ক্রাইস্টচার্চে সিরিজ বাঁচানোর মিশনে নামছে বাংলাদেশ

ছবি: ছবি- সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
অমিত প্রত্যাশা নিয়েই নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছে বাংলাদেশ। কিউইদের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলে সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে মুখিয়ে ছিলো তারা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে তারা। সেই পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়াতে আগামীকাল ক্রাইস্টচার্চের হেগলি ওভালে সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে খেলতে নামবে টাইগাররা। বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় আরম্ভ হবে এই ম্যাচটি।
এই সিরিজের আগে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতেও যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম সেটিও জোর গলায় বলেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু আদতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। অন্তত তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে টাইগাররা যেভাবে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছিলো তাতে করে স্বয়ং ক্রিকেট বিধাতাও এখন সিরিজ জয়ের আশাকে ধৃষ্টতা হিসেবে গণ্য করবেন।
নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে কিউই বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানেরা। এরপরও ২৩৩ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয়া গিয়েছিলো মোহাম্মদ মিঠুনের ৬২ এবং সাইফুদ্দিনের ৪১ রানের সুবাদে। কিন্তু এই পুঁজি নিয়ে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ওপর কোনও চাপই সৃষ্টি করতে পারেননি বোলাররা। এক মার্টিন গাপটিলই নিয়ে গিয়েছেন কিউইদের জয়ের বন্দরে।
তবে ৮ উইকেটের বিশাল পরাজয়ের পরও টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি দমে যাননি। হাতে থাকা বাকি দুই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন তিনি। ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টপ অর্ডাররা নিরাশ করবে না বলেও আশাবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে নড়াইল এক্সপ্রেসের ভাষ্য ছিলো,
'সব দলই চায় টপ অর্ডার ভালো করুক। এটা আজ হয়নি। আমরা আশা করছি ক্রাইস্টচার্চে পরবর্তী ম্যাচে ভালো উইকেট হবে ব্যাট করার জন্য। পরবর্তী ম্যাচে আমাদের টপ অর্ডার যদি রানে ফিরে তাহলে ভালো হবে। আশা করি টপ অর্ডার ঘুরে দাঁড়াবে।'
মাশরাফির বক্তব্যে আদৌ অনুপ্রাণিত হবেন কিনা সৌম্য, মুশফিক, লিটন, তামিমরা সেটাই প্রমাণিত হবে আগামীকাল ক্রাইস্টচার্চে। তবে এই মাঠে খেলার আগে পরিসংখ্যান বাংলাদেশের বিপক্ষেই কথা বলছে। এখন পর্যন্ত ক্রাইস্টচার্চের এই মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি মাত্র ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো বাংলাদেশ।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ৭৭ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলো মাশরাফির দল। সুতরাং সবমিলিয়ে আগামীকাল আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামতে হবে সফরকারীদের। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ শিবিরে ত্রাস সৃষ্টি করা ট্রেন্ট বোল্ট, মিচেল স্যান্টনার, লকি ফারগুসনদের সামলাতে যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাই করতে হবে টাইগার ব্যাটসম্যানদের তা বলাই বাহুল্য।

তবে শুধু ব্যাটসম্যানদেরই নয়, কিউইদের পরাজিত করতে হলে বোলারদেরও করণীয় রয়েছে অনেক। নিস্প্রভ বোলিংয়ের যে নমুনা নেপিয়ারে দেখা গিয়েছিলো তার থেকে বের হয়ে আসার জন্য সর্বোচ্চটা ঢেলে দিতে হবে মুস্তাফিজ, মাশরাফি, মিরাজদের।
এদিকে আগামীকালের ম্যাচে ক্রাইস্টচার্চের বাউন্সি উইকেটের কথা মাথায় রেখে একাদশে একজন বাড়তি পেসার নিয়ে নামতে পারে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে সাব্বির রহমানের পরিবর্তে দলটিতে অন্তর্ভুক্তি ঘটতে পারে রুবেল হোসেনের।
তবে আগের ম্যাচে দারুণ পারফর্মেন্স উপহার দেয়ায় মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন যে একাদশে থাকছেন তা নিশ্চিত। এছাড়া আর কোনও পরিবর্তন থাকার সম্ভাবনা নেই।অপরদিকে নেপিয়ারে বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে দারুণ পারফর্মেন্স করায় অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
পিচ এবং কন্ডিশনঃ
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে নেপিয়ারের উইকেট বরাবরই বেশ ব্যাটিং বান্ধব। এখানে ৩০০ ছাড়ানো দলীয় ইনিংস রয়েছে ৬টি। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংসটি স্কটল্যন্ডের। ক্যানাডার বিপক্ষে ২০১৪ সালে ৯ উইকেটে ৩৪১ রান করেছিলো স্কটিশরা। সুতরাং আগামীকালও ব্যাটসম্যানেরা সুবিধা পেতে পারেন উইকেট থেকে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। তবে অতিরিক্ত বাউন্স এবং সুইংও থাকতে পারে উইকেটে। সেক্ষেত্রে পেসারদের জন্যও সহায়ক হবে।
মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)-
ভারতের বিপক্ষে আশানুরূপ পারফর্ম না করতে পারলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে দারুণভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন কিউই ওপেনার গাপটিল। ৪ ছয় এবং ৮ চারের সাহায্যে ১১৬ বলে ১১৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি। আগামীকাল ম্যাচটিতেও তাঁর ব্যাটে তাকিয়ে থাকবে স্বাগতিকরা।
তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)-
আগের ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। মাত্র ৫ রান করে আউট হয়েছিলেন তিনি। এবার দ্বিতীয় ম্যাচে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় মরিয়া হয়েই মাঠে নামবেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচে ৫৩৫ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তিন নম্বরে আছেন তামিম। কিউইদের মুখোমুখি হয়ে পাঁচটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশ স্কোয়াডঃ
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, নাঈম হাসান।
নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড:
কেন উইলিয়ামসন (প্রথম দুই ম্যাচের অধিনায়ক), টড অ্যাস্টেল, ট্রেন্ট বোল্ট, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, লকি ফার্গুসন, মার্টিন গাপটিল, ম্যাট হেনরি, টম লাথাম (শেষ ম্যাচের অধিনায়ক), কলিন মুনরো (শেষ ওয়ানডে), জিমি নিশাম, হেনরি নিকোলাস, রস টেইলর, মিচেল স্যান্টনার ও টিম সাউদি।