আমি টেস্ট ক্রিকেটার এটা আপনাদের বানানো: তাইজুল

ছবি: সংগ্রহীত

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
‘বরিশালের বেঞ্চ দিয়ে অন্য দলের চেয়ে ভালো দল বানানো যাবে’
৩১ জানুয়ারি ২৫
লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাইজুল ইসলাম। পরিসংখ্যান নিজের পক্ষে থাকলেও সাকিব আল হাসানের আড়ালেই থাকেন বেশিরভাগ সময়। যদিও পারফরম্যান্সে বরাবরই উজ্জ্বল বাঁহাতি এই স্পিনার। তিন সংস্করণে খেলতে চাইলেও তাইজুলের গায়ে লেগে আছে টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা। সেটা যদিও কমতে শুরু করেছে ২০২২ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে।
নিশ্চিতভাবেই ক্যারিবীয় সেই সফরকে আজীবন মনে রাখবেন তাইজুল। সেবারের ৫ উইকেট তাকে রেখেছে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে স্কোয়াডে থাকার লড়াইয়ে। গায়ে টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা লাগলেও সেসবে পাত্তা দেন না বাঁহাতি এই স্পিনার। একান্ত সাক্ষাৎকারে তাইজুলের সব ভাবনার কথা শুনেছেন আবিদ মোহাম্মদ।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: ৫৪৬ রানে টেস্ট জয়ের পর বিরতিতে যাচ্ছেন। ঈদের পর আবারও খেলা, টেস্টের জয়টা কি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে?
তাইজুল: অবশ্যই এটা আনন্দের বিষয় যে টেস্টে আমরা খুব ভালো ফলাফল করেছি। এটা দলের জন্য খুব ভালো হয়েছে। সবাই অনেক আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। এখন বিরতির পর আমরা যখন আবারও সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলতে নামব। টেস্ট সিরিজের আত্মবিশ্বাসটা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে অনেক কাজে আসবে বলে আমি মনে করি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশের বেশিরভাগ টেস্ট জয়ে স্পিনাররা অবদান রাখে। এখন পেসাররাও অবদান রাখছে। সবশেষ আফগানিস্তান ম্যাচে সেটা প্রতীয়মান। একজন স্পিনার হয়ে পেসারদের এমন উত্থানটা কিভাবে দেখছেন?
তাইজুল: শুধু একটা ম্যাচ দেখে তো বলে দেয়া ঠিক হবে না। পেসাররা যে শুধু একটা ম্যাচেই ভালো করেছে তা নয়। নিউজিল্যান্ডে যে টেস্টে জয় পেলাম সেখানে পেসারদের অনেক বড় অবদান ছিল। উইকেটটা কিন্তু পুরোপুরি পেসারদের পক্ষে ছিল না। এরপর থেকে কিন্তু অনেক ম্যাচেই পেসাররা ভালো করেছে।
একটা ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে এখন পেসাররা অনেক ভালো করছে। যখন বড় দলের বিপক্ষে খেলতে যাব এটা অনেক কাজে আসবে। একটা ম্যাচের শুরুতেই যদি পেসাররা ৩-৪ উইকেট নিয়ে নেয়, তখন স্পিনারদের জন্য কাজটা সহজ হয়। এই ধারাবাহিকতা থাকলে সামনে আরও ভালো করবে দল।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার অভিষেক ২০১৪ সালে। অথচ ১০ বছরের ক্যারিয়ারে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির ম্যাচ সংখ্যা একবারে সীমিত। তাইজুল ইসলামের পরিচয় কি শুধু টেস্ট ক্রিকেটার?
তাইজুল: আমার কাছে এটা মনে হয় না। আপনার যখন স্কিল ভালো হবে তখন আপনি সব ফরম্যাটেই খেলতে পারবেন। আমার কাছে মনে হয় এই খেলোয়াড় লাল বলের এই খেলোয়াড় সাদা বলের এটা আপনাদের (মিডিয়া) বানানো। এখন জাকির কি সাদা বলে খেলতে পারে না?
টেস্টে ভালো খেলছে কিন্তু বিপিএলেও ভালো খেলেছে। আমি মনে করি যে একটা খেলোয়াড়ের স্কিল ভালো হয় সে সব ধরণের ক্রিকেট খেলতে পারবে। আমি বলছি যে এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বানানো। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়েরই ক্ষমতা আছে সব ফরম্যাট খেলার।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাকি ফরম্যাটগুলো নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

তাইজুল: আমি কখনও বলি নি যে আমি শুধু লাল বলের খেলোয়াড়, বা আমি এটা ভাবিও না। এটা তো বোর্ড থেকেও বলা হয়নি যে তুমি শুধু লাল বলেই খেলবে। আমি তো বিপিএল বা ডিপিএল সবই খেলি। এই প্রশ্নটা এসেছে মিডিয়া থেকে, এটা মিডিয়ারই সৃষ্টি।
কলকাতার নতুন সহকারী কোচ গিবসন
৮ মার্চ ২৫
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি বললেন সাদা বলের ক্রিকেটার এটা মিডিয়ার বানানো। তার মানে রঙিন পোশাকে আপনার কম সুযোগ পাওয়া মিডিয়ার দায়?
তাইজুল: এমন কিছু ভাবি না। এটাও ভাবি না যে মিডিয়ার কারণে হয়েছে। এটা আসলে কপালের ব্যাপার। মিডিয়া যতই আমাকে টেস্ট খেলোয়াড় বানাক আল্লাহ'র রহমতে আমি আসতে আসতে কামব্যাক করছি। যখন পারব না এটা আমার ব্যর্থতা, এটা মিডিয়ার ওপর দোষ দেব না। এমনও না যে মিডিয়া আমাকে দমিয়ে রাখতে পারবে এটা আমার মনে হয় না।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: মিডিয়ার প্রতি কোন বার্তা আছে কি?
তাইজুল: মিডিয়ার প্রতি বার্তা তেমন নেই। আমার কাছে মনে হয় আগে সবার উচিত দেখা যে কার কি ক্ষমতা আছে। মিডিয়া তো মিডিয়ার কাজ করবে কিন্তু একটা মানুষের ৫-১০টা ম্যাচ বা এক বছর খেলা দেখে কোন কিছু না ভাবাই ভালো।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি একবার বলেছিলেন, ক্যারিয়ার শেষে নামের পাশে ৫০০-৬০০ উইকেট দেখতে চান। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তা কতখানি সম্ভব আপনার কাছে?
তাইজুল: আপনারা একটা জিনিষ কতটুকু জানেন কি জানেন না, এটা আমি নিশ্চিত না। টেস্টে কিন্তু বোলিংটা শুরু হয় ৩০ বছর থেকেই। এই সময়েই বল জায়গায় ফেলতে পারবেন, যখন আপনি আরও ম্যাচিউর হবেন। অভিজ্ঞতা অনেক বড় ব্যাপার।
এতোদিন তো শিখেছি এখন দলকে দেয়ার সময় এসেছে। এরকম কোন পরিস্থিতি আসে নাই যে এখন ৩০ বছর হলেই দল থেকে বাদ পড়ে যাব। বাংলাদেশে এই দিন আর নেই। আমার কাছে মনে হয় এখন সুযোগ আছে ৩৮-৪০ বছর পর্যন্ত খেলার।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: অনেকের ক্ষেত্রে আমরা ভিন্ন কিছু দেখেছি। বাংলাদেশে এটা (৩৮-৪০ বছর পর্যন্ত খেলা) সম্ভব বলে মনে হয়?
তাইজুল: কার কি দেখেছেন কার কি দেখেননি এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা মনে করি, দেশের মানুষ ক্রিকেটটাকে আবেগের সাথে দেখে। তারা যেটুকু বোঝে এটা তাদের ব্যাপার। আমাদের চিন্তা-ভাবনা আলাদা। বার্তা একটাই থাকবে অভিজ্ঞতা অনেক বড় একটা বিষয়। এখন যে পেশায় আপনি আছেন, ১০বছর পর কিন্তু এক থাকবেন না। অভিজ্ঞতা খুব প্রয়োজন।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার পরিসংখ্যান বেশ ভারী কিন্তু ম্যাচে সাকিব আল হাসান থাকলে আপনি আড়ালে পড়ে যান....
তাইজুল: আমিও বুঝে পাই না, আপনারাও এই প্রশ্নগুলো বার বার কেন করেন। সাকিব ভাইকে ছাড়া তো আমি অনেক টেস্ট খেলেছি, যখনই খেলেছি তখনও শুনেছি। প্রতিটা খেলোয়াড়ের একেকটা ভূমিকা থাকে, আমার মনে হয় পরিস্থিতিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রশ্নের কোন যৌক্তিকতা নেই।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আচ্ছা, এখন তো বোলারদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ। বোলিংয়ে নতুন কিছু চেষ্টা করছেন?
তাইজুল: এই প্রশ্নগুলো আমি অনেক শুনি। প্রতিদিন তো নতুন কোন ভ্যারিয়েশন বের হবে না। তাহলে তো ব্যাটাররা খেলতেই পারত না। যেটুকু আছে ততটুকু ভালোভাবে পরিচালনা ও মাঠে কার্যকর করা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় এটা নিয়েই কাজ করি, কতটুকু দিলাম মাঠে এটাই সফলতা বয়ে আনবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আর ব্যাটিংটা নিয়ে?
তাইজুল: অবশ্যই কাজ করা হচ্ছে। আমাদের যে ক্ষমতা আছে এর থেকে যদি দলের জন্য আরও একটু কিছু দেয়া যায়... এটা দলের জন্য ভালো। যারা লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করেন তারা যদি ১০ রানের জায়গায় ২০-৩০ রান করতে পারি তাহলে লাভবান কিন্তু দেশই হবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: ড্যানিয়েল ভেটরি, রঙ্গনা হেরাথসহ আরও অনেক স্পিন বোলিংয়ের অধীনে কাজ করেছেন। আপনার ক্যারিয়ারে কার প্রভাবটা বেশি?
তাইজুল: সবারই আলাদা আলাদা একটা প্রভাব থাকে। সবাই একেকভাবে ধরিয়ে দেয়। কখন কি করলে ভালো কি করতে হবে। আমি বলব না কে ভালো ছিল বা কে খারাপ ছিল। সবাই কিন্তু জাতীয় দলের লিজেন্ড ছিলেন। তাদের কিন্তু অনেক মেধা ছিল যারা তাইজুলকে এই পর্যায়ে আসতে সাহায্য করেছে। সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু পেয়েছি এবং সেটা রাখার চেষ্টা করেছি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আচ্ছা, চান্দিকা হাথুরুসিংহ আবার ফিরে এসেছে। আপনি এর আগেও তার সঙ্গে কাজ করেছেন, এবার কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ছে?
তাইজুল: এখানে পার্থক্য তেমন কিছু দেখিনি। উনার অধীনে খেলেছি বা খেলছি আমি কোন কিছু আলাদা দেখছি না। আমার চোখে সে সব সময় একই রকম ছিল ও আছে। একটা ব্যাপার হচ্ছে, সে আমাদের ব্যাপারে জানে, বুঝে যে আমরা কি করতে চাই। কি করলে আমরা আরও ভালো করতে পারব এটা বেশ ভালোভাবে বুঝে। যেহেতু ও আগে থেকেই আমাদের সাথে ছিল, এখন আরও ভালোভাবে বোঝে। তাই বড় কোন পার্থক্য দেখছি না আসলে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: সবশেষ এক বছরে ওয়ানডেতে অনেকগুলো সুযোগ পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে আপনি কিংবা নাসুমের মাঝে যেকোনো একজন বিশ্বকাপে যাবেন। নিজেকে দেখছেন?
তাইজুল: ক্রিকেট খেলোয়াড় হয়েছি বা ছোট থেকে এটা নিয়ে চর্চা করি। সবকিছুর প্রতি এটা টান থাকে, যদি বিশ্বকাপে থাকি তাহলে তো ভালো লাগবেই। সবারই ইচ্ছা থাকে এটা। শেষ পর্যন্ত এটা তো আমি বলতে পারব না, সিদ্ধান্তটা নির্বাচকদের। সিদ্ধান্ত তো আমি নিতে পারি না, এটা একটা দেশ। আমি দেশের নাগরিক তো একা না, তাই সিদ্ধান্ত দেয়ার আমি একার কেউ না।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: শেষ প্রশ্ন, ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়ে বিসিবি কাজ করতে শুরু করেছে। এটা ক্রিকেটারদের কতটা উপকৃত করবে?
তাইজুল: আপনি জীবনে যাই করতে যান, আপনার মাথা ঠিক থাকতে হবে আগে। তা ছাড়া সব কাজেই বাধা আসবে। প্রতিটা মানুষের মাইন্ড কিন্তু এক রকম হবে না। কোথায় কে ভালো এটা বের করতে হবে। এটা শুধু খেলোয়াড় না এটা সবার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। সব তো একদিনে ঠিক হয় না, আসতে আসতে এগোতে হয়।