ড্রয়ে নিষ্পত্তি হলো রোমাঞ্চে ভরা লর্ডস টেস্ট

ছবি: ছবি- সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টটি ড্র হয়েছে। তবে ড্র হলেও কম রোমাঞ্চের জন্ম দেয়নি ম্যাচটি। ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক টেস্টেই নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছেন ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত জফরা আর্চার। তাঁর আগুনে বোলিংয়ের সামনে দিশেহারা হতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের।
আর্চারের ৯২.৪ মাইল গতির বাউন্সারে ঘাড়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে। তবে এরপরেও ১৬১ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন স্মিথ।
বল হাতে ঝড় তুলেছেন কামিন্স, সিডল, হ্যাজেলউডরাও। তবে তাদেরকে সামলেই দ্বিতীয় ইনিংসে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। সবমিলিয়ে এসব কিছুই লর্ডস টেস্টের রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।
ম্যাচটির শেষ দিনে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২৬৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল জো রুটের ইংল্যান্ড। এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান সংগ্রহ করে টিম পেইনের দল। ফলে ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে।
পঞ্চম দিন অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ১০৪ রানে এগিয়ে থেকে খেলা শুরু করেছিলেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস এবং জস বাটলার। ৪ উইকেটে ৯৬ রান নিয়ে খেলতে নামার পর নিজের ব্যাটিং কারিশমা দেখান অলরাউন্ডার স্টোকস। ৩টি ছয় এবং ১১টি চারের সাহায্যে ১১৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। একই সঙ্গে বাটলারের সঙ্গে গড়েন ৯০ রানের দারুণ একটি জুটি।
দলীয় ১৬১ রানের মাথায় প্যাট কামিন্সের বলে জস হ্যাজেলউডের হাতে ক্যাচ দিয়ে বাটলার (৩১) আউট হলে এই জুটি ভাঙ্গে। এরপর পঞ্চম উইকেটে জনি বেয়ারস্টোকে সাথে নিয়ে ৯৭ রানের আরেকটি বড় জুটি গড়েন স্টোকস।
স্টোকসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় আর কোনো উইকেট না হারিয়েই ২৫৮ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। স্টোকসের সঙ্গে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন বেয়ারস্টো। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৩৫ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেছেন পেসার প্যাট কামিন্স। আর ৫৪ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন আরেক পেসার পিটার সিডল।
২৬৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাত্র ৪৭ রানের মাথায় ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। একে একে ফিরতে হয় উপরের সারির তিন ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফট (১৬), ডেভিড (৫) ওয়ার্নার এবং উসমান খাওয়াজাকে (২)।

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন স্মিথের পরিবর্তে খেলতে নামা মার্নাস লাবুশানে। চতুর্থ উইকেটে ট্রাভিস হেডের সঙ্গে ৮৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। কিন্তু দলীয় ১৩২ রানে ইংল্যান্ডের স্পিনার জ্যাক লিচের বলে জো রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লাবুশানে।
৫৯ রান করা এই ডানহাতি আউট হলে দ্রুত বিদায় নিতে হয় নতুন ক্রিজে আসা ম্যাথু ওয়েডকেও। লিচের তৃতীয় শিকার হয়ে মাত্র ১ রান করে ফেরেন তিনি। পরবর্তীতে অধিনায়ক টিম পেইন এবং বাঁহাতি হেডের ব্যাটে বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়া। তবে ১৪৯ রানের মাথায় জো ডেনলির হাতে অধিনায়ক পেইনকে (৪) ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান আর্চার।
পেইনের বিদায়ের পর হেড এবং কামিন্সের ব্যাটে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন হেড। আর তাঁর সঙ্গী কামিন্সের সংগ্রহ ১ রান। ইংল্যান্ডের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আর্চার এবং লিচ।
এর আগে লর্ডস টেস্টে টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলপতি টিম পেইন। এরপর খেলতে নেমে গতির ঝড় তোলেন দুই পেসার প্যাট কামিন্স এবং জস হ্যাজেলউড। তাদের সঙ্গে নিজের বোলিং ঘূর্ণির প্রদর্শনী দেখান স্পিনার নাথান লায়ন।
তিন বোলারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ২৫৮ রানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। তারা প্রত্যেকে প্রতিপক্ষের ৩টি উইকেট তুলে নেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে ওপেনার ররি বার্নস এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো ছাড়া আর কেউই হাফসেঞ্চুরির দেখা পাননি।
ইংল্যান্ডের এই রানের জবাবে খেলতে নেমে দলীয় ৭১ রানে চার শীর্ষ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকেই দলকে টেনে তোলেন স্মিভেন স্মিথ। খেলেন ১৬১ বলে ৯২ রানের দারুণ এক ধৈর্যশীল ইনিংস। এই ইনিংস খেলার মাঝ পথে আর্চারের আগুনে গতির বাউন্সারে ঘাড়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন স্মিথ।
অবশ্য ইংলিশ পেসারদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে টানা ৭ ইনিংস পঞ্চাশোর্ধ্ব রান করে রেকর্ড গড়েন তিনি। রেকর্ড গড়ার পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন স্বদেশী মাইক হাসিকে। ‘মিস্টার ক্রিকেট’ টানা ৬টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন। ২১৮ রানে সপ্তম উইকেট হিসেবে পিটার সিডলকে (৯) হারানোর পর আবার মাঠে নামেন স্মিথ।
ব্যক্তিগত ৯২ রানে ক্রিস ওকসের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে আউট হন তিনি। ওকসের করা বলটি বুঝতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছিলেন স্মিথ। তবে বলটি তাঁর প্যাডে আঘাত হানে। এরপর ইংল্যান্ড রিভিউ নিলে থার্ড আম্পায়ার আউট ঘোষণা দেন।
স্মিথের ফেরার পর আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে না পারলে অজিদের ইনিংস গুঁটিয়ে যায় ২৫০ রানে। স্মিথ অস্ট্রেলিয়াকে লিডের স্বপ্ন দেখালেও ৮ রান দূরেই থামতে হয় সফরকারীদের। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪টি উইকেট নিয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
৩টি উইকেট পেয়েছেন ক্রিস ওকস। ২টি উইকেট গেছে জফরা আর্চারের ঝুলিতে। ৮ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ইংল্যান্ড ৭১ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েছিল। তবে এরপর স্টোকস এবং বাটলারের ব্যাটে ৯৬ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করতে পারে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসঃ ২৫৮/১০ (৭৭.১ ওভার) (বার্নস-৫৩, বেয়ারস্টো-৫২; কামিন্স-৩/৬১, হ্যাজেলউড-৩/ ৫৮)
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসঃ ২৫০/১০ (৯৪.৩ ওভার) (খাওয়াজা-৩৬, স্মিথ-৯২; ব্রড-৪/৬৫, আর্চার-২/৫৯)
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসঃ ২৫৮/৫ (ডিক্লে) (৭১ ওভার) (স্টোকস ১১৫, বাটলার-৩১; কামিন্স ৩/৩৬, সিডল ২/৫৪)
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসঃ ১৫৪/৬ (৪৭.৩ ওভার) (লাবুশানে- ৫৯, হেড-৪২; আর্চার-৩/৩২, লিচ-৩/৩৭)