ভয়ের কারণ সেই ভঙ্গুর ব্যাটিং
ছবি: ছবি- ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ||

সর্বশেষ ১০ ইনিংসে নেই কোনো ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। এটা কি প্রমাণ করে না বাংলাদেশ দলটা নিচের দিকে যাচ্ছে?
গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের অকপট উত্তর ছিল এমন, ‘সত্যি বলতে গেলে, আপনি যে প্রশ্ন করেছেন, একটা ১০০ না থাকলে নিচের দিকেই থাকবে। মানুষের এখন ব্যাড প্যাচ যায়, টিম হিসেবে ব্যাডপ্যাচের মধ্যে ছিলাম। তবে খুব শীঘ্রই-কথা দিলাম- কথাই দিয়ে দিলাম আপনাকে।’
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মিরপুর টেস্টেই ধরা দিবে সেঞ্চুরির তিন অঙ্ক এমনই আশাবাদ ছিল অধিনায়কের কন্ঠে, ‘আমি কথাই দিলাম, টিমের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বড় একটা একটা ১০০, ১০০ না, ২০০-৩০০-ই ধরি। চাইলে বড়ই চাইবো। এরকম বড় ইনিংস খেলতে পারবে, যে কেউ খেলবে ইনশাআল্লাহ।’
গত বছর (২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি) নিউজিল্যান্ড সফরের হ্যামিল্টন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২৯ রান করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল, দ্বিতীয় ইনিংসে সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেঞ্চুরি করেছিলেন। তারপর ১০ ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোরগুলো ছিল এমন; ২১১, ২০৯, ২০৫, ১৭৩, ১৫০, ২১৩, ১০৬, ১৯৫, ২৩৩, ১৬৮। ভঙ্গুর ব্যাটিংয়ের চিত্রই এখানে দৃশ্যমান। ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস যে তলানীতে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকা ব্যাটিং দৈন্য চলমান মিরপুর টেস্টেও জয়ের স্বপ্নে বাধার দেয়াল তুলে দিচ্ছে। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে জিম্বাবুয়ে অলআউট হলেই ব্যাটিংয়ে নামবে বাংলাদেশ। আর সেখানেই নিহিত ভয়ের চোর¯্রােত।
তিক্ত অতীতই যার উৎস।
মিরপুরে ম্যাচের প্রথম দিন শেষে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ২২৮ রান তুলেছে জিম্বাবুয়ে। ওভারপ্রতি ২.৫৩ হারে রান করেছে সফরকারী। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু ম্যাচের বৃহত্তর ছবিটার দিকে তাকালে জিম্বাবুয়ের স্কোরটাই অনেক চিন্তার মেঘ বয়ে আনছে স্বাগতিকদের হারের বৃত্ত ভাঙার স্বপ্নীল আকাশে। কারণ দেশের বাইরে হলেও শেষ ১০ ইনিংসে বাংলাদেশের দলগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ যে ২৩৩!
এখন হোম কন্ডিশনে খেললেও জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের সংগ্রহই চ্যালেঞ্জের নামান্তর বাংলাদেশের জন্য। দ্বিতীয় দিনের সকালে সফরকারীদের প্রথম ইনিংস যত দ্রুত শেষ করতে পারবে বাংলাদেশ, ম্যাচে ততই নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারবে। আর জিম্বাবুয়ের ইনিংসটা দীর্ঘায়িত হলে চাপের পাহাড় ক্রমশই উঁচু হবে।
টেস্ট সংস্কৃতি বদলের মিশনে দেশের মাটিতে এই প্রথম কোনো ম্যাচে অনভ্যস্ত উইকেটে খেলছে বাংলাদেশ। স্পিন বান্ধব উইকেট নয় এটি। প্রথম দিন শেষে সেঞ্চুরিয়ান ক্রেইগ আরভিন, ৪ উইকেট পাওয়া বাংলাদেশের স্পিনার নাঈম হাসান দুজনই বলে গেছেন, উইকেট খুব ভালো ছিল। ব্যাটিং বান্ধব। বোলারদের জন্য খুব বেশি কিছু নেই।
ম্যাচের বয়স যত বাড়বে, উইকেটের আচরণ কতটা বদলাবে তা সময়ই বলে দিবে। আপাতত নিজেদের সঙ্গে নিজেদের যুদ্ধটা জিততে হবে তামিম, মুমিনুল, মুশফিকদের। সেটা হলো উইকেটে টিকে থাকা, রান করা। প্রথম ইনিংসে বড় লিড নেয়া।
জিম্বাবুয়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণ যেখানে হুমকি হয়ে ধরা দিচ্ছে। তিন পেসার কালর্টন সুমা, ডোনাল্ড তিরিপানো, ভিক্টর নায়োচি রয়েছেন নতুন বল সামলানোর দায়িত্বে। বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র্যটা যোগ হবে স্পিনারদের কল্যাণে। বাঁহাতি স্পিনার এইন্সলে এনলোভু, অফস্পিনার সিকান্দার রাজা আছেন। সিকান্দার রাজার অফস্পিন এখন দারুণ কার্যকর। হারারেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১৩ রানে ৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। টিমাইসেন মারুমা হাজির হবেন লেগ স্পিন নিয়ে। অফস্পিন করতে পারেন ক্রেইগ আরভিন, কেভিন কাসুজাও।
তাই ২২ গজে পরীক্ষাই দিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। তামিম, মুমিনুল, মুশফিকের মতো অভিজ্ঞদের ব্যাটই জ্বলে উঠতে হবে। এই ত্রয়ীর কাউকে বড় ইনিংস খেলতেই হবে। মিঠুন, লিটন দাসদেরও ব্যাটিংয়ে নেমে ধৈর্য্য ধরার বিকল্প নেই। শান্ত, সাইফ হাসানের মতো তরুণদের কাছে হোম কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে ২২ গজে টিকে থাকার দৃঢ়তা আশা করাই যায়।
প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলেও মুমিনুলদের নিয়ে নৈরাশ্য জড়ো হয় অতীত দায়িত্বহীনতার কারণে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৫১ রানে হেরে গিয়েছিল মাহমুদউল্লাহর দল। তিন হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ২৮২ রান তুলেছিল জিম্বাবুয়ে। সফরকারীদের এই স্কোরই চাপ তৈরি করে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে। সেই চাপেই আপন মনে ভেঙে পড়ার শুরু। ১৯ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় মাত্র ১৪৩ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ১৮১ রানে। ৩২১ রানের টার্গেট আর পাড়ি দিতে পারেনি চাপে দ্রবীভূত হয়ে থাকা বাংলাদেশ। সেই ম্যাচেও সিকান্দার রাজা দুই ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন।
খুব বড় মনে না হলেও জিম্বাবুয়ে ইতোমধ্যে মিরপুর টেস্টে লড়াইয়ের রসদ পেয়ে গেছে। এখন কাজটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হাতে। ব্যাট হাতে তামিম-মুশফিকদের দায়িত্বশীলতাই পারে ম্যাচে বাংলাদেশকে চালকের আসনে নিয়ে যেতে। আপাতত দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নামার পর প্রত্যাশিত দৃঢ়তা তামিমরা দেখাতে পারেন কিনা, তাই দেখার বিষয়।