বিশ্বকাপে ইতিহাস বদলাতে পারবে বাংলাদেশ?
.jpg)
ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
দীর্ঘ সময় পর ইংল্যান্ডের ওয়ানডে একাদশে রুট
৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
বিশ্বকাপ সুপার লিগে দুই নম্বরে থেকে এই বিশ্ব আসরে খেলার সুযোগ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। ২০২০-২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে ৩০টি ওয়ানডে ম্যাচ। এর মধ্যে ২১ ম্যাচেই জয় পেয়েছে টাইগাররা। বিশ্বকাপের আগে অবশ্য এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলতে না পারা আক্ষেপের জন্ম দিয়েছে। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে হার কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বাংলাদেশকে।
অবশ্য সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে পা রেখেছে। বিশ্বকাপের আগে হুট করেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন তামিম ইকবাল। এমনকি বিশ্বকাপ দলেও নেই তিনি। ফলে অভিজ্ঞ এই ব্যাটার না থাকায় টপ অর্ডারে কিছুটা শূন্যতা থাকবেই। তামিমের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম।
এরই মধ্যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই হেসেছে তানজিদের ব্যাট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৮ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেছেন, এরপর শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। ফলে প্রস্তুতি ম্যাচের আত্মবিশ্বাস মূল ম্যাচে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ দলের জন্য বড় প্রাপ্তি হবে।
টপ অর্ডারে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত চলতি বছর দুর্দান্ত ফর্মে আছে। এই ব্যাটারের ফর্ম নিয়ে একটু প্রশান্তি পেতেই পারে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ফর্মে আছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজও। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ের কারণে এবারের বিশ্বকাপে তাকে নিয়মিত টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডারে খেলাতে পারে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বল হাতেও দলের জন্য অবদান রাখতে পারেন তিনি। বিশেষ করে ভারতের কন্ডিশনে বাংলাদেশ দলের এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন তিনিই।
দলের প্রাণভোমরা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। গত বিশ্বকাপের আসরে সাকিব যা করেছেন তা বাংলাদেশের ক্রিকেট রূপকথার অংশ হয়ে গেছে। বিশ্বকাপের এক আসরে ৬০৬ রানের পাশাপাশি ১১ উইকেট নেয়ার কীর্তি নেই আর কারো। সাকিব এবারের বিশ্বকাপেও সেই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়। যদিও প্রস্তুতি ম্যাচের আগে অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন তিনি। অবশ্য প্রথম ম্যাচে খেলার জন্য পূর্ণ ফিট আছেন তিনি।
বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ও লোয়ার মিডল অর্ডারে আছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার। মুশফিক ৫টি ও মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে ৫টি বিশ্বকাপে খেলেছেন। বয়সের হিসেবে এটাই তাদের শেষ বিশ্বকাপ। ফলে নিজেদের শেষ বিশ্বকাপকে স্বপ্নের মতো রাঙাতে চাইবেন তারা।

বাংলাদেশের আরেকটি শক্তির জায়গা পেসারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। গত ২ বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করছেন তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম। তবে চোটের কারণে এবারের বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না ইবাদতের। তার বিকল্প হিসেবে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
নাহিদ রানার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট শান্ত
১৭ মার্চ ২৫
বাংলাদেশের বিশ্বকাপের ইতিহাস-
বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে সর্বপ্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপের খেলার সুযোগ পায়। সেই আসরেই পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়ে চমকে দিয়েছিল টাইগাররা। এরপর প্রতিটি বিশ্বকাপেই নিয়মিত অংশ নিয়েছে টাইগাররা। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে দিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল। ২০১১ বিশ্বকাপ অবশ্য বাংলাদেশের জন্য দুঃস্মৃতি হয়ে থাকবে।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অল আউট হওয়ার স্মৃতি এখনও হয়তো তাড়া করে বাংলাদেশকে। ২০১৫ বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল তারা। এরপর ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সাউথ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানকে হারিয়েও সেমিফাইনালে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা দল নিয়ে সেরা পারফরম্যান্সটাই করতে চাইবে বাংলাদেশ।
চোখ থাকবে যাদের ওপর-
মেহেদী হাসান মিরাজ-
মিরাজ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ ম্যাচেই খেলেছেন লোয়ার অর্ডারে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫১ ম্যাচে তিনি ব্যাট করেছেন ৭-৯ নম্বরে। এর মধ্যে ১১ বার ৭ নম্বরে এবং ৩১ বার আট নম্বরে খেলেছেন মিরাজ। ৭বার তার ব্যাটিং করতে হয়েছে ৯ নম্বরে। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে হুট করেই তা??ে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে খেলানো হয়। ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সও করেছিলেন। এরপর অনেকবারই বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিং করেছেন তিনি। তবে গত কয়েক বছরে নিজের ব্যাটিংয়ের দক্ষতা ভিন্ন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তিনি। এ বছর ১৫ ম্যাচে ২৪.১৬ গড়ে ২৯০ রান করেছেন মিরাজ। স্ট্রাইক রেট ৭৫.৭১। এমন পারফরম্যান্সের পর বিশ্বকাপেও তাকে নিয়ে প্রত্যাশা বেড়ে গেছে বাংলাদেশের ভক্তদের।
নাজমুল হোসেন শান্ত-
২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন শান্ত। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই রান করেছেন বাংলাদেশের এই টপ অর্ডার ব্যাটার। এরপর ১৭টি ওয়ানডে খেলছেন শান্ত। এর মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন এই ব্যাটার। ব্যাটিং গড় ৪০ এর উপরে। এমন পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশের টপ অর্ডারের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপেও তার প্রতি প্রত্যাশা তুঙ্গে থাকবে টিম ম্যানেজমেন্টের।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল:
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত (সহ অধিনায়ক), মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহীদ হৃদয়, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, নাসুম আহমেদ, শেখ মেহেদী, তানজিম হাসান সাকিব, তানজিদ হাসান তামিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।