১১ বছরের যুদ্ধ জিতলেন উড

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্রিকেট বন্ধ হয়েছে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে। এর প্রায় ১০ দিন আগে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন ক্রিস উড। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে বাড়তি মনোযোগ দিতে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
২০১০ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় উডের। হ্যাম্পশায়ারের হয়ে ১০ বছরে শিরোপা জিতেছেন ৪বার। কাউন্টিতে নিয়মিত পারফর্মার হলেও ক্রিকেটের পাশাপাশি এই পেসারকে লড়েতে হয়েছে একটি বদ অভ্যাসের সঙ্গে।
প্রায় ১১ বছর উড যুক্ত ছিলেন খেলাধুলার অনলাইন জুয়ার সঙ্গে। এমনও হয়েছে মাঠের খেলার চেয়ে তাঁর মনোযোগ বেশি ছিল অনলাইন জুয়ার ফলাফলের দিকেই। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর এখন পর্যন্ত জুয়া থেকে দূরে আছেন উড।

আর্সেনাল ও ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার টনি অ্যাডামসের 'স্পোর্টিং চান্স' এর সাহায্যে অন্ধকার এই জগত থেকে বের হতে পেড়েছেন উড। বিভিন্ন আসক্তিতে ভোগা ক্রিকেটারদের বদ অভ্যাস থেকে মুক্ত করাই এ সংগঠনের কাজ।
গত মার্চেই ৮৫ জন ক্রিকেটারকে এই চ্যারিটি সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টনার হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে রয়েছেন ৪০ জন বর্তমান ক্রিকেটার, যারা গত এক বছরে নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সেবা নিয়েছেন স্পোর্টিং চান্স থেকে। এই চ্যারিটির এক পোডকাস্টেই এসব নিয়ে কথামেলা বলেছেন উড।
৮ বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ এবং ক্যারিয়ারজুড়ে দীর্ঘমেয়াদি ইনজুরির কারণেই মূলত জুয়ার প্রতি আসক্তি বেড়েছে তাঁর। শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে হ্যাম্পশায়ারের হয়ে শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে। সেই মৌসুমে ফ্রেন্ডস প্রভিডেন্ট টি-টোয়েন্টি জয়ের পর সতীর্থদের সঙ্গে রাতভর পার্টি করেছিলেন উড।
টুর্নামেন্ট জয়ের পর পাওয়া প্রাইজমানি জুয়াতে হেরে বসেন তিনি। এছাড়া ২০১২ সালে এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জুয়ার কথা ভাবতে ভাবতে পিচের মধ্য দিয়েই হাঁটা শুরু করেছিলেন এই পেসার। প্রতিদিন জুয়া খেলার অভ্যাস ছিল বাঁহাতি এই পেসারের।
উড বলেন, ‘আমি রোজ জুয়া খেলতাম। প্রায়ই নিজের ক্ষতি করার ভাবনা মাথায় ভর করতো। এমন না যে আত্মহত্যার কথা ভাবতাম। তবে মনে হতো, সত্যিই কি এখানে থাকার যোগ্য আমি? প্রত্যেকদিন আমি জুয়ার মাধ্যমে নিজের অনুভূতিগুলো চাপা দেয়ার চেষ্টা করতাম। এর বাইরে কিছু করারই ছিল না আমার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এখন লুকোনোর কিছু নেই। আমি নিজেকে নিয়ে এখন আর ভয় পাই না। আমি নিজের অবস্থা নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি কারণ এতে সামনের দিনগুলোতে অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়। এছাড়া নিজের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমার জীবনের বাকি সময়টাতেও এটিকে সত্যি ধরেই এগুতে হবে।’
এদিকে ইংল্যান্ডের পেশাদার ক্রিকেটারদের সংস্থার পরিচালক ইয়ান থমাসের মনে করেন, প্রথম ক্রিকেটার হওয়ার কারণে জুয়ার প্রতি আসক্তির কথা শিকার করেছেন উড। যা সবার জন্য নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে বাকিরাও সাহায্য পাবে বলে আশাবাদী তিনি।
২০২০ সালের মৌসুমের জন্যও হ্যাম্পশায়ারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন ক্রিস উড। এখনও পর্যন্ত ৪৩ প্রথম শ্রেণির, ৭৯ লিস্ট এ ও ১২১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের পারদর্শী তিনি। রয়েছে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেঞ্চুরিও।