‘প্রতিপক্ষ’ জিম্বাবুয়ে ও তাসকিনের আফসোস
ছবি: ছবিঃ ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ||
মন্থর গতির ব্যাটিং, রুগ্ন স্ট্রাইক রেটের কারণে তীর্যক সমালোচনায় জেরবার তামিম ইকবাল। গত বছর বিশ্বকাপ থেকেই আতশী কাচের নিচে এই ওপেনারের ব্যাটিং। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে সর্বোচ্চ রান করেও সমালোচিত হয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে তার নাম পড়ে গেছে ‘ডটবাবা’!
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে গত ৩ মার্চ সিলেটে ক্যারিয়ার সেরা ও বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ওয়ানডে ইনিংস খেলেছেন তামিম। খোলসমোচন করে বের হয়ে আসার সুতীব্র ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে তার ১৩৬ বলে খেলা রেকর্ড গড়া ১৫৮ রানের (২০ চার, ৩ ছয়) ইনিংসে।
গত ৩ মার্চ পড়ন্ত বিকেলে মিরপুর স্টেডিয়ামের দোতালায় সিসিডিএম কার্যালয়ে (ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস) দাঁড়ানো তাসকিন আহমেদের চোখ নিবদ্ধ ছিল টিভি স্ক্রিণে। তামিম তখন সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে দেড়শ’র পথে রয়েছেন।
২০১৯-২০২০ মৌসুমের জন্য ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের দলবদবলের প্রথম দিনে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে নাম লেখানো এই ডানহাতি পেসার বলছিলেন, আজ ভাইয়ের (তামিম) দুইশ’ করার ভালো সুযোগ আছে।

পাশ থেকে কেউ একজন ফোঁড়ন কাটলো, জিম্বাবুয়ের যেই বোলিং তাতে তুমিও নেমে ফিফটি মেরে দিতে পারবা। নিছক রসিকতা বলেই কিনা হাসিতেই তা উড়িয়ে দিয়েছেন তাসকিন। এবং হয়তো তাই দ্বিমত করেননি। তবে পাল্টা যুক্তিতে অগ্রজ তামিমের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, যাই হোক ভাই, ১৫০-২০০ করা কখনোই সহজ নয়। বোলিং আক্রমণ যেমনই হোক।
তারপরই আবার আফসোস ধরা পড়ল তাসকিনের কন্ঠে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতায় ‘প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে’ খুবই কমন। বর্তমান সময়ে খেলা বা নিকট অতীতের ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারেও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনেক ম্যাচ খেলার স্মৃতি রয়েছে। পারফর্ম করার মধুর সময় যোগ হয়েছে অনেকের ক্যারিয়ারে। কিন্তু তাসকিন সেখানে আশ্চর্যজনকভাবে বিরল।
আন্তর???জাতিক ক্রিকেটে ৬ বছরের ক্যারিয়ারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ! তাও টি-২০ ফরম্যাটে। ২০১৬ সালে খুলনায় ওই ম্যাচে ৪ ওভারে ৩২ এক উইকেট পান তাসকিন। ২০১৪ সালে অভিষেক হওয়ার পর বাংলাদেশের হয়ে ৫ টেস্ট, ৩২ ওয়ানডে ও ১৯ টি-২০ খেলেছেন তিনি। ৫৬ ম্যাচের মাত্র একটিতে জিম্বাবুয়েকে পেয়েছেন ২৪ বছর বয়সী এই পেসার। টেস্ট, ওয়ানডেতে এই দলকে সামনেই পাননি তিনি।
তাসকিন ৩ মার্চ বলছিলেন, ‘ওদের সঙ্গে আমার খুব কম খেলা হয়েছে। আফসোস যে ওদেরকে পাই না। মাত্র একটা ম্যাচ খেলছি, টি-২০ তে। অবশ্য ওই ম্যাচের পরই আমি ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে এসেছিলাম। দারুণ একটা এশিয়া কাপ খেললাম। ভালো বোলিং হয়েছিল। তারপর টি-২০ বিশ্বকাপ। বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত দারুণ রিদমে ছিলাম।’
তাসকিনের স্বল্প ‘জিম্বাবুয়ে অভিজ্ঞতা’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেকটা বিরল ঘটনা বলাই শ্রেয়।
ক্ষয়িঞ্চু শক্তির জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হাল সময়ে বাংলাদেশের সফলতা প্রায় শতভাগ। ক্রিকেটাররাও দুর্দান্ত পারফর্ম করেন দলটির সঙ্গে। কেউ কেউ ফর্মে ফিরেন। কেউ কেউ উইলোকে সমৃদ্ধ করেন। আবার দলও খারাপ সময় কাটিয়ে উঠে। ছন্দে ফিরে।
এই তো ২০১৮ সালের অক্টোবরে আফ্রিকার দলটির সঙ্গে হোম সিরিজে তিন ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন ইমরুল কায়েস। প্রায় তিনটি সেঞ্চুরি বললেও ভুল হবে না। কারণ দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে আরেক ম্যাচে নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তিন ম্যাচে ৩৪৯ রান করার ঠিক পরের সিরিজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রান পাননি ইমরুল। দুই ম্যাচে ৪ রান করে বাদ পড়েন ওয়ানডে দল থেকে। তারপর এখনও ওয়ানডে দলে সুযোগ পাননি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে চলমান সিরিজের প্রথম লিটন দাস সেঞ্চুরি করেছেন। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তার সেঞ্চুরিতে টানা ৫ ম্যাচ হারের পর ওয়ানডেতে জয়ের রথে ফিরেছে বাংলাদেশ দল।
৩ মার্চ তামিম খেলেছেন রেকর্ড গড়া ইনিংস। বোলাররাও সবাই কম বেশি উইকেট পাচ্ছেন। চেনা প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের এই মিছিলে তাসকিনের বাদ পড়াটা বিস্ময়করই বটে।