গোসলখানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদতেন ইমাম

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
২০১৬-১৭ পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট কায়েদ-ই-আজম ট্রফির এক মৌসুমে ১১ ম্যাচে ৮৪৮ রান করেছিলেন ইমাম উল হক। তিনটি সেঞ্চুরি এবং তিনটি হাফ সেঞ্চুরির মধ্যে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও ছিল তাঁর। মূলত সেই মৌসুমের পারফরম্যান্সের সুবাদেই জাতীয় দলের রাডারে চলে আসেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ইমামের। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হওয়ার আগে থেকেই স্বজনপ্রীতির বিষয়ে কটুকথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। ইনজামামুল হকের ভাতিজা হওয়ার কারণে, সবাই ধরেই নেয় যে অনৈতিকভাবে দলে নেয়া হয়েছে এই ওপেনারকে। কারণ সে সময় প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বে ছিলেন দেশটির সাবেক এই অধিনায়ক।
অভিষেকের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে ফরম্যাটে দারুণ পারফর্ম করেছেন ইমাম। ৩৭ ওয়ানডে খেলে সেঞ্চুরি করেছেন ৭টি, ফিফটি রয়েছে ৬টি, প্রায় ৫৪ গড়ে তাঁর নামের পাশে রানসংখ্যা ১৭২৩। তবু এক-দুই ম্যাচ খারাপ খেললেই ইমামে শুনতে হতো স্বজনপ্রীতির কথা।

ক্যারিয়ারের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন ইমাম। তবে শুরুর দিকে এসব বিষয়ে খুবই মর্মাহত হতেন ২৪ বছর বয়সী এ ওপেনার। এমনকি পাকিস্তান দলে তার তেমন কোনো বন্ধুও ছিল না। তাই গোসলখানায় কান্না করতেন তিনি। সম্প্রতি ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
ইমাম বলেন, ‘যখন এসব (স্বজনপ্রীতির অভিযোগ) শুরু হয়, তখন আমাকে একাই খাবার খেতে হতো। অথচ সেটা আমার প্রথম সফর ছিল এবং প্রথম সফরের চাপ কতটা হয় তা তো বুঝতেই পারছেন। আমি যখনই মোবাইল ফোন হাতে নিতাম, দেখতাম সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ আমাকে ট্যাগ করে নানান কিছু বলছে। আমি খুবই মর্মাহত ছিলাম এবং কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’
‘আমি পরিবারের মানুষের সঙ্গেও কথা বলা বন্ধ করে দেই। আমি এমন সমস্যায় আছি তা জানিয়ে তাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছিলাম না। আমার দুইটি ফোনই বন্ধ করে ম্যানেজারের কাছে জমা দিয়ে দেই এবং বলি যে, এগুলো আর নিতে পারছি না। আমার থেকে দূরে রাখুন।’ আরও যোগ করেন ইমাম।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ একাদশে জায়গা হয়নি ইমামের। যে কারণে নিজের ভেতরে আরও চাপ অনুভব করেন তিনি।। চারপাশের নানান কটুকথা এবং দলে সুযোগ না পাওয়া মিলিয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েন ইমাম।
এই প্রসঙ্গে ইমাম বলেন, ‘আমার মনে আছে, গোসলখানায় গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদতাম আমি। আর ভাবতাম যে, এখনও কোনো ম্যাচ খেলিনি (তাতেই এত কথা), নিজের ওপর এক ধরনের অনাস্থা চলে আসছিল।'
'যখন আমি সুযোগ পাবো, তখন যদি পারফর্ম করতে না পারি? আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। এসব ভেবে নিজের ঘরের বাইরেও যেতাম না। ভয় পেতাম যে, পাকিস্তানি প্রবাসীরা হয়তো কটুকথা বলবে আমাকে।’ আরও যোগ করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।