বাইশ গজে মাশরাফির ১৮ বছর

ছবি: ছবি- বিসিবি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
৮ নভেম্বর, ২০০১ সালের আজকের এইদিনে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। টেস্ট ফরম্যাট দিয়ে বাংলাদেশ দলে অভিষেক হওয়া মাশরাফি একে একে পার করে ফেললেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৮ বছর। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইশ গজে ১৮ বছর পার করলেন মাশরাফি।
টি-টোয়েন্টি খেলা ছাড়েন আড়াই বছর আগেই। পায়ের ইনজুরির কারণে টেস্ট ক্রিকেটও খেলছেন না গত দশ বছর ধরে। হয়তো আর সাদা পোশাকে মাঠে নামা হবে না তাঁর। কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনও নিজের মহিমায় আছেন মাশরাফি।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন মাশরাফি। অভিষেকেই জানান দেন নিজের সামর্থ্য এবং দক্ষতা, তুলে নেন জিম্বাবুয়ের চার উইকেট। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে পরের ম্যাচেও হার না মানা বোলিং করেন তিনি। মাত্র ১১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়ের দুই উইকেট তুলে নেন তিনি। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যানকে শূন্য রানে ফেরান ডানহাতি এই পেসার।
সেই সিরিজেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় মাশরাফির। প্রথম দুই ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে নিজের সামর্থ্যের জানান আরও একবার দেন। ২০০৬ সালে ২৮ নভেম্বর টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তাঁর।

ক্যারিয়ারের শুরুতেই জানান দিয়েছিলেন দেশসেরা পেসারের তকমা নিজের করে নিতে যাচ্ছেন তিনি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা বোলার হিসেবে নিজেকে সেই চূড়ায়ই রেখেছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেসার তিনি। ৩৬ টেস্ট খেলা মাশরাফির নামের পাশে রয়েছে ৭৮টি উইকেট।
ওয়ানডে ইতিহাসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার মাশরাফি। ২১৭ ম্যাচ খেলেছেন এই পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে, যেখানে তাঁর উইকেট সংখ্যা ২৬৬। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খুব একটা না খেললেও দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারদের তালিকায় তিনি রয়েছেন চতুর্থ স্থানে। ৫৪ ম্যাচে ৪২ উইকেট নামের পাশে যোগ করেছেন ডানহাতি এই পেসার। বাকি দুই ফরম্যাটের তুলনায় বিশ ওভারের ক্রিকেটে কিছুটা বিবর্ণ বলাই যায় তাঁকে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা প্রথমবারের মতো তাঁর অধীনেই ঘরে তোলে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে একটি টেস্টে দিয়েছিলেন নেতৃত্ব, যে ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে স্বাগতিকদের ৯৫ রানে হারায় মাশরাফিবাহিনী। সেই ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েন তিনি।
ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ৮৫ ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছেন মাশরাফি। যেখানে তাঁর নেতৃত্বে ৪৭টি ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জয় এসে তাঁর অধীনেই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ২৮ টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ১০টিতে জয় এনে দেন মাশরাফি।
৪টি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি, নেতৃত্ব দিয়েছেন ২টিতে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তাঁর অধীনেই প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালও তাঁর অধীনে খেলে দলটি। এশিয়া কাপের তিন আসরে ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ, যেখানে দুইবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাশরাফি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন পুরোপুরি ফাস্ট বোলার। সমসাময়িক অন্যান্য বোলাররা যখন ১৩৫ কিমি গতিতে বল করেই সন্তুষ্ট থাকতেন, তখন মাশরাফি নিয়মিতই ছুড়তেন ১৪০+ কিমি গতির বল। যে কারণে তার নামই হয়ে যায় 'নড়াইল এক্সপ্রেস'।
বারবার ইনজুরিতে পড়ে আপোষ করতে হয়েছে গতির সঙ্গে। এখন আর গতি দিয়ে ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করতে না পারলেও মাথা খাটিয়ে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানোর ক্ষেত্রে জুড়ি নেই মাশরাফির। এখনও নতুন বলে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পেসার তিনি।
টি-টোয়েন্টির পর এবার পালা ওয়ানডে থেকে বিদায় নেয়া। সেটাও হয়তো নিকটে। ক্রিকেট ছাড়লেও বাংলাদেশের মানুষের মনে সব সময়ই থাকবেন মাশরাফি। কারণ প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করা বাংলাদেশকে দলকে শিখিয়েছেন মাশরাফি। হাসি ফুটিয়েছেন দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মুখে। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন তিনি।