করোনা ভীতি, করোনাকে আলিঙ্গন

ছবি: ছবিঃ ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ||
আপনারা তো অনেক ঝুঁকিতে, যেভাবে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন বক্তার নাম নাজমুল হাসান পাপন। শনিবার (১৫ আগস্ট) শ্রাবণের মেঘাচ্ছন্ন দুপুরে মিরপুর স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছিলেন বিসিবি সভাপতি। তখন সংবাদ সম্মেলনের জন্য অপেক্ষমান অবস্থায় অনেকটা ঘেষাঘেষি করে দাঁড়িয়েছিলেন সাংবাদিকরা। তবে সবার মুখেই মাস্ক ছিল।
সাংবাদিকদের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই এমন মন্তব্য করেন বিসিবি সভাপতি। একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের জন্য তৎক্ষনাৎ বানানো জায়গায় বোর্ড সভাপতিও দাঁড়িয়েছিলেন কয়েকজন সঙ্গী সমেত। বিসিবি পরিচালক জালাল ইউনুস, মাহবুব আনাম, খালেদ মাহমুদ সুজন, আকরাম খানরা সভাপতির পাশেই ছিলেন তখন। খুব বেশি দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে।
তবে প্রায় ১৪৮ দিন পর স্টেডিয়ামে আসা বিসিবি সভাপতি পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা নিয়েই এসেছিলেন (সর্বশেষ এসেছিলেন গত ১৯ মার্চ)। মুখে মাস্ক, চোখে গ্লাস, হাতে গ্লাভস ছিল। সংবাদ সম্মেলনের জন্য বিসিবি কার্যালয়ের নিচতলায় মূল ফটকের সামনে জায়গা ঠিক করা হয়। বোর্ড সভাপতির জন্য দাঁড়ানোর জায়গা বেরিক্যাড দেয়া হয়। তাতে দূরত্ব বজায় রাখা গেছে। সাংবাদিকরা দূর থেকে প্রশ্ন করেছেন।
সামগ্রিক পরিবেশ বলছে, করোনার জন্য সম্ভাব্য সব সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এমনকি সংবাদ সম্মেলন শেষে বিসিবি সভাপতির নিজস্ব গাড়িতে চড়তে যাওয়ার রাস্তায় কাউকে আসতে দেয়া হয়নি। উৎসুক সবাইকে আটকে রেখে রাস্তা ফাঁকা রাখা হয়েছে। হুড়োহুড়ি ছাড়াই গাড়িতে উঠে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেছেন বোর্ড সভাপতি।
করোনাকালের বিবেচনায় এটাই স্বাস্থ্যসম্মত ও উত্তম, কার্যকর পদক্ষেপ। আবশ্যক করণীয় বলা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান পাপন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, করোনার প্রকোপ না কমলে বা ভ্যাকসিন না আসলে ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই।

জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য এটা বড় ধরনের ধাক্কাই বটে। যাদের রুটি-রুজির অবলম্বন ঘরোয়া ক্রিকেটের টুর্নামেন্টগুলো। স্থগিত হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে না। অনিশ্চয়তার মেঘ জমেছে এবার জাতীয় লিগ, বিপিএলের উপরও। প্রান্তিক ক্রিকেটারদের জন্য এটাই দুর্ভাবনার কারণ।
করোনার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে জাতীয় দলকে পাঠানো হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। যাওয়ার আগে মুমিনুলদের জন্য গৃহীত সব পরিকল্পনায় থাকছে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও করোনারোধী পদক্ষেপ।
এ তো গেল করোনা ভীতি, সতর্কতার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু শনিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে সকাল থেকে দুপুর অব্দি করোনাকে আলিঙ্গনের দৃশ্যও মঞ্চায়িত হয়েছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও ১৫ আগস্টের সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মাহফিল, কোরআন তেলওয়াত, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে বিসিবি।
বিসিবির কর্মকর্তা, কর্মচারীরা হাজির ছিলেন এদিন। তদারকি করেছেন সার্বিক কর্মকান্ডের। একাডেমি ভবনের পাশে খাবার রান্না হয়েছে। একাডেমি মাঠে তৈরি হয়েছে ছাউনি। যেখান থেকে সবাইকে খাবার বিতরণ করা হয়।
বিসিবি সভাপতি স্টেডিয়ামে আসেন দেড়টার দিকে। তার আগেই স্টেডিয়ামে লোকের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ক্রিকেটাঙ্গনের চেয়ে বাইরের লোকই বেশি। স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে এখানে-ওখানে জটলা, মানুষের অবস্থান। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে করোনার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি, দূরত্ব বজায় রাখার বালাই ছিল না।
মানুষ এদিক যাচ্ছে, ওদিক যাচ্ছে। কেউ এখানে দাঁড়িয়ে, কেউ ওখানে দাঁড়িয়ে। মুখে মাস্ক না থাকলে করোনার অস্তিত্ব এখানে আলাদা করা সম্ভব হতো না। কেউ কেউ আবার ফটোসেশনেও ব্যস্ত ছিলেন। সেলফি শিকারীরাও ছিলেন।
অথচ করোনার ছড়ানোর ভীতির কারণে সংবাদকর্মীদের অবস্থান পুরোপুরি আলাদা করা হয়েছে। মূল গেইট তথা দুই নম্বর গেইট দিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ সংরক্ষিত করা আছে। সেটাও ক্রিকেটারদের অনুশীলন শুরুর পর থেকেই। যা শনিবারও বহাল ছিল।
এত মানুষের ভিড় দেখে সংবাদকর্মীদের কেউ একজন খেদের সুরে বলে উঠলেন, ‘শুধু সাংবাদিকরাই করোনা ছড়াই। আজ এত লোক বিসিবিতে কি করে?’
অবশ্য পরে সংবাদ সম্মেলনের জন্য বিসিবি কার্যালয়ের সামনে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় উপস্থিত সাংবাদিকদের।
একাডেমি মাঠে মানুষ দাঁড়িয়ে। এতিম খানার ছাত্ররা একপাশে, বিসিবির স্বল্প আয়ের কর্মচারীরাও ছিল লাইনে। আরও মানুষের লাইন ছিল। ছাউনির সামনে বিসিবির কর্মী, বাইরের লোক মিলে অনেক মানুষ। বিসিবি সভাপতি আসার পর স্লোগান তুলেও অনেক লোক প্রবেশ করেন একাডেমি মাঠে। বিশেষ মোনাজাতের পর এতিমদের হাতে খাবার তুলে দেয়ার পর্ব শুরু হয়। তারপর বিসিবি কার্যালয়ে চলে আসেন নাজমুল হাসান পাপন ও বিসিবির পরিচালকরা।
তাদের সঙ্গে ছুঁটেছিল অনেক আগুন্তক। হুড়মুড়িয়ে তাদের দেয়া দৌড়টা লম্বা হয়নি। কারণ বিসিবি সভাপতির প্রবেশের পর দুই নম্বর গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়।
তবে একাডেমি মাঠ, একাডেমি ভবনের সামনে লোকের অবস্থান ছিল অনেকক্ষণ। খাবার বিতরণ ও প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে তাদের কোলাহলের স্বর স্তীমিত হয়ে আসে।