বেদনার নীলচে আভা সরিয়ে সোনালি ট্রফির আশায় নিউজিল্যান্ড

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ক্যারিয়ারসেরা র্যাঙ্কিংয়ে ডাফি
৩ ঘন্টা আগে
একসময় চীনের হুয়াং হো নদীকে বলা হতো চীনের দুঃখ। বন্যায় চীনের মানুষের জীবনে অবর্ণনীয় দুঃখ–দুর্দশায় নামিয়ে দেয়ার জন্যই মূলত হুয়াং হোকে এমন নামে ডাকা হতো। হুয়াং হো যদি চীনের দুঃখ হয়, ফাইনাল তবে নিউজিল্যান্ডের দুঃখ। সুন্দরতম দেশের মানুষগুলোকে প্রায়শই বেদনার নীলচে আভায় বেরঙিন করে দিয়েছে ‘স্বার্থপর’ ক্রিকেট।
দলের অবস্থা বা শক্তি-সামর্থ্য যেমনই থাকুক না কেন বিশ্বকাপে বরাবরই তাক লাগিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। প্রথম ১০ বিশ্বকাপের ছয়টিতেই সেমিফাইনালে উঠেছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। প্রতিভার কমতি নেই তবুও সোনালি ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয় না তাদের। সেমিফাইনালের গেঁরো কেটেছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধীনে সেবার চেনা কন্ডিশনেই শিরোপার মিশনে নেমেছিল কিউইরা।
তাসমান সাগর পাড়ের দেশটি শেষ পর্যন্ত ফাইনালেও উঠেছিল। তবে শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। বরং পাশের দেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিষাদগারে নুইয়ে পড়তে হয়েছিল ম্যাককালামের দলকে। নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নের উত্থান থেমে থাকেনি সেখানেই। বছর চারেক পর বিশ্বকাপের পর্দা উঠেছিল ইংল্যান্ডে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত কিংবা ইংল্যান্ডের সঙ্গে খুব কম মানুষই নিউজিল্যান্ডকে সেরা চারে দেখেছিল।
তবুও হট ফেভারিটদের পেছনে ঠিকই বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল কিউইরা। ব্ল্যাক ক্যাপসদের প্রায় একাই ফাইনালে তুলেছিলেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। সেবারও অধরা সোনালি ট্রফি পাওয়া হয়নি তাদের। পুঁজিটা বড় ছিল না, তবুও বোলাররা ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন। একটা সময় এসে শিরোপার খুব কাছেও ছিল কিউইরা। এবার বুঝি নিউজিল্যান্ডের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে ক্রিকেট বিধাতা।
সবাই যখন এমন কথায় মত্ত তখন দৃশ্যপটে থেকে সব ওলট-পালট করে দেন বেন স্টোকস। রোমাঞ্চের পারদ উঁচিয়ে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। টাইয়েরও ম্যাচও টাই, বাউন্ডারির ‘বেয়ারেস্ট অব মারজিনে’ আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠলো ইংল্যান্ড। উল্টো দিকে বিষাদের রঙ ক্রমশই গাঢ় হতে থাকল, নিউজিল্যান্ডও শিরোপা রেখে দেশে ফিরল।

সেদিন হাসি মুখে উইলিয়ামসন সবকিছু সামলালেও আড়ালে যেন বিষাদের নীল রঙ তাকে ছেঁয়ে গিয়েছিল। টানা দুই ফাইনাল হারের পর আরও একবার বিশ্বকাপের মঞ্চে নিউজিল্যান্ড। সুযোগ থাকছে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠার, সোনালি ট্রফি ছুঁয়ে দেখার স্বাদ পূরণের। ভারতের মাটিতে খেলা হওয়ায় সুযোগটাও থাকছে তাদের সামনে। মাঠের ক্রিকেটে নিজেদের শক্তি-সামর্থের প্রতিফলন ঘটানোর বড় চ্যালেঞ্জ উইলিয়ামসনদের সামনে।
দীর্ঘ সময় পর ইংল্যান্ডের ওয়ানডে একাদশে রুট
৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
যেখানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড-
তাসমান সাগর পাড়ের দেশ হলেও ভারতের কন্ডিশন বেশ ভালোভাবেই চেনা নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) কল্যাণে ভারত যেন এখন ক্রিকেটারদের দ্বিতীয় ঘর। আইপিএল মাতিয়েছেন কিউইদের এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। উইলিয়ামসন থেকে শুরু করে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ডেভন কনওয়ে, মিচেল স্যান্টনার. লকি ফার্গুসনরা আইপিএলের নিয়মিত তারকা।
একটা সময় নতুন বলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং আক্রমণ সামলেছেন বোল্ট। বর্তমানে নতুন বলে বোল্টের দায়িত্ব রাজস্থান রয়্যালসের জার্সিতে। যারা আইপিএলের নিয়মিত দর্শক তারা বেশ ভালো করেই জানেন বোল্ট ভারতের উইকেটে কতটা ভয়ংকর। স্পিন ভালো খেলতে পারায় কিউইদের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র উইলিয়ামসন।
বড় দায়িত্ব সামলাতে পারেন কনওয়ে। চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে গত দুই মৌসুমে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। স্পিনার হিসেবে স্যান্টনারেও বেশ পরিচিত ভারতের কন্ডিশন। ইশ সোধি, রাচিন রবীন্দ্ররা যেন ব্যাটারদের কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে পারে সেটা অন্তত বলার অপেক্ষা রাখে না।
দূর্বলতা-
টপ অর্ডারে টম লাথাম, কনওয়েরা মিলে প্রতিপক্ষকে সামাল দিতে পারেন অনায়াসে। এবারের আসরেও তিনে দেখা যেতে পারে উইলিয়ামসনকে। চোটের কারণে লম্বা সময়ই ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে না পারায় বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলেনি তার। ভারতের কন্ডিশনে উইলিয়ামসনের ব্যাটে রানের দেখা না মিললে বিপাকে পড়তে হতে পারে কিউইদের। পেস বোলিংয়ে খানিকটা বেগ পোহাতে হতে পারে তাদের।
যাদের উপর নজর থাকবে-
বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বোল্ট। আইপিএলে ৮৮ ম্যাচ খেলা বাঁহাতি এই পেসার ২৬.৫৪ গড়ে নিয়েছেন ১০৫ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বোল্টের দাপটটা কম নয়। ব্যাটিংয়ে ভরসা যোগাতে পারে আইপিএলের সবশেষ আসরে কনওয়ের ছন্দ। চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে পুরো মৌসুমে ১৫ ম্যাচ খেলে ৫১.৬৯ গড়ে করেছেন ৬৭২ রান।
নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ দল: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টম লাথাম (সহ-অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ড্যারিল মিচেল, ডেভন কনওয়ে, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, রাচিন রবীন্দ্র, উইল ইয়াং, গ্লেন ফিলিপস, লকি ফার্গুসন, মার্ক চ্যাপম্যান, জিমি নিশাম, ম্যাট হ্যানরি।