ক্রিকেটের পর ধারাভাষ্যও বদলাতে হবে সাকিবদের!
ছবি: ছবি- ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে মাঠের বাংলাদেশ যেমন নতুন পরাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে, ঠিক তেমনি সমান্তরালে ক্রিকেট রাজনীতিতেও উঁচু গলায় কথা বলার শক্তি অর্জন করছে বাংলাদেশ। কিন্তু ধারাভাষ্য কক্ষে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মতন যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। বাংলাদেশি ধারাভাষ্যকারদের ধারাবিবরণীতে ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নেই, বিনোদনের খোরাক নেই, নেই কোনো নতুনত্ব।
বরং ভুল তথ্য দেয়া, আজগুবি বিশ্লেষণ শুনতে হচ্ছে বাংলাদেশি ও বৈশ্বিক ক্রিকেটের ভক্তদের। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে চেয়ার আগলে রাখা এই ধারাভাষ্যকাররাই ক্রিকেট পাড়ার শক্তিধর ব্যক্তি। যার কারণে নতুন ধারাভাষ্যকারদেরও সুযোগ হয় না বললেই চলে।
বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা মেহরাব হোসেন জুনিয়র, শাহরিয়ার নাফিসরা গত দুই বছর ধরে ধারাভাষ্য করলেও নিয়মিত সুযোগ দেয়া হয় না তাদের। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ধারাভাষ্যকার হিসেবে অভিষেক করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন মেহরাব। নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাওয়া শাহরিয়ার নাফিসকেও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় ধারাভাষ্যকার হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে বিদেশি ধারাভাষ্যকারের অভাব পড়লেই প্রক্সি দিতে ডাক পড়ে নাফিসদের। তবুও ডিপিএল টি-টুয়েন্টির ফাইনালে ধারাভাষ্য দিতে এসে ক্রিকফ্রেঞ্জিকে নাফিস শোনালেন আশার কথা।

‘দেখুন আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নবীন দল। সবকিছুই যেমন নতুন ভাবে শুরু হয়েছে কমেন্ট্রি সেক্টরটাও কিন্তু একটু নতুন। আমাদের সিনিয়র যারা, আতাহার ভাই, শামিম আশরাফ চৌধুরী, তাঁরা দারুণ করছেন। আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ক্রিকেটাররা যখন আসবে, পরবর্তী প্রজন্ম যখন আসবে তখন তাঁরা হয়তো ওই জায়গায় আস্তে আস্তে পূরণ করতে পারবেন। যারা পরবর্তী প্রজন্ম আছে, প্লেয়িং বা নন-প্লেইং ব্যাকগ্রাউন্ডের। তাঁরাও আগ্রহ পাবে। অবশ্যই এখানে কাজ করার সুযোগ আছে।‘
বাংলাদেশ ক্রিকেটের দ্বিতীয় প্রজন্মের ক্রিকেটাররা সময়ের সাথে সাথে ধারাভাষ্যে যোগ দিলেই দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের তারকা ক্রিকেটাররা। মাঠের পারফর্মেন্স দিয়ে যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেটের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন সাকিবরা, ঠিক তেমনি বাংলাদেশি ধারাভাষ্যের ভাগ্যও তাদেরই বদলাতে হবে। সময়ের দোহাই দিয়ে নাফিস বলেছেন,
‘অপেক্ষা অবশ্যই সময় লাগবে। সুযোগ অবশ্যই আসবে। যত বাংলাদেশ ভালো করবে ততই বাংলাদেশি ধারাভাষ্যকারদের, বাংলাদেশি সাংবাদিকদের, বাংলাদেশি মিডিয়া, বাংলাদেশি সংস্থা, সবারই চাহিদা বাড়বে। দল যত অগ্রসর হবে, তত চাহিদা বাড়বে।‘
অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে অবশ্য ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। সিনিয়র ক্রিকেটার যেমন কেভিন পিটারসন, ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, কুমার সাঙ্গাকারাদের বিগ ব্যাশে ম্যাচ খেলার ফাঁকে ধারাভাষ্যকার হিসেবেও কাজ করে। আইপিএলে ড্যারেন স্যামি, ডেভিড হাসি, মার্ক বাউচাররাও ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেছেন। বিপিএল কিংবা ডিপিএল টি-টুয়েন্টিতে এমন কিছু দেখা যায় না।
‘পাশাপাশি দুইটা চালানো একটু কঠিন। যদি আমি কোনো দলের অংশ হিসেবে কোনো টুর্নামেন্টে খেলে থাকি, ওইখানে দলের সাথে থেকে আবার পরে এসে ধারাভাষ্য করা হয় না। যদি কোনো প্লেয়ার টুর্নামেন্টে না খেলে থাকে তাহলে তাঁর জন্য সহজ হয়। যেমন এই টুর্নামেন্টে আমি খেলেছিলাম। কিন্তু এখন আমার খেলা নেই, হয়তো এখন গাজি টিভি, বিসিবি আমাকে সুযোগটা দিয়েছে বলে আমি এখন করছি এবং এটা আমার জন্য শিক্ষণীয়ও বটে।
‘আস্তে আস্তে যত সময় আসবে, যত দ্বিতীয় প্রজন্মের ক্রিকেটার আসবে তাদের জন্য এই সুযোগ থাকবে এবং তাঁরা করবে। এক হিসেবে এই কালচারটা আস্তে আস্তে আসবে। আমি বিশ্বাস করি আসবে। যত সময় যাবে তত নতুন নতুন কালচার আসবে। আমি মনে করি সামনে একই সাথে এই কাজ গুলো করার সুযোগ তৈরি হবে,‘ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যায় বলেছেন নাফিস।
ক্রিকেটার হলেই যে ধারাভাষ্যকার হিসেবে সফল হবে এই ধারনাকেও ভুল বলছেন দেশের হয়ে ২৪ টেস্ট খেলা নাফিস। তাঁর ভাষায়, ‘ক্রিকেটার হিসেবে খেলাটা এক্সপ্লেইন করা হয়তো খুব কঠিন না। তবে প্রডাক্টশনের যেই ডিরেকশন গুলো থাকে, টাইম কখন ব্রেক নিতে হবে, কখন কথা বলতে হবে, কিভাবে বলতে হবে, এটা আমাদের জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং। সহজ না কাজটা, দূর থেকে মনে হয় সহজ। আমরা অনেক সহজেই বলে ফেলি এটা কেন হচ্ছে না, এটা কেন হচ্ছে না। তবে যত করবে ততই শিখবে মানুষ।‘