রেকর্ড ৩ সেঞ্চুরি ও ৭৫৪ রানের ম্যাচে জিতল সাউথ আফ্রিকা

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
এইডেন মার্করামের ব্যাটে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি, কুইন্টন ডি কক, রাসি ভ্যান ডার ডাসেন ও মার্করাম মিলে গড়লেন বিশ্বকাপে এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি রেকর্ড। শ্রীলঙ্কা জবাব দিতে না পারলেও সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডে। এদিন দুই দল মিলে করেছে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭৫৪ রান। এর আগে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া মিলে করেছিল ৭১৪ রান। এত এত সব রেকর্ডের ম্যাচে প্রোটিয়াদের কাছে পাত্তাই পায়নি শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিস, চারিথ আসালাঙ্কা ও দাসুন শানাকাদের হাফ সেঞ্চুরি কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। লঙ্কানদের ১০২ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল সাউথ আফ্রিকা।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ৪২৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। মার্কো জেনসেনের গুড লেংথ ডেলিভারিতে কাট করতে চেয়েছিলেন পাথুম নিশানকা। তবে সেটা ঠিকঠাক করতে পারেননি তিনি। ফলে বোল্ড হয়ে শূন্য রানে ফিরে যেতে হয় তরুণ এই ওপেনারকে। আউট হতে পারতেন কুশল মেন্ডিসও। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি।
জীবন পেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেন মেন্ডিস। জেনসেন-কাগিসো রাবাদাদের বিপক্ষে রীতিমতো তাণ্ডব চালাতে থাকেন তিনি। নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে সেসব শুধু দেখছিলেন কুশল পেরেরা। একের পর এক ছক্কা-চারে মাত্র ২৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মেন্ডিস। ডানহাতি এই ব্যাটারকে দেখে যেন নিজেও আক্রমণাত্বক হয়ে উঠতে চাইলেন। পেরেরাকে সেটি করতে দেননি জেনসেন। বাঁহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড আউট হয়ে ফিরতে হয় ৭ রান করা এই ব্যাটারকে।
দলের রান একশ পার হওয়ার পর আউট হয়েছেন মেন্ডিসও। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন তিনি। তবে রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা হেনরিখ ক্লাসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। শ্রীলঙ্কার স্বপ্ন ভঙ করে মেন্ডিস বিদায় নেন ৮টি ছক্কা ও চারটি চারে ৪২ বলে ৭৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে। সাদিরা সামারাবিক্রমা ভালো শুরু আভাস দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি।

কেশভ মহারাজের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে আউট হয়েছেন ২৩ রান করে। আরেক ব্যাটার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ফিরে গেছেন ১১ রানে। ১৫০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কাকে টানতে থাকেন চারিথ আসালাঙ্কা। যদিও বেশ কয়েকবারই জীবন পেয়েছেন তিনি। প্রোটিয়া ফিল্ডাররা সুযোগ লুফে নিতে না পারায় ৪৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আসালাঙ্কা। তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন দাসুন শানাকা।
মেন্ডিসের মতো সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে আসালাঙ্কাকেও। লুঙ্গি এনগিদির স্লোয়ার ডেলিভারিতে পয়েন্টের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে রেজা হেনড্রিকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭৯ রান করা এই ব্যাটার। শেষ দিকে ৫০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শানাকাও। পরবর্তীতে ফিরে গেছেন ৬২ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে। শেষ দিকে সেভাবে কেউ দাঁড়াতে না পারায় লঙ্কানরা থামে ৩২৬ রানে। প্রোটিয়াদের হয়ে জেরাল্ড কোয়েৎজে তিনটি এবং দুটি করে উইকেট নিয়েছেন জেনসন, রাবাদা এবং মহারাজ।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নামা সাউথ আফ্রিকার শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় তারা। দিলশান মাদুশঙ্কার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন দুই চারে ৮ রান টেম্বা বাভুমা। প্রোটিয়া অধিনায়ক ফেরার পর ডি কক এবং ভ্যান ডার ডাসেন মিলে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন।
পাওয়ার প্লেতে খুব বেশি দাপট দেখাতে না পারলেও উইকেট হারাননি তারা দুজন। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে থাকেন ডাসেন ও ডি কক। ৬১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া ডি কিক সেঞ্চুরি করেছেন ৮৩ বলে, মাথিশা পাথিরানার বলে টানা দুই চার মেরে। সেঞ্চুরি করার পরের বলেই অবশ্য উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডি সিলভাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৮৪ বলে ১০০ রান করা বাঁহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
ডি ককের বিদায়ে ভাঙে তাদের দুজনের মআঝে ২০৪ রানের জুটি। বাঁহাতি এই ওপেনার ফেরার পর ১০৩ বলে একশ ছুঁয়েছেন ভ্যান ডার ডাসেন। তিনিও আউট হয়েছেন সেঞ্চুরি পাওয়ার একটু পরই। দুনিথ ওয়াল্লালাগের বলে সামারাবিক্রমার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ১১০ বলে ১০৮ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটার। এরপরের সময়টা কেবলই মার্করামময়।
একেবারে শুরু থেকেই লঙ্কানদের বোলারদের উপর দাপট দেখাতে থাকেন তিনি। ৩৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া মার্করাম তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন মাত্র ৪৯ বলে। অর্থাৎ পরের পঞ্চাশ রান করতে মাত্র ১৫ বল খেলতে হয়েছে তাকে। এদিকে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙেছেন মার্করাম, ছাড়িয়ে গেছেন ৫০ বলে সেঞ্চুরি করা কেভিন ও;ব্রায়েনকে।
সেই সঙ্গে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো একই ইনিংসে তিন ব্যাটার সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েছেন। মার্করাম ১০৬ রান করে আউট হলেও শেষ দিকে ২১ বলে অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংস খেলে সাউথ আফ্রিকাকে ৪২৮ রানের পুঁজি এনে দেন ডেভিড মিলার। যা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রানের পুঁজি। যা ছাড়িয়ে গেছে ২০১৫ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করা অস্ট্রেলিয়ার ৪১৭ রানকে। এদিন শ্রীলঙ্কার হয়ে ৮৬ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছেন মাদুশঙ্কা।