করোনার ধাক্কা: তামিম-মুশফিকদের ক্ষতি প্রায় কোটি টাকা

ছবি: ছবিঃ ফাইল ছবি

|| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ||
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চ থেকে স্থবির হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন। ঘরবন্দী হয়ে অখন্ড অবসরে সময় কাটছে ক্রিকেটারদের। এই দুর্যোগ রুটি-রুজির অবলম্বন ক্রিকেট থেকে দূরে রাখছে ক্রিকেটারদের। স্কিল, মানসিক দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ক্রিকেটাররা। করোনার কারণে একের পর এক টুর্নামেন্ট, সিরিজ স্থগিত হচ্ছে। ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরাও।
তবে মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে বড় ক্ষতিটা হচ্ছে ক্রিকেটারদের। প্রথমত ম্যাচ খেলতে না পারায় ক্রিকেটীয় দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। অন্যদিকে অর্থকড়ি উপার্জনে প্রভাব পড়ছে। টাকার অঙ্কে হিসেব করলে শুধু ম্যাচ ফি বিবেচনায় গত চার মাসে প্রায় ৬৮ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রিকেটাররা।
বিশেষ করে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমসহ তিন ফরম্যাটের জন্য বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ঠাঁই পাওয়া ক্রিকেটাররা। চলতি বছরে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে লাল ও সাদা বলের ক্যাটাগরিতে ক্রিকেটারদের ভাগ করেছে বিসিবি। লাল ও সাদা বল তথা তিন ফরম্যাটের চুক্তিতেই আছেন সাত ক্রিকেটার। তারা হলেন; তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন ফরম্যাটের চুক্তিতে থাকলেও তারা সব সিরিজের দলে থাকতেন এমন নয়। তবে তাদের খেলার সম্ভাবনা প্রবল ছিল।

২০২০ সালে বাংলাদেশের ১০টি টেস্ট খেলার কথা ছিল। বছরের শুরুতে পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে একটি করে টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। তারপর ইতোমধ্যে করোনার কারণে পাকিস্তান সফরের একটি, হোমে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চারটি (দুটি করে) ও শ্রীলঙ্কা সফরের তিনটি টেস্ট স্থগিত হয়ে গেছে। মোট আটটি টেস্ট করোনার পেটে বিলীন হয়ে গেছে। আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রের ফাইনাল না পিছিয়ে গেলে এসব টেস্ট আর হওয়ার সম্ভাবনাও শূন্যের কোটায়।
টেস্টে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি ৬ লাখ টাকা। সেদিক থেকে চলতি বছর স্থগিত হওযা ৮ টেস্টে শুধু ম্যাচ ফি’র হিসেবেই ৪৮ লাখ টাকা হাতছাড়া হয়েছে তামিম-মুশফিক-মুমিনুলদের। আয়ারল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের ৩টি ওয়ানডে খেলার কথা ছিল। ওয়ানডের ম্যাচ ফি এখন ৪ লাখ টাকা। যেখানে ১২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে ক্রিকেটারদের। ক্রিকেটের ক্ষুদে ফরম্যাট টি-২০ তেও ৪টি ম্যাচ ছিল টাইগারদের, সেটা আয়ারল্যান্ড সফরেই। টি-২০’র ম্যাচ এখন ২ লাখ টাকা। তিন ঘন্টার পিকনিক ক্রিকেট থেকে ৮ লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ক্রিকেটাররা।
সব মিলিয়ে তিন ফরম্যাটে স্থগিত হওয়া ১৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে ম্যাচ ফি বাবদ ৬৮ লাখ টাকা হাতছাড়া হয়েছে ক্রিকেটারদের। এছাড়া টিএ-ডিএ, আনুষাঙ্গিক ভাতা ও ব্যক্তিগত স্পন্সর তো আছেই। অঙ্কটা তাই প্রায় কোটি টাকা। প্রথমবারের মতো তিন ফরম্যাটের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আসা লিটন দাস কিংবা বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও এত টাকা হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ করতেই পারেন।
ক্রিকেটাররা অবশ্য বিশেষ ধন্যবাদ দিতেই পারেন বিসিবিকে। কারণ করোনাকালেও তাদের বেতন কাটার পথে হাঁটেনি বিসিবি। যেখানে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দেশে বেতন কর্তন হচ্ছে। সেখানে নিয়মিত বেতন পেয়ে আছেন তামিম-মুশফিকরা। বর্তমানে শীর্ষ বেতনধারী ক্রিকেটারও তারা দুজন। ওয়ানডে অধিনায়ক বলে বন্ধু মুশফিকের চেয়ে ৩০ হাজার টাকা বেশি বেতন পান তামিম। মুশফিক মাসিক ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ও তামিমের ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন।
করোনার পর কখন ক্রিকেট আবার শুরু হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। চলতি বছরে আর কোনো টেস্ট নেই বাংলাদেশের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও খুব বেশি ব্যস্ততা নেই। এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের মতো বড় দুটি আসর রয়েছে। কিন্তু এ দুটি বড় টুর্নামেন্টের আকাশে অনিশ্চয়তার মেঘ উড়ছে করোনার কারণে।
এছাড়া অক্টোবরে তিনটি টি-২০ খেলতে নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা আছে বাংলাদেশ দলের। এবং বছরের শেষ দিকে ডিসেম্বরে তিনটি ওয়ানডে খেলতে শ্রীলঙ্কা দলের বাংলাদেশে আসার সূচি রয়েছে।