বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ

ছবি: ছবিঃ বিসিবি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
মিশন ছিল সিরিজ জয়ের। শেষ পর্যন্ত সেই মিশন যেখানে গিয়ে ঠেকে, সেখানে ‘মান’ নিয়েই টানাটানি! সিরিজ জয়ের মিশন হয়ে ওঠেছিল হোয়াইটওয়াশ থেকে নিজেদেরকে বাঁচানোর মিশন। শ্রীলঙ্কা সফরে ছন্নছাড়া দলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ এই মিশনেও পুরোপুরি ব্যর্থ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়াডেতে ১২২ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তামিম ইকবালের দল।
প্রথম দুই ম্যাচ দিয়েই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। শেষ ম্যাচটা জিতে নিজেরাই নিজেদের সান্ত্বনা দিয়ে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু শেষ ম্যাচে আরো করুণ দশা হলো বাংলাদেশের। লড়াই তো দূরে থাক, বাংলাদেশকে দেখে মনে হলো; আপাতত ক্রিকেট খেলতে ভুলে গেছে তারা!
বুধবার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের ২৭তম হোয়াইটওয়াশ হওয়ার ম্যাচের পুরোটা সময় বাংলাদেশ হেঁটেছে উল্টো পথে। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই রীতিমতো ধুঁকে ধুঁকে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে ২৯৪ রান তোলে। জবাবে শুরুতেই দিকহারা দলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের ইনিংস ৩৬ ওভারে মাত্র ১৭২ রানেই থেমে যায়।
ব্যাট হাতে সৌম্য সরকারের পরই অবদান রাখায় যেখানে উঠে আসে স্পিনার তাইজুল ইসলামের নাম, সেখানে বাংলাদেশ কেমন লড়েছে; তা বোঝানোর জন্য হয়তো শব্দ খরচের দরকার পড়ে না। বিশাল হারে হোয়াইটওয়াশের বদনাম জোটার ম্যাচে এই নাম দুটিই কেবল বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। বাকি ব্যাটসম্যানরা যোগ দিয়েছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ২৯৫ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আগের দুই ওয়ানডের মতো এই ম্যাচেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল ২ রান করে ফিরলে দলীয় ৪ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। আগের দুই ম্যাচে বোল্ড হয়ে আউট হলেও এই ম্যাচে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তামিম।

আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয় লঙ্কান পেসার কাশুন রাজিথার ওপর চড়াও হতে গিয়ে ব্যক্তিগত ১৪ রানে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন আভিষ্কা ফার্নান্দোর হাতে। আগের দুই ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেললেও এই ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে ইনসাইডএজ হয়ে ফিরেছেন দাসুন শানাকার বলে কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
এরপর মোহাম্মদ মিঠুন (৪), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৯), সাব্বির রহমান (৭) এবং মেহেদী হাসান মিরাজ (৮) দুই অঙ্কের আগেই আউট হয়েছেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে সৌম্য সরকার একাই লড়াই করেছেন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮৬ বলে ৬৯ রান। লঙ্কান স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার গুগলিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন তিনি। এই বাঁহাতির ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ টি চার এবং একটি ছক্কায়।
শেষ দিকে শফিউল ইসলাম (১) এবং রুবেল হোসেন (২) ফিরলে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৭২ রানে। শেষ দিকে নেমে লঙ্কান বোলারদের ওপর চড়াও খেলে খেলেছেন তাইজুল ইসলাম। তার ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংস। এই বাঁহাতির ইনিংসটি সাজানো ছিল ১টি ছয় এবং ৫টি চারে।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে শুরু করেছিল দুই লঙ্কান ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে এবং আভিষ্কা ফার্নান্দো। ওপেনার আভিষ্কাকে (৬) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন পেসার শফিউল ইসলাম। আভিষ্কা ফিরে গেলে করুনারত্নের সঙ্গে দলের হাল ধরেন কুশল পেরেরা। রানের চাকা সচল রাখেন এই দুজন।
যদিও হাফ সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে গিয়েও তা ছুঁতে পারেননি করুনারত্নে। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম কে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। প্যাভিলিয়নে যাওয়ার আগে করেছেন ৬০ বলে ছয়টি চারে ৪৬ রান। পেরেরার সঙ্গে গড়েছেন ৮৩ রানের জুটি। এরপরের ওভারে রুবেল হোসেন তুলে নিয়েছেন কুশল পেরেরার উইকেট। পেরেরাও মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
পেরেরা ফেরার আগে করেন ৫১ বলে পাঁচটি চারে ৪২ রান। ৯৮ রানে তিন উইকেট হারানোর পর কুশল মেন্ডিস এবং অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের হাত ধরে রানের চাকা সচল রাখে শ্রীলঙ্কা। এই দুজন দলের সঙ্গে যোগ করেন আরও ১০১ রান। মেন্ডিস-ম্যাথুসের শতরানের জুটি ভেঙেছেন সৌম্য সরকার। হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মেন্ডিস সৌম্যকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। যাওয়ার আগে ৫৪ রান করেন তিনি।
ব্যক্তিগত ৬৪ রানে থাকা অবস্থায় ম্যাথুসের ক্যাচ ছেড়েছেন সাব্বির। অবশ্য এর পরের ওভারেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা দাসুন শানাকা'র ক্যাচ লুফে নিয়েছেন তিনি। দুটি চার এবং সমান ছক্কায় ১৪ বলে ৩০ রান করে ফেরেন শানাকা। শানাকার পর শিহান জয়সুরিয়াকেও (৭ বলে ১৩ রান) ফেরান শফিউল।
শেষ ওভারে ফিরে যান ম্যাথুস। যাওয়ার আগে করেন ৯০ বলে আটটি চার ও একটি ছক্কায় ৮৭ রান। সৌম্য সরকারের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন শফিউল এবং সৌম্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ-
শ্রীলঙ্কাঃ- ২৯৪/৮ (৫০ ওভার) (ম্যাথুস ৮৭, মেন্ডিস ৫৪, করুনারত্নে ৪৬; সৌম্য ৩/৫৬, শফিউল ৩/৬৮)
বাংলাদেশঃ- ১৭২/১০ (৩৬ ওভার) (সৌম্য ৬৯, তাইজুল ৩৯*; শানাকা ৩/২৭, রাজিথা ২/১৭ )