সিলেট দলের কার্যকলাপে সন্দেহ অধিনায়কের!

ছবি: ছবি- বিসিবি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
বিতর্ক দিয়ে শুরু হয়েছিল সিলেট থান্ডারের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিবিপিএল)। টুর্নামেন্ট থেকে ইতোমধ্যে ছিটকে পড়েছে দলটি। কিন্তু এখনও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না সিলেট থান্ডারের। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সিলেটের অধিনায়ক আন্দ্রে ফ্লেচারের দেখা করা, দলটি নিয়ে সকলের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গ্রুপ পর্বে ১২ ম্যাচে মাত্র এক জয়ে নিয়ে বিপিএল শেষ করেছে সিলেট। যা বিপিএলে কোনো দলের সর্বনিম্ন জয়ের রেকর্ড গড়েছে। এমন পারফরম্যান্স পরিষ্কার তুলে ধরছে দলটির ড্রেসিংরুমের চিত্র।
সিলেটের কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ প্রথম ম্যাচ থেকেই সকলের মাঝে জন্ম নেয়। চট্টগ্রামের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দলটির পেসার ক্রিসমার সান্টোকির বিশাল ওয়াইড এবং নো-বল কারো চোখই এড়ায়নি। এবার টুর্নামেন্ট শেষ বিসিবির সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ফ্লেচার দেখা করা নিঃসন্দেহে জানান দেয়, কোনো কিছুই ঠিক ছিল না সিলেটের ড্রেসিংরুমে।
বিপিএলে গত কয়েকটি আসরে খেলেছেন ফ্লেচার। যে কারণে এখানে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত কিছু বন্ধু আছে ক্যারিবিয়ান এই ক্রিকেটারের। তাঁদের মাধ্যমে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা সম্ভব না হওয়ায় বিসিবির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে দেখা করেন সিলেটের দলপতি।

সিলেটের ড্রেসিংরুমে যা ঘটছে তা দেখে দমবন্ধ হয়ে আসছিল ফ্লেচারের। বিসিবি কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার আগে স্থানীয় ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটসম্যান। তাঁর সন্দেহ দুই-একজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। স্কোয়াডের অনেককে নিয়েই সন্দেহ ছিল ফ্লেচারের।
টিম ম্যানেজমেন্ট এবং কিছু ক্রিকেটারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ছিলেন না মোসাদ্দেক হোসেনের ইনজুরির পর অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া এই ক্যারিবিয়ান। শুধু তিনি নন, সিলেটের কিছু কার্যকলাপে সকলের সন্দেহের ভিত আরও মজবুত হয়।
যেমন, একাধিক ম্যাচে ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান জনসন চার্লসকে একাদশের বাইরে রাখা নিয়ে সন্দেহ করেন দলের অনেকেই। সিলেট পর্বে দলটির কয়েকজন ক্রিকেটারের আচরণ ছিল সন্দেহ করার মতো। যেমন, মাঠের মাঝেই হঠাৎ বিদেশি এক পেসারের বুটের ফিতা খুলে আবার বাঁধা, চোটে থাকার পরও এক পাকিস্তানিকে একাদশে নেয়া। যিনি ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো বল মোকাবেলা করার আগেই মাঠে ফিজিও ডেকে পাঠান, আবার এক বল খেলেই ব্যাট পরিবর্তন করেন।
এমন ঘটনাগুলোকে কোনোভাবেই সাধারণ চোখে দেখছেন না নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্নীতি দমন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'এই ধরনের ঘটনাগুলো (বুটের ফিতা বাঁধা, ব্যাট পাল্টানো) আধুনিক ক্রিকেটে জুয়াড়িদের জন্য ব্যবহৃত সংকেত। তাই এগুলো নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়া অযৌক্তিক নয়।'
প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী স্বীকার করেছেন, ফ্লেচার তাঁর সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি। তবে তাঁদের মধ্যে আলোচনা সিলেটের অনিয়ম নিয়ে হয়নি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'ফ্লেচারের সঙ্গে একজনের ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। সে একজনের নামে অভিযোগ করেছে। আমরা দুইজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছে। ওর দেখা করতে আসা যদি নেতিবাচক কিছু ছড়িয়ে থাকে তাহলে সেটি ভুল। সে আমাদের সঙ্গে কিছু জিনিস আলোচনা করতে এসেছে। মাঠ থেকে শুরু করে আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।'
দুর্নীতি বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে এর জন্য দুর্নীতি বিভাগের সঙ্গে দেখা করতেন ফ্লেচার। নিয়ম মনে করিয়ে দেন নিজামউদ্দিন বলেন, 'আর খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সবাই জানে দুর্নীতি বিষয়ে প্রধান নির্বাহীর কাছে অভিযোগ হয় না। এটা করতে হয় দুর্নীতি দমন বিভাগে।'
আসরের শুরুতে সান্টোকির নো-বল নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন সিলেট থান্ডারের টিম ডিরেক্টর তানজিল চৌধুরী নিজেই। এছাড়া সে সময় তিনি আরও জানান সিলেটের ড্রাফট থেকে ক্রিকেটারের নেয়ার বিষয়টিও তাঁর কাছে ছিল সন্দেহজনক।
দুর্নীতি দমন বিভাগের হাত থেকে সান্টোকির বিষয়টি বেঁচে গেলেও এখন দেশে ফেরার আগে প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে ফ্লেচারের জরুরি সাক্ষাত সকল সন্দেহকে আরও জোরালো করেছে।