মেলবোর্নে দুশ্চিন্তায় অস্ট্রেলিয়া

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
মেলবোর্ন টেস্টের শেষ সেশনে ভারতের পাঁচ উইকেট তুলে নিলেও দুশ্চিন্তা নিয়েই মাঠ ছেড়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৫৪ রানে ৫ উইকেট হারানো ভারত দিন শেষ করেছে ৩২৬ রানের বড় লিড নিয়ে। তৃতীয় দিন বল হাতে দাপট দেখিয়েছেন দু'দলের পেসাররা। দিনের শুরুতে ভারতের পেসার জাস্প্রিত বুমরাহ'র অসাধারণ বোলিং এবং দিনের শেষ সেশনে অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সের এক স্পেলে ভারতের মিডেল অর্ডারে ব্যাটিং ধ্বস, সবকিছুরই সাক্ষী হয়েছে বক্সিং ডে টেস্ট। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা প্রথম দুই সেশনে নাকানি চুবানি খেয়েছে জাস্প্রিত বুমরাহ'র সামনে। আর ব্যাটিংয়ে নেমে কামিন্সের বোলিং তোপে এক সেশনেই ৫ উইকেট হারিয়েছে ভারত। তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে অস্ট্রলিয়া অল আউট হয়েছিল ১৫১ রানে। জাস্প্রিত বুমরাহ'র শিকার ৩৩ রানে ৬ উইকেট।
দিনের শুরুতে বিনা উইকেটে ৮ রান নিয়ে খেলা শুরু করে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিকে দেখে শুনে খেললেও আগের দিনের সঙ্গে স্কোরবোর্ডে ১৬ রান যোগ করার পরই অস্ট্রেলিয়ার শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ইশান্ত শর্মা। ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চকে মাত্র ৮ রানে বিদায় করেন তিনি। খানিক পর আরেক ওপেনার মার্কাস হ্যারিসকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করে ২২ রানে বিদায় করেন জাস্প্রিত বুমরাহ।
শন মার্শের সঙ্গে ১৭ রানের জুটি গড়ার পর উসমান খাওয়াজা ফেরেন জাদেজাকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে। এরপরই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের নাকানি চুবানি খাওয়ান পেসার জাস্প্রিত বুমরাহ। বোলিংয়ে এসে লাঞ্চের ঠিক আগে শন মার্শকে দুর্দান্ত এক স্লো ইয়র্কার দিয়ে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন তিনি। লাঞ্চের পর ট্রাভিস হেডকে বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন এই পেসার। দলীয় ১০২ রানে মিচেল মার্শকে বিদায় করে দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন স্পিনার জাদেজা।
১০২ রানে ৬ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে হাল ধরেন প্যাট কামিন্স এবং অধিনায়ক টিম পেইন। ১৩৮ রানে কামিন্সকে সাজঘরে ফেরান মোহাম্মদ শামি। খানিকপর টিম পেইনকে উইকেটের পেছনে আউট করে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন বুমরাহ। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরাতেও বেশি সময় নেন নি বুমরাহ। দলীয় ১৫১ রানে নাথান লায়ন এবং জশ হ্যাজেলউডকে তুলে ৬ উইকেট নিয়ে মাঠ ছাড়েন এই পেসার।
অজিদের পক্ষে সর্বোচ্চ ২২ রান করেছেন অধিনায়ক টিম পেইন এবং ওপেনার মার্কাস হ্যারিস। এছাড়া ট্রাভিস হেড ২০ এবং উসমান খাওয়াজা করেন ২১ রান। বুমরাহ'র ৬ উইকেট শিকারের দিনে প্রথম ইনিংসে ভারত লিড দাঁড়ায় ২৯২ রান। ৬ উইকেট নেয়ার দিনে অভিষেকের বছরেই সবচেয়ে বেশী উইকেট নেয়ার ৩৯ বছর আগের রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের নাম লেখান বুমরাহ। সেই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৫ উইকেট শিকারী প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে মাঠ ছাড়েন তিনি।

জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ভারত শুরুতে দেখে শুনে খেললেও দলীয় ২৮ রানে প্যাট কামিন্সের বাউন্সারে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার হানুমা বিহারি। প্রথম ইনিংসেও কামিন্সের বাউন্সারেই সাজঘরে ফিরেছিলেন তিনি। এরপরই শুরু হয় ভারতের ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মেলা। পুরো সিরিজে এখন পর্যন্ত দারুন ব্যাট করা চেতেশ্বর পূজারা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় হুমকি। প্রথম ইনিংসে শতক হাঁকানো এই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরাতে বেশি সময় নেন নি কামিন্স। নিজের দ্বিতীয় বলে লেগ সাইডে কবজির জোরে খেলতে গিয়ে লেগ গালিতে মার্কাস হ্যারিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন সিরিজে দুটি শতক হাঁকানো পূজারা। একই ওভারে একই ভঙ্গীতে অধিনায়ক ভিরাট কোহলিকে ০ রানে বিদায় করেন কামিন্স।
কোহলির সামনে সুযোগ ছিল এই ইনিংস দিয়ে দেশের বাইরে একবর্ষে সবচেয়ে রানের রেকর্ড করার। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক গ্রায়াম স্মিথের করা ১২১২ রান থেকে মাত্র ৭৪ রান দূরে ছিলেন তিনি। কিন্তু ০ রানেই লেগ গালিতে মার্কাস হ্যারিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভারতের এই অধিনায়ক। বিদেশের মাটিতে ১১৩৮ রান নিয়ে বছর শেষ করেন তিনি। তবে প্রথম ইনিংসে ভারতের পক্ষে রাহুল দ্রাবিড়ের গড়া ১১৩৭ রানের রেকর্ডটি ভেঙ্গেছিলেন তিনি।
দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া ভারতকে উদ্ধার করতে পারেন নি আজিঙ্কে রাহানেও। মেলবোর্ন টেস্ট শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন এই টেস্টেই শতক হাঁকাতে চান তিনি। শুধু শতকই নয় দিশতকেও চোখ রয়েছে তাঁর। কিন্তু রাহানেকেও ০ রানেই বিদায় করেন কামিন্স। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৩৪ রান করতে সক্ষম হন ভারতের এই মিডেল অর্ডার ব্যাটসম্যান।রাহানেকে ফিরিয়ে হ্যাট্রিকের সুযোগও তৈরি করেছিলেন কামিন্স। কিন্তু রোহিত শর্মাকে আর আউট করতে পারেন নি এই পেসার।
কামিন্সের এক স্পেলে ভেঙ্গে যায় ভারতের মিডেল অর্ডারের দুর্গ। খানিক পর বোলিংয়ে এসে প্রথম ইনিংসে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকা রোহিত শর্মাকে ৫ রানে স্লিপে শন মার্শের হাতে ক্যাচ আউট করে বিদায় করেন জস হ্যাজেলউড। এরপর রিশাব পান্ট আর ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল মিলে হাল ধরে খেলে দিনের খেলা শেষ করেন। দিন শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ৫৪ রান তুলতে সক্ষম হয় ভারত। পান্ত ৬ এবং মায়াঙ্ক ২৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নামবেন। প্যাট কামিন্স ১০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
এর আগে দিনের শুরুতে ৮ রান নিয়ে খেলতে নেমে মাত্র ১৫১ রানেই অল আউট হয় অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে কোন ব্যাটসম্যানকেই উইকেটে থিতু হতে দেন নি জাস্প্রিত বুমরাহ।
এর আগে প্রথম ইনিংসে চেতেশ্বর পূজারার ১০৬ এবং ভিরাট কোহলির ৮২ রানের উপর ভর করে ভারত ৭ উইকেটে ৪৪৩ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। এছাড়া রোহিত শর্মা অপরাজিত ছিলেন ৬৩ রানে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৭২ রান দিয়ে কামিন্স নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
ভারত প্রথম ইনিংসঃ ৪৪৩/৭ (১৬৯.৪ ওভার) (পূজারা ১০৬, কোহলি ৮২), (কামিন্স ৩/৭২)
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসঃ ১৫১ অলআউট (৬৬.৫ ওভার) (পেইন ২২, মার্কাস হ্যারিস ২২) (জাস্প্রিত বুমরাহ ৬/৩৩)
ভারত দ্বিতীয় ইনিংসঃ ৫৪/৫ (২৭ ওভার) (পান্ত ৬*, আগারওয়াল ২৮*), (কামিন্স ৪/১০)