এবার ভাগ্য দেবতা হাসবেন তো?

ছবি: ছবিঃ বিসিবি, রতন গোমেজ

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার আগে ৫ বার বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ। ৫বারের মধ্যে ৩বার বড় সাফল্য পেয়েছে টাইগাররা। এছাড়া দুইবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তাঁরা। কিন্তু আজ অব্দি টানা দুই বিশ্বকাপে সাফল্য আসে নি টাইগাদের।
সেই সুযোগ রয়েছে অবশ্য এবার। ২০১৫ বিশ্বকাপের সাফল্যের পর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বড় কিছু করতে চায় মাশরাফি বাহিনী। আর এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল বাংলাদেশের। তাই তাঁদের থেকে বাড়তি কিছু আশা করাই যাচ্ছে এবার।
এখন দেখার বিষয় বিশ্বকাপের মঞ্চে চাপ ধরে রেখে কেমন পারফর্ম করতে পারে তামিম-সাকিবরা। টানা দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপে ভালো খেলে সবাইকে ভুল প্রমাণ করাই লক্ষ্য থাকবে টাইগার বাহিনীর।
১৯৯৯ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপের মঞ্চে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেবার আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অধীনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
প্রথম বার বিশ্বকাপে খেলতে নেমে দারুণ জয় তুলে নেয়া টাইগাররা এরপর বড় অঘটন ঘটিয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। সে সময়ের অন্যতম হট ফেভারিট পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে দিয়েছিল তাঁরা। যা বালাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা অর্জন।
৪ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের মঞ্চে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট. দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের অষ্টম আসরে গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচে হেরে যায়। এমনকি কানাডার মত দলের বিপক্ষেও হারের মুখ দেখতে হয় লাল-সবুজের দলটিক।

২০০৭ সালে উইন্ডিজদের মাটিতে পরের বিশ্বকাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ। সেবারের বিশ্বকাপ দিয়েই ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ নিজেদেরকে ভিন্নরকম এক নতুন পরিচয়ে তুলে ধরে। তরুণ ক্রিকেটারদের হাত ধরে আসে সব থেকে বড় সাফল্য। অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের অধীনে সেবার সাকিব, তামিম এবং মুশফিকরা নিজেদের পরিচয় ক্রিকেট বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন।
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দেয়। এই আসরে বারমুডাকে সাত উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় জয়লাভ করে তাঁরা। ফলে সুপার এইট-এ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এ পর্বে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ।
'ছেলেরা খুব ভালো খেলেছে। আমরা টসে জিতে আগেই বোলিং নিতাম। মাশরাফি অসাধারণ ছিল বল হাতে, তাঁকে দারুন সঙ্গ দিয়েছে রাসেল। স্পিনাররাও বড় ভূমিকা পালন করেছে।
'ওপেনিংয়ে তামিম দুর্দান্ত ছিল, মুশফিকও বড় অবদান রেখেছ। এই জয়ে আমরা প্লে-অফে খেলার আশা করছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা দিন এটি। আজকের জয়টি আমাদের বন্ধু মঞ্জুরুল ইসলাম রানাকে উৎসর্গ করছি।', ভারতের সাথে জয়ের পর অধিনায়ক বাশার।
২০১১ সালে সাকিব আল হাসানকে দেয়া হয় বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব। ২০০৭ সালের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ২০১১ তে এসে ধরে রাখতে পারে নি টাইগাররা। ইংল্যান্ডের মত দলকে হারালেও বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উইন্ডিজদের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ এবং ৭৮ রানে গুঁটিয়ে গিয়েছিল তাঁরা।
অবশ্য সেবার ইংল্যান্ডের পাশাপাশি আয়ারল্যান্ডকে ২৭ রানে এবং নেদারল্যান্ডসকে ছয় উইকেটে হারিয়েছিল সাকিবরা। কিন্তু দলীয় ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের নকআউট জায়গা করে নিতে পারে নি বাংলাদেশ।
'আমরা এই বিশ্বকাপে অনেক বড় সুযোগ হারিয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম প্লে-অফে জায়গা করে নিতে পারব কিন্তু সেটা হয়নি, আমরা সেরাটা দিয়ে খেলতে পারিনি। জেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারিনি আমরা।
'ক্রিকেটে এমন বাজে সময় আসতেই পারে। আমাদের ভুল গুলো শুধরাতে হবে। দর্শকদের ধন্যবাদ জানাই আমাদের সাথে থাকার জন্য। তাঁদেরকে বড় কিছু উপহার দিতে পারিনি, আমরা দুঃখিত', দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারের পর সাকিব।
২০১৫ বিশ্বকাপে এসে আবারও রুপ বদলে ফেলে বাংলাদেশ। সেবার দল হিসেবে সেরাটা দিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনালে জায়গা করে নেয় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায়।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলেছে তারা। অবশ্য ভারতের কাছে হেরে আসর থেকে ছিটকে গিয়েছিল মাশরাফি বাহিনী।
'আমি সত্যি অনেক গর্বিত আজ এবং টিম ম্যানেজম্যান্ট ও কোচিং স্টাফকে ধন্যবাদ জানাই। উইকেট অনেক ভালো ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য আমাদের অনেক ভালো বোলিং করতেই হত। মাহমুদুল্লাহকে অভিনন্দন আসাধারণ শতক হাঁকিয়ে আমাদের জয়ে বড় অবদান রাখার জন্য। রুবেল অনেক দারুন বোলিং করেছে।
'আমার মনে হয় রুবেল অনেক আনন্দিত এমন জয়ে অবদান রাখতে পারার জন্য। ঘরে বসে যারা খেলা দেখছেন তারাও অনেক আনন্দিত। আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছি বলেই জিতেছি',২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বধের পর বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি।
এবারের বিশ্বকাপে কেমন হবে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স, সেটাই দেখার বিষয়। গত আসরের মত ভাগ্য সহায় হবে তো? নাকি ভাগ্যর সাহায্য ছাড়াই দাপট দেখিয়ে নক আউট পর্বে জায়গা করে নেবে বাংলাদেশ। সময়ই বলে দেবে বাংলাদেশের কপালে কী আছে।