগ্রহী ছিলেন মুশফিকুর রহিমও। তবে মিরাজের প্ররোচনায় রিভিউ নেন সাকিব। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাটে বা গ্লাভসে কোথাও লাগেনি। ফলে রিভিউ হারায় বাংলাদেশ।
এরপর কনওয়েকে আউট করতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২১তম ওভার পর্যন্ত। সাকিবের করা ফুলার ল্যান্থের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ৫৯ বলে ৪৫ রান করা কনওয়ে। যদিও রিভিউ নিয়েছিলেন কনওয়ে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল উইকেটেই হিট করেন ইন লাইনে ইমপ্যাক্ট করা বল। তাতে শেষ হয় উইলিয়ামসনের সঙ্গে কনওয়ের জুটি ভাঙে ৮০ রানের জুটি।

দুই উইকেট হারানোর পর ড্যারিল মিচেলকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের হাল ধরেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এই জুটির পথে ৫১ বলে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি। মিচেল খানিকটা আক্রমণাত্মক খেলেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ৫০ পেতে তিনি খেলেছেন কেবল ৪৩ বল। উইলিয়ামসন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের আক্রমণাত্মক হচ্ছিলেন। তবে তাকে ঘিরে শঙ্কা জাগায় নাজমুল হোসেন শান্তর একটি থ্রো।
ডাফি-সেয়ার্সের তোপের পর সেইফার্ট ঝড়ে জিতল নিউজিল্যান্ড
১০ ঘন্টা আগে
শর্ট মিড উইকেট থেকে ছোড়া একটি বলে নন স্ট্রাইক প্রান্তে দৌড়ে আসা উইলিয়ামসনের বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে লাগে। সঙ্গে সঙ্গেই ফিজিওর দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাকে। সে সময় তাকে ব্যথায় কাৎরাতে দেখা যায়। হাতে ব্যান্ডেজ দিলেও ব্যথার কারণে ৩৯তম ওভারের মাঝ পথে মাঠ ছাড়েন উইলিয়ামসন। রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার আগে নামের পাশে যোগ হয় ১০৭ বলে ৭৮ রান।
বাকি সময়টা ছিল মিচেলময়। চার ছক্কার ফুলঝুরিতে ৪২.৫ ওভারেই নিউজিল্যান্ডকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত মিচেল অপরাজিত থাকেন ৬৭ বলে ৮৯ রান করে। ১১ বলে ১৬ রান করে তার সঙ্গী ছিলেন গ্লেন ফিলিপস। ৪৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন ফার্গুসন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ট্রেন্ট বোল্টের লেংথ ডেলিভারিতে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মেরেছিলেন লিটন দাস। ডিপ ফাইন লেগে ম্যাট হ্যানরি জায়গা মতো থাকায় ক্যাচ লুফে নিতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি। ফলে নিজের জন্মদিনে গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরে গেছেন সাজঘরে। এমন আউট হওয়ার পর খানিকটা অবাকই হয়েছেন লিটন। বিস্ময় দেখা গেছে বোল্টের চোখেও। লিটন ফেরার পর বোল্টের বলে চার মেরে রানের খাতা খোলেন তানজিদ হাসান তামিম। যদিও টম লাথাম ক্যাচটি লুফে নিতে পারলে আউট হতেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
এরপর আরও তিনটি চার মেরেছেন তানজিদ। দেখে মনে হচ্ছিলো নিজের ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তবে তরুণ এই ওপেনারকে ইনিংস বড় করতে দেননি লকি ফার্গুসন। ডানহাতি এই পেসারের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে থাকা ডেভন কনওয়ের হাতে ধরা পড়েন ১৬ রান করা তানজিদ হাসান। এদিকে তিনে নেমে ভালো শুরু করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশকে বেশ ভালোভাবেই টানছিলেন তিনি। তবে তার ব্যাটের রান থামিয়েছেন ফার্গুসন।
ডানহাতি এই পেসারের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে ডিপ স্কয়ারের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে হ্যানরির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৩০ রান করা মিরাজ। দ্রুতই আউট হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গ্লেন ফিলিপসের শর্ট ডেলিভারিতে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন ৭ রান করে। ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এরপর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বাংলাদেশের বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। এই জুটির পথে ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুশফিক।
খানিক বাদে ফার্গুসনের উপর চড়াও হতে গিয়ে আউট হয়েছেন সাকিব। ডানহাতি এই পেসারের আগের বলে ছক্কা মারা সাকিব পরের বলে বাউন্সার পুল করতে চেয়েছিলেন। তবে টপ এজ হওয়ায় ফিরে যেতে হয় ৪০ রানের ইনিংস খেলে। সাকিব ফিরলেও স্বাচ্ছন্দেই খেলছিলেন মুশফিক। তবে হ্যানরির শর্ট লেংথের স্লোয়ার ডেলিভারি নিচু হওয়ায় খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ফলে দারুণ ব্যাটিং করে ৬৬ রানে ফিরে যেতে হয়েছে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকে।
মুশফিক ফেরার পর আউট হয়েছেন তাওহীদ হৃদয়ও। বোল্টের নাকল বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট এক্সট্রা কভারে থাকা স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৩ রান করা এই ব্যাটার। হৃদয়কে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন বোল্ট। মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গ দিয়ে তাসকিন আহমেদ আউট হয়ে ফিরেছেন ১৭ রান করে। মুস্তাফিজুর রহমান ৪ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে শেষ দিকে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের পুঁজি ২৪৫ রানে নিয়ে গেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ- ২৪৫/৯ (৫০ ওভার) (লিটন ০, তানজিদ ১৬, মিরাজ ৩০, মুশফিক ৬৬, সাকিব ৪০, হৃদয় ১৩, মাহমুদউল্লাহ ৪১*)
নিউজিল্যান্ড- ২৪৮/২ (৪২.৫ ওভার) (কনওয়ে ৪৫, উইলিয়ামসন ৭৮, মিচেল ৮৯*; মুস্তাফিজ ১/৩৬, সাকিব ১/৫৪)