মালিঙ্গার ম্যাচে ক্ষত বাড়ল বাংলাদেশের
ছবি: ছবিঃ রতন গোমেজ

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
এক ম্যাচে অনেক উপলক্ষ। সবচেয়ে বড় উপলক্ষর নাম নিশ্চয়ই লাসিথ মালিঙ্গা। আরেক উপলক্ষ বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এ ছাড়া বিশ্বকাপ মিশন ভালো যায়নি বলে দুই দলই সতেজ শুরুর সন্ধানে ছিল। সব মিলিয়ে সবাই ধরেই নিয়েছিলো, প্রথম ওয়ানডেটি ধুন্ধুমার হতে যাচ্ছে। কিন্তু এতো আলোচনার ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হলো না। ‘মহানায়ক’ মালিঙ্গার শ্রীলঙ্কার কাছে পাত্তাই পেল না তামিম ইকবালের দল। মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে শ্রীলঙ্কা তুলে নিলো ৯১ রানের বিশাল এক জয়। বিদায়ী ম্যাচে মালিঙ্গার শিকার তিন উইকেট।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে বাংলাদেশকে বড় লক্ষ্য দিয়েছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাটিং করে কুশল জেনিথ পেরেরার সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৪১.৪ ওভারে ২২৩ রানে অলআউট হয়েছে তামিমবাহিনী।
সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল না উঠতে পারার ক্ষত এই সিরিজে মেটাবে ভেবেছিল বাংলাদেশ। উল্টো এই হারে ক্ষত বাড়ল তাদের। এই হারে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই তামিমকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে খেলতে নামা মালিঙ্গা। তাঁর দুর্দান্ত ইয়র্কারে পাঁচ বলে শুন্য রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন তামিম।
দলীয় ৩০ রানে নুয়ান প্রদীপের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন তিনে নামা মোহাম্মদ মিঠুন (১০)। বাঁচার জন??য রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মিডল স্টাম্প স্পর্শ করেছে। ফলে থার্ড আম্পায়ারও আউট দেন।
এর পরের ওভারেই মালিঙ্গার বলে ১৫ রান করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। খানিক পর লাহিরু কুমারার বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহও (৩)।

৩৯ রানে চার উইকেট পড়ে গেলে পঞ্চম উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম এবং সাব্বির রহমান। এই দুজনের ব্যাটে সাময়িক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
দুজন মিলে দলের রানের খাতায় যোগ করেন ১১১ রান। ৫৬ বল খেলে ৬০ রান করে সাব্বির বিদায় নিলে আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। দুর্দিনে টিকতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন (১২) এবং মেহেদী হাসান মিরাজও (২)।
অন্যদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখতে দেখতে ফিফটি তোলে নেন মুশফিক। নুয়ান প্রদীপের বলে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি করেন ৬৭ রান। মুশফিকের বিদায়ের পর মুস্তাফিজুর রহমান ১৪ বলে ১৮ রান করলে তাতে কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমেছে।
প্রথম ওয়ানডেতে টস ভাগ্য যায় স্বাগতিক দলের অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের পক্ষে। তবে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে স্বাগতিকদের শুরুটা ভালো করতে দেয়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে পেসার শফিউল ইসলাম প্রথম আঘাত হানেন লঙ্কান শিবিরে।
ওভারের পঞ্চম বলে শফিউলের করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলকে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন ওপেনার আভিস্কা। ১৩ বলে খেলে ৭ রান করা এই ওপেনারকে বিদায় করেন শফিউল।
প্রথম উইকেট তুলে নিলেও পরবর্তীতে সেই চাপটা লঙ্কানদের উপর ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। উল্টো তাঁদের উপর পাল্টা আক্রমণ করেছে শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যান দিমুথ করুনারত্নে এবং কুশল পেরেরা।
এই দুজনের ব্যাটে দলীয় ১০০ রান পার করে শ্রীলঙ্কা। তাঁদের ৯৭ রানের জুটি ভাঙেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ৩৬ রানে করুনারত্নকে ফেরান মিরাজ।
অধিনায়ক ফিরে গেলেও পেছনে ফেরে তাকাননি পেরেরা। কুশল মেন্ডিসকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। বাংলাদেশের বোলারদের কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে ৮২ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ইনিংসটি বেশি লম্বা করতে পারেননি তিনি।
৩৩ ওভারের চতুর্থ বলে সেঞ্চুরিয়ান পেরেরাকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন পার্ট টাইম বোলার সৌম্য সরকার। শর্ট ফাইন লেগে মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে ধরা পড়েন পেরেরা। ১১১ রানে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। পরের ওভারে কুশল মেন্ডিসকে বিদায় করেন রুবেল।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস এবং লাহিরু থিরিমান্নে মিলে এরপর লঙ্কানদের হাল ধরেন। এই দুজন মিলে জুটি গড়েন ৬০ রানের। ২৫ রানে থিরিমান্নেকে বিদায় করে জুটি ভাঙ্গেন মুস্তাফিজ। পরের ওভারে শফিউলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন থিসারা পেরেরা।
দ্রুত দুই উইকেট হারালেও অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস শ্রীলঙ্কার পক্ষে হাল ধরে খেলতে থাকেন। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলঙ্কার পুঁজি ৩০০'র উপর নিয়ে যান সাবেক এই অধিনায়ক।
৪৮ রান করে মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। খানিক পর শফিউল ইসলামের তৃতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেন ডি সিলভা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিকরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশঃ ২২৩/১০ (৪১.৪ ওভার)
(মুশফিক ৬৭, সাব্বির ৬০; মালিঙ্গা ৩/৩৮)
শ্রীলঙ্কাঃ ৩১৪/৮ (৫০ ওভার)
(পেরেরা ১১১, ম্যাথুস ৪৮, কুশল মেন্ডিস ৪৩; শফিউল ৩/৬২)