হাসানের ইয়র্কার, মুশফিকের রিভার্স স্কুপ ও আনঅর্থডক্স ব্যাটিং
.jpg)
ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
তামিমকে দেখতে হাসপাতালে মুশফিক-মিরাজরা
২৪ মার্চ ২৫
চান্দিকা হাথুরুসিংহের চাওয়াতে ‘কৌশলগত’ কারণে খানিকটা আড়ালে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। তবে কয়েকদিনের ‘গোপন’ অনুশীলনের ইতি ঘটেছে। আবারও উন্মুক্ত অনুশীলনে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ, তাওহীদ হৃদয়রা। এশিয়া কাপকে সামনে রেখে শুরু হওয়া প্রস্তুতি ক্যাম্প স্বাভাবিক করে দেয়া হয়েছে গণমাধ্যমের জন্য। ছবি কিংবা ভিডিও নেয়াতে আপাতত আর কোনো বাঁধা নেই।
সকাল সকাল তাই তো মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয় গণমাধ্যম কর্মীদের আনাগোনা। সময় যত বাড়তে থাকে ক্যামেরার লেন্সের প্রকোপও ততই বাড়তে থাকে। সকাল ১০ টা নাগাদ অনুশীলন শুরু হলেও প্রথম ঘণ্টায় বিশেষ কিছু করতে দেখা যায়নি ক্রিকেটারদের। রানিং, ফুটবল নিয়ে গা গরম করাই ছিল প্রথম ঘণ্টার অনুশীলন।
ঘণ্টাখানেক বাদে সবাই নিজেদের আলাদাভাবে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনুশীলন করলেও ভিন্ন কিছু চোখে পড়ে হাসান মাহমুদ ও মুশফিকুর রহিমের অনুশীলনে। শুধু মুশফিক নন আফিফ হোসেন ধ্রুব, শামীম হোসেন পাটোয়ারি এবং হৃদয়রাও এক পর্যায়ে মুশফিকের পথে হেঁটেছেন।
মিরপুরের মূল মাঠে নেট টাঙিয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত ক্রিকেটাররা। পাশাপাশি নেটে কয়েকজন নেট বোলার ও জাতীয় দলের পেসারদের নিয়ে ব্যাটিং করছেন হৃদয়, মুশফিক, শামীম ও আফিফ। ওভার প্রতি ব্যাটিং প্রান্ত বদল করে একেকজন ব্যাটিং করছেন স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু তাদের ছাপিয়ে চোখ আটকে যায় হাসানের বোলিংয়ে।

নতুন বলের সঙ্গে পুরনো বলেও বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের কাণ্ডারি হতে হয় তাকে। বিশেষ করে ডেথ ওভারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয় তাকে। তাতে করে পারফেক্ট ইয়র্কার করতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একা একা সেটাই হয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন হাসান। তবে এই একক অনুশীলনে ছিল ভিন্নতা। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের হোবার্ট পর্ব থেকে এক টায়ারকে ঘিরে নিয়মিতই অনুশীলন করতে দেখা যায় তাকে।
হাসানের পাশাপাশি খালেদকেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিচ্ছে বাংলাদেশ
১১ ফেব্রুয়ারি ২৫
প্রায়ই এই ধাচে ইয়র্কার অনুশীলন করেন হাসান। তবে এই পেসারের অনুশীলনকালে পাশের নেটে থাকা মুশফিক বারবার তাকাচ্ছিলেন। ব্যাটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে হাসানের সঙ্গে কয়েকবার কথাও বলেন তিনি। প্রায় ১০মিনিটের মতো টায়ার টার্গেট করে ইয়র্কার অনুশীলন করেন হাসান। এরপর হাসানের সঙ্গে যোগ দেন মুশফিক।
ব্যাটিং প্রান্তে গিয়ে হাসানের ইয়র্কার সামলানোর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেন তিনি। তবে তখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না কোন ধরণের শট খেলবেন তিনি। এক পর্যায়ে হাসানের ছোঁড়া ৫টি বল খেলেন মুশিফক। আর প্রত্যেকটি স্টাম্প বরাবর ইয়োর্কার লেন্থে পড়া বল রিভার্স স্কুপ খেলেন দেশের এই নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার।
৫ বলের মধ্যে ৩টি ব্যাটে-বলে লাগে মুশফিকের। থার্ড ম্যান ও ফাইন লেগের ফাঁকা জায়গা দিয়ে প্রতিটি বল বের করার চেষ্টা করেন তিনি। মুশফিককে ফাঁদে ফেলতে সে সময় থার্ড ম্যানে একজন ফিল্ডারও রাখেন হাসান। শেষ বলে দারুণ এক ইয়র্কার ছুঁড়েন ডানহাতি এই পেসার। মুশফিক সেটায় রিভার্স স্কুপ খেলার চেষ্টা করলেও ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্প ছুঁয়ে চলে যায় পেছনে। হালকা উদযাপন করতেও দেখা যায় হাসানকে।
বোঝাই যাচ্ছিল বলটি ব্যাটের কানায় লাগলেও স্টাম্পের কানায় হিট করেছে। মুশফিক-হাসানের এই ভিন্ন ঘরনার অনুশীলনই পরিষ্কার ধারণা দিচ্ছে বিগত কয়েকদিনের রুদ্ধদ্বার অনুশীলনে কোন ধরণের অনুশীলনে বাড়তি মনোযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। গণমাধ্যমকে ১৫মিনিটের বেশি অনুশীলন দেখতে না দিলেও রবিবারের অনুশীলন অনেকটাই স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে আসন্ন এশিয়া কাপের জন্য একটু ভিন্ন কিছুই চেষ্টা করছে পুরো দল।
এই ধারণা আরও একটু পরিষ্কার হয়েছে আফিফ, শামীম ও হৃদয়ের ব্যাটিংয়ে। এই তিন তরুণকে বেশ কয়েকটি আনঅর্থডক্স শট খেলতে দেখা গিয়েছে অনুশীলনে। আফিফ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিংটাই করেছেন। তবে শামীম যে স্লগ ওভারের অনুশীলনে বাড়তি মনোযোগ দিয়েছে তা বারবার ধারণা পাওয়া গিয়েছে তার উইকেটের পেছনে শট খেলা দেখে।
এছাড়া স্পিনের বিপক্ষে হৃদয় সুইপ ও রিভার্স সুইপে রান বের করার বেশি মনযোগী ছিলেন। এই ৫ ক্রিকেটার ছাড়াও এদিন বাকিরাও বিভিন্ন ধরণের অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের ঝালাই করে নিয়েছেন। বেলা ১২টা নাগাদ শ্যাডো কিপিংয়ে নিজেকে ঝালাই করে নেন মুশফিক। সে সময়ে মূল নেটে শেখ মাহেদি, নাসুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলামরা ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন।
মুশফিক যেহেতু ছয় নম্বরে ব্যাটিং করেন তাই তো শেষ দিকে ইয়র্কার সামলাতে হবে তাকে। শামীমও থাকবেন একই তালিকাতে। এদিকে হৃদয়ের কাজটা মাঝের ওভারে স্পিনারদের সামলানো। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ যে ভিন্ন ঘরানার অনুশীলন করছে সেটা অনুমান করাই যাচ্ছে। এখন মাঠের ক্রিকেটে কার্যকর করাটাই হবে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ।