একটি ইয়র্কার এবং একটি বিশ্বকাপ জয়ের গল্প

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
একটি জাদুকরী ইয়র্কারের পরই স্টিভেন স্মিথের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে উঠেছিল বিশ্বকাপটা নিজেদের ঘরে আসছে, জেমস ফকনার হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন, জস হ্যাজেলউডের মনে প্রাণে নেমে এসেছিল দারুণ স্বস্তি। আর অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক তো জেনেই গিয়েছিলেন সোনালী কাপটা তাঁর হাতেই উঠছে।
২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অজি পেসার মিচেল স্টার্ক কিউই ওপেনার ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরানোর পর এভাবেই নিজেদের উল্লাসের জানান দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটে এক উইকেটের মধ্য দিয়ে ম্যাচে কখনো জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা যায় না।
তবে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ম্যাককালামকে ফিরিয়েই ম্যাচ জয়ের রসদ পেয়ে গিয়েছিল অজিরা। তাই তো, শুরুতে তাকে ফেরানো মানে ম্যাচের অর্ধেক জয় নিজেদের করে নেওয়া। সেবার ট্রান্স-তাসমান বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে প্রথমবারের মতো দেখা হয় নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার।
ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে অজিরা গুটিয়ে যায় ১৫১ রানে। স্টার্ক ২৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে কিউইদের আটকে দেয়ার সব রকমের চেষ্টাই করেছিলেন। বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেও ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন ম্যাককালাম। ২৪ বলে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৫০ রান।

এরপর কেন উইলিয়ামসন ধৈর্য ধরে খেলে কিউইদের জয় নিশ্চিত করেন। এই জয়ের পর বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয় ট্রান্স-তাসমানিয়ার প্রতিবেশীরা। ফাইনালের আগে অজি অধিনায়ক ক্লার্ক জানিয়ে দিয়েছিলেন, তারা শুরুতে ফেরাতে চান ম্যাককালামকে। জিততে হলে এই বিকল্প ছিল না অজিদের কাছে।
সেই লক্ষ্যে নিজেদের রণকৌশল নিয়ে তৈরি ছিল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালের আগের অনুশীলনে সব বোলার ও কোচকে সামনে নিয়ে ক্লার্ক জানতে চান, ‘ব্যাটসম্যান যখন শেষ পাঁচ ওভারে ঝড় তুলতে চায়, তখন তাকে আটকানোর সেরা উপায় কি?’
সব বোলারের উত্তর ছিলো, করতে হবে ইয়ররকার। তখনই ক্লার্ক দলের বোলারদের উদ্দেশে বলেন, ‘ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ম্যাচে কতক্ষণ ব্যাটিং করবে তা না ভেবে, আমরা প্রথম বল থেকে ওকে ইয়র্কার ডেলিভারিতে ঘায়েল করবো। আমাদের এমনভাবে বোলিং করতে হবে যেন, এটাই ম্যাচের ডেথ ওভার বলে মনে হয়।’
ক্লার্ক জানতেন তার দলে আছে ইয়র্কারের সেরা অস্ত্র মিচেল স্টার্ক। অস্ট্রেলিয়ার এই অধিনায়ক এখনও মনে করেন স্টার্কের উপস্থিতিই তাঁকে কিছুটা নির্ভার করে দিয়েছিল। ক্লার্কের ভাষ্য, ‘সৌভাগ্যজনকভাবে আমাদের এমন একজন বোলার ছিলো, যে দেড়শ গতিতে নিখুঁত ইয়র্কার দিতে পারে।’
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ৯৩ হাজার ১৩ জন দর্শকের সামনে ম্যাককালাম বধ করতে নামার আগে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছিলেন স্টার্ক। প্রথম ওভারেই নিজের বোলিং ধার দিয়ে সেটাই জানান দিচ্ছিলেন তিনি। ম্যাচের তৃতীয় বলেই মুখোমুখি লড়াইয়ে দেখা গিয়েছিল স্টার্ক-ম্যাককালামকে।
সেই বল থেকে স্টার্ক পরিকল্পনা মতো ইয়র্কার ছুঁড়তে লাগলেন। অল্পের জন্য সেই বলটি স্টাম্প মিস করে যায়। পরের বলটি ছিল ইনসুইং ইয়র্কার। এই বলটিও দুর্ভাগ্যক্রমে স্টাম্প মিস করে যায় লেগ স্টাম্প। এর পরের বলেই জাদুকরী এক ইয়র্কারে উড়ে যায় ম্যাককালামের অফ স্টাম্প।
এই বলের আগেই ফাইন লেগে থাকা স্মিথ পাশে দাঁড়ানো সতীর্থ ওয়ার্নারকে ডেকে বলেন, ‘আসছে, দেখো এই বলেই সে ফিরবে।’ স্মিথের সেই ধারণাই সত্যি হয়েছে। স্টার্ক সেই মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানালেন এটা এখনও তাঁর কাছে গর্বের।
এই পেসার বলেন, ‘বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাককালামের মতো ক্রিকেটারকে পরিকল্পনা করে আউট করতে পারা আমার জন্য ভীষণ গর্বের। বিশ্বকাপ থেকে মানুষের মনে রাখার মতো অনেক মুহূর্ত তৈরি হয়। নিশ্চিতভাবে আমার জন্য এটাই স্পেশাল।’
সেই জয়ের সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যাটা করেছেন অধিনায়ক স্টার্ক। তিনি বলেন, ‘ম্যাককালাম ম্যাচে যে প্রভাব বিস্তার করে খেলে, তাকে ফেরানো মানে অর্ধেক ম্যাচ জিতে যাওয়া। তার উপর আপনি তাকে নিয়ে ঠিকমতো স্টাডি করে, পরিকল্পনা সাজানোর পর যদি আপনার সেরা বোলার পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারে। তখন অধিনায়ক হিসেবে পুরো দৃশ্যপট স্বপ্নের মতো মনে হবে।’