বেসিন রিজার্ভে ভাগ্য বদলের আশায় বাংলাদেশ
ছবি: ছবিঃ বিসিবি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল দ্বিতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে সফরকারী বাংলাদেশ। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
তবে এই ম্যাচের আগে টাইগারদের সাহস যোগাতে পারে সর্বশেষ সফরের পারফর্মেন্স। কেননা ২০১৭ সালের সেই সফরে কিউইদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছিলো বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে সাকিব আল হাসান পেয়েছিলেন প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা।
অপরদিকে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম খেলেছিলেন ১৫৯ রানের দারুণ একটি ইনিংস। ফলে প্রথমবারের মতো কিউইদের মাটিতে টেস্টে বিশাল সংগ্রহের দেখা পায় বাংলাদেশ। টাইগারদের এই রানের জবাবে টম লাথামের সেঞ্চুরিতে ৫৩৯ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড।
তবে কিউইদের থেকে ৫৬ রানে এগিয়ে থাকার পরেও ম্যাচটিতে বড় পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে শুধুমাত্র দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে। দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের তোপে মাত্র ১৬০ রানে অলআউট হয়েছিলো তারা।
ফলে ২১৭ রানের লক্ষ্য নির্ধারিত হয় নিউজিল্যান্ডের সামনে। আর এই লক্ষ্য ৭ উইকেট হাতে রেখেই সহজে পার করে স্বাগতিকরা। অবশ্য পরাজয়ের কাতারে থাকলেও দারুণ পারফর্মেন্স উপহার দেয়ার কল্যাণে সেই ম্যাচটি যথেষ্ট স্মরণীয় হয়ে আছে টাইগারদের কাছে।
সেই পারফর্মেন্সে পুনরাবৃত্তি এবারও করতে চাইবে তারা। যদিও এই টেস্টে সাকিব এবং মুশফিক দুইজনই ইনজুরির কারণে অনুপস্থিত থাকছেন। এরপরেও নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে মুখিয়ে থাকবে মাহমুদুল্লাহর দল।
টাইগারদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করতে এই টেস্টের একাদশে ফিরছেন পেস তারকা মুস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিজেই জানিয়েছেন বিষয়টি। তিনি বলেছেন, 'মুস্তাফিজ ইনশাল্লাহ অবশ্যই হয়তো ফিরবে। তবে সেটি কার জায়গায় সেটি সিদ্ধান্ত নিবো টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলে।'

পাশাপাশি প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ ব্যাটিং করার স্মৃতিও আত্মবিশ্বাসের খোরাক হতে পারে টাইগারদের। সেডন পার্কে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে সৌম্য সরকার এবং মাহমুদুল্লাহর জোড়া শতকে ৪২৯ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলো বাংলাদেশ। অপরদিকে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকান ওপেনার তামিম ইকবাল।
সুতরাং দ্বিতীয় টেস্টেও ব্যাটসম্যানদের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে ব্যাপক। বিশেষ করে ভালো ফলাফল পেতে হলে বড় জুটি গড়তে হবে টাইগারদের। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ নিজেও স্বীকার করেছেন এই বিষয়টি। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে পারলে ভালো ভিত গড়ার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। রিয়াদ বলেছেন,
'টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসটি সবসময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আপনাকে একটি ভালো ভিত গড়ে দিবে। আপনি যদি ভালো ব্যাটিং কিংবা বোলিং করেন তাহলে সেটি আপনাকে একটি ভিত দিবে। আপনি ম্যাচের নিয়ন্ত্রকটি কতটুকু আপনার কাছে নিতে পারছেন সেটাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক থেকে প্রথম ইনিংস অবশ্যই অনেক গুরুত্ববহ। আমি চাই যে প্রথম ইনিংসে যদি ব্যাটিং করি তাহলে ভালো একটি জুটি এবং ভালো একটি ইনিংস বিল্ড আপ করতে হবে ও ভালো একটি পুঁজি দাঁড়া করাতে পারি।'
তবে এই টেস্টে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ। কেননা প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে অনেকটা নিস্প্রভ ছিলেন তিন পেসার খালেদ আহমেদ, আবু জায়েদ রাহি এবং এবাদত হোসেন। এবাদত একটি উইকেত নিতে পারলেও বাকি দুই পেসার দুই হাত খুলে রান দেয়ার পাশাপাশি ছিলেন উইকেট শুন্য। আর এই কারণে আগামীকাল রাহি কিংবা খালেদের পরিবর্তে দলে অন্তর্ভুক্তি হতে পারে মুস্তাফিজের।
মুদ্রার উল্টো পিঠ অবশ্য স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭১৫ রান সংগ্রহ করা দলটি বেসিন রিজার্ভেও নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে চাইবে আরও একবার। সেডন পার্কে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এই ম্যাচেও চাইবেন নিজেকে প্রমাণ করতে।
এছাড়াও টাইগারদের হুমকি হিসেবে থাকবেন বাকি দুই সেঞ্চুরিয়ান টম লাথাম এবং জিত রাভাল। শুধু ব্যাটসম্যানেরাই নয়, বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবেন কিউই পেসাররাও। বিশেষ করে সবথেকে বড় হুমকি নিল ওয়েগনার।
শর্ট বল দিয়ে ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করতে সিদ্ধহস্ত এই বাঁহাতি গত টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৭ রানে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ২টি উইকেট। তবে শুধু ওয়েগনারই নন, বিপদের কারণ হবেন অভিজ্ঞ ট্রেন্ট বোল্ট এবং টিম সাউদিও।
হ্যামিল্টন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বোল্টের বোলিং তোপে বেশ গলদঘর্ম হয়েছিলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা। ২৯ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। অপরদিকে সাউদিও কম যাননি। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। নতুন বলে এই তিন পেসার যে কি ভয়ানক হয়ে উঠতে পারেন সেটি প্রথম টেস্টেই দেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা। সুতরাং আগামীকাল বেশ আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামতে হবে তাঁদের।
পিচ এবং কন্ডিশনঃ
সেডন পার্কের মতো ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভের উইকেটও সবুজাভ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে উইকেট থেকে সুবিধা পাবেন পেসাররা। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী টেস্টের চতুর্থ এবং পঞ্চম দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
নজর থাকবে যাদের ওপরঃ
নেইল ওয়েগনারঃ সেডন পার্কে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ত্রাসে পরিণত হয়েছিলেন কিউই পেসার ওয়েগনার। একের পর এক বাউন্সারে রীতিমত নাকাল করে ছেড়েছেন তিনি প্রতিপক্ষকে। এর সুফলও পেয়েছিলেন তিনি যথেষ্ট। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে একাই ধ্বস নামিয়েছিলেন টাইগারদের ব্যাটিং লাইন আপে। সুতরাং আগামীকালও তাঁর প্রতি নজর থাকবে সকলের। ওয়েগনারকে সামলাতে পরিকল্পনা সাজিয়ে মাঠে নামতে হবে রিয়াদ বাহিনীকে। ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম ওয়েগনার।
সৌম্য সরকারঃ হ্যামিল্টন টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারের অভিষেক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ১৪৯ রানের ইনিংসটির সুবাদে একটা সময় লিড নেয়ার স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ। একই সাথে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর সাথে ২৩৫ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। আগামীকাল সাফল্য পেতে হলে তাই সৌম্যর ব্যাটে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। তাছাড়া প্রথম টেস্টে বল হাতেও কার্যকরী ছিলেন সৌম্য। নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গেছিলেন এই মিডিয়াম পেসার। ৬৮ রানে দুই উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ স্কোয়াডঃ তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিঠুন, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাশ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, আবু জায়েদ রাহী ও সাদমান ইসলাম।
নিউজিল্যান্ড স্কোয়াডঃ কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টম লাথাম, জিত রাভাল, রস টেলর, হেনরি নিকোলস, বিজে ওয়াটলিং (উইকেটকিপার), কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, টড অ্যাস্টল, টিম সাউদি, নেইল ওয়াগনার, ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, উইল ইয়াং।