ইংল্যান্ডের কাছে ১৩৭ রানে হারল বাংলাদেশ
.webp)
ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
জিততে হলে ইংল্যান্ডের ৩৬৪ রানের পাহাড় টপকাতে হতো বাংলাদেশকে। অথচ টাইগারদের শুরুটা হলো একেবারে ভয়ংকরভাবে। রিস টপলির দারুণ বোলিংয়ের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজরা। বাকি সময়টায় লিটন দাস ও মুশফিকু রহিমের হাফ সেঞ্চুরিতে কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। ম্যাচের কোন পর্যায়েই জয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি ইংলিশদের বিপক্ষে তেমন করে লড়াই করতে পারেনি। নিষ্প্রভ বোলিংয়ের পর ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইংল্যান্ডের কাছে ১৩৭ রানে হারল বাংলাদেশ।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুর বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। ক্রিস ওকসের প্রথম ওভারে তিন চার মেরে সেটার আভাসই যেন দিলেন লিটন দাস। তবে পরের ওভারে উল্টো চিত্র দেখালেন তানজিদ হাসান তামিম। টপলির অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে সেকেন্ড স্লিপে থাকা জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১ রানে। তানজিদ আউট হওয়ার পরের বলে সাজঘরে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
টপলির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে থাকা লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে ক্যাচ দেন রানের খাতা খুলতে না পারা বাঁহাতি এই ব্যাটার। ১৪ রানে ২ উইকেট হারানোর পর সাকিব আল হাসানের সামনে সুযোগ ছিল প্রতিরোধ গড়ার। তবে বাংলাদেশের অধিনায়ককে সেটা করতে দিলেন না সেই টপলিই। বাঁহাতি এই পেসারের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ৯ বলে ১ রান করা সাকিব।
ওকসের বলে চার মেরে রানের খাতা খুলেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি ওকসই। ডানহাতি এই পেসারের সামনের পায়ে ভর করে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা জস বাটলারকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করা মিরাজ এদিন আউট হয়েছেন ৮ রানে। বাংলাদেশের ব্যাটাররা আসা-যাওয়ার মিছিলে থাকলেও একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন লিটন।
এদিন শুরু থেকেই শট খেলায় বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ডানহাতি এই ওপেনার। ফলস্বরূপ পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির দেখাও। ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ৬ ম্যাচের আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন তিনি। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন তিনি। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন লিটন। তবে তিন অঙ্কে যেতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটার। ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার ডেলিভারিতে আগ বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ৭৬ রানের ইনিংস খেলে।
লিটন ফেরার পর হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন মুশফিকও। আদিল রশিদের বলে এক রান নিয়ে ৬১ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিক। টপলির বলে কাট করতে গিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে থাকা রশিদের হাতে ধরা পড়েছেন। আউট হয়েছেন ৫১ রানের ইনিংস খেলে। এদিকে হাফ সেঞ্চুরি পেতে পারতেন তাওহীদ হৃদয়। তবে লিয়াম লিভিংস্টোনের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিতে গিয়ে আউট হয়েছেন ৩৯ রান করে।

আরেক ব্যাটার শেখ মেহেদী বোল্ড হয়েছেন রশিদের গুগলিতে। শেষ দিকে মার্ক উডের গতিময় বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ১২ রান করা শরিফুল ইসলাম। ১৫ রান করা তাসকিন আহমেদ বোল্ড হয়েছেন স্যাম কারানের বলে। ইংল্যান্ডের হয়ে টপলি চারটি এবং ওকস নিয়েছেন দুটি উইকেট।
এর আগে ম্যাচের শুরুতে ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের পরীক্ষা নিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। তবে আউটের কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। এর মধ্যে একটি রিভিউও নষ্ট করেছে বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমানের করা শর্ট বলে ঘুরিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ডেভিড মালান। বল সোজা চলে গিয়েছিল উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে।
আম্পায়ার আহসান রাজা অবশ্য আউট দেননি। বাংলাদেশ দল অতিআত্মবিশ্বাসী হয়ে রিভিউ নেয়। তবে রিভিউতে দেখা যায় বল লেগেছে তার বাঁ কাঁধে। আল্ট্রা এজে নিশ্চিত হয়েছে সেটাই। ফলে সকাল সকাল রিভিউ হারাতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। পাওয়ার প্লেতে ইংল্যান্ড ৬১ রান তুললেও কোনো উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লের পরই ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিতে ৫৪ বল খেলেছেন বেয়ারস্টো। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের শততম ওয়ানডে খেলতে নেমেছেন বেয়ারস্টো। এই ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন তিনি। সাকিবের করা একটু দ্রুতগতির লেংথ বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ৫৯ বলে ৫২ রান করা বেয়ারস্টো। আর তাতেই প্রথম উইকেটের স্বাদ পায় টাইগাররা।
বেয়ারস্টো ফিরলেও জো রুটকে নিয়ে ইংল্যান্ডের রানের চাকা সচল রাখেন মালান। তিনি ৯১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন জো রুট। এই ব্যাটার তার হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৪৪ বলে। সেঞ্চুরির পরও আরও হাতখুলে খেলেছেন মালান। শেখ মেহেদীর করা টসড আপ ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন মালান।
এরপর জস বাটলার মাঠে নেমেই আক্রমণামত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। শেখ মেহেদীকে একটি ছক্কা ও একটি চার হাঁকান। শরিফুল ইসলামের করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের শর্ট বলে ইন সাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন ১০ বলে ২০ রান করা বাটলার। শরিফুল এরপর বোলিংয়ে এসে পরপর দুই বলে ফিরিয়েছেন রুট ও লিয়াম লিভিংস্টোনকে।
স্টাম্পে থাকা বল তুলে মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ হয়েছেন রুট। শরিফুলের করা নাকাল বল বুঝতেই পারেননি সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা এই ইংলিস ব্যাটার। তার ইনিংস শেষ হয়েছে ৬৮ বলে ৮২ রানে। তার ইনিংস জুড়ে ছিল ১টি ছক্কা ও ৬টি চারের মার।
পরের বলেই লিভিংস্টোনকে বোল্ড করেছেন এই টাইগার পেসার। শরিফুলের সিমে ফেলে ভেতরে ঢোকানো বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন লিভিংস্টোন। বলের লাইন মিস করে তিনি হয়ে গেছেন বোল্ড। মারকুটে ব্যাটার হ্যারি ব্রুকও এরপর বেশিদূর এগোতে পারেননি। শেখ মেহেদী অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে লিটন দাসের ক্যাচ হয়েছেন তিনি।
স্যাম কারানও হয়েছেন মেহেদীর শিকার। অফ স্টাম্পের বাইরের বল লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর ডাইভিং ক্যাচে আউট হয়েছেন তিনি। আদিল রশিদও বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে শান্তকে ক্যাচ দিয়েছেন। ক্রিস ওকস ফিরেছেন তাসকিনের শিকার হয়ে। এই টাইগার পেসারের করা অফ স্টাম্পে করা ফুল লেন্থের বলে মেহেদীর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ওকস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ইংল্যান্ড- ৩৬৩/৯ (৫০ ওভার) (মালান ১৪০, বেয়ারস্টো ৫২, জো রুট ৮২; শরিফুল ৩/৭৫, মেহেদী ৪/৭১ সাকিব ১/৫২)
বাংলাদেশ - ২২৭/১০ (৪৮.২ ওভার) (লিটন ৭৬, তানজিদ ১, শান্ত ০, সাকিব ১, মিরাজ ৮, মুশফিক ৫১, হৃদয় ৩৯; টপলি ৪/৪৩)