২০১৮ সালের পাঁচ আলোচিত ঘটনা

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
২০১৮ সাল বাংলাদেশ ক্রিকেটে বেশ কিছু আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা ঘটেছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে ঘটনা গুলো বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের উদ্দেশ্যে বছরের আলোচিত ঘটনা গুলো তুলে ধরা হল।
শ্রীলঙ্কায় সাকিবের মাঠ ছাড়ার হুমকিঃ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আয়োজিত নিদাহাস ট্রফিতে এই ঘটনা ঘটেছিল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের এক পর্যায়ে আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাঠ ছাড়ার হুমকি দেন অধিনায়ক সাকিব।
টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টের সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করছিল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রান প্রয়োজন বাংলাদেশের। সেই ওভারে লঙ্কান পেসার উদানার দুটি বল কাঁধের ওপর দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আম্পায়ার নো-বলের কোন সংকেত দেননি, এমনকি বোলারকে বাড়তি বাউন্সারের জন্য সতর্কও করেন নি। এতে ভীষণ চটে যান ডাগ আউটে থাকা সাকিব। মাঠের মধ্যে আম্পায়ারদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। খানিক বাদে রুদ্রমুর্তিতে দেখা দেন অধিনায়ক সাকিব।
ম্যাচে তখন তুমুল উত্তেজনা। সাকিবকে থামাতে ছুটে আসেন চতুর্থ আম্পায়ার। অধিনায়ক সাকিব ম্যাচ বয়কটের কথা বলেন এবং দুই ব্যাটসম্যানকে মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দেন। কিছু সময়ের জন্য খেলা বন্ধ থাকে সেই ম্যাচে। শেষ পর্যন্ত উত্তেজিত সাকিব ড্রেসিংরুমে ফিরে আসেন। যদিও শেষ মুহূর্তে মাহমুদুল্লাহর ফিনিশিং টাচে জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ।
সাব্বির রহমানের নিষেধাজ্ঞাঃ বিগত ২ বছরে বেশ কয়েকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন সাব্বির রহমান। নারী ঘটিত ব্যাপারের পাশাপাশি ক্রিকেট মাঠে হাতাহাতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। যার জন্য আর্থিক জরিমানা এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছিলেন জাতীয় দলের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

কিন্তু এবছরের আগস্টে ঘটানো ঘটনা তাঁকে নিষিদ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক সমর্থককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেই দর্শককে হুমকিও দিয়েছিলেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ডিসিপ্লিনারি কমিটি সাব্বির রহমানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে। এই সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন সাব্বির।
মোসাদ্দেক হোসেনের নারী কেলেঙ্কারিঃ জাতীয় দলের তরুণ ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জন্য ২০১৮ সাল এক বিভীষিকার নাম। চলতি বছরের অগাস্টে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, অভিযোগটি করেছেন তাঁর স্ত্রী সামিয়া শারমিন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলাও করেছেন স্ত্রী সামিয়া। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে থাকাকালীন সময়েই তরুণ মোসাদ্দেকের সাথে সামিয়ার বিয়ে হয়। কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর খ্যাতি ও যশ যতই বেড়েছে, ততই স্ত্রী সামিয়া শারমিন এর প্রতি নির্যাতন বেড়েছে বলে অভিযোগ করে মামলা করেন সামিয়া।
সে কারণে বিসিবির দারস্তও হতে হয়েছে মোসাদ্দেককে। যদিও শেষ পর্যন্ত বিসিবি কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি মোসাদ্দেকের ব্যাপারে। পারিবারিক সমস্যা বিধায় তাঁকে শুধুমাত্র সতর্ক করে দিয়েছে বিসিবি। তবে এরপর পর জাতীয় দলের দুয়ার খোলেনি এই তরুণের।
তামিম ইকবালের এক হাতে ব্যাটিংঃ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। এশিয়া কাপে দলের জন্য এক হাতে ব্যাটিং করেছেন তামিম। দলের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান, দেখিয়েছেন অদম্য সাহস।
১৫ সেপ্টেম্বর, টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েছিলেন তামিম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম দিকে লাসিথ মালিঙ্গার করা শর্ট বল বাঁহাতের কব্জিতে লাগে তামিমের, সাথে সাথেই মাঠ ছেড়ে উঠে যান তিনি। বিপদে ছিল বাংলাদেশ দল, মুশফিকুর রহিম দলকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাঁকে সঙ্গ দেয়ার মতো শেষ পর্যন্ত কেউ ছিল না মাঠে। নবম উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ১৯ বল বাকি ছিল বাংলাদেশ দলের। মাঠে ছিলেন মুশফিক একাই, তাঁকে সঙ্গ দিতে এক হাতে ব্যাট নিয়ে নেমে পড়লেন কব্জিতে আঘাত পাওয়া তামিম।
লঙ্কান পেসার সুরাঙ্গা লাকমলের এক বল ভালোভাবেই মোকাবেলা করেন তিনি। তামিমের সেই সাহসিকতায় শেষের দিকে আরও ৩২ রান দলের খাতায় যোগ করতে পেরেছিলেন মুশফিক। ভাঙ্গা হাত নিয়ে দুই রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম। আর সেই বাংলাদেশ জিতেছিল ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে।
বাংলাদেশি আম্পায়ারের বিতর্কিত নো-বলঃ বছরের একেবারে শেষ দিকে এসে আরেকটি কালিমা লেগে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে। আম্পায়ারিং বিতর্কে জড়িয়ে যান বাংলাদেশি আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। যা নিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। প্রশ্নবিদ্ধ হয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রন সংস্থা আইসিসির করা রিভিউ সিস্টেমও।
২২ ডিসেম্বর, উইন্ডিজদের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচ এবং বাংলাদেশ দলের ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ ম্যাচে ঘটনাটি ঘটে। মিরপুরে সফরকারী দলের দেয়া ১৯০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করছিল বাংলাদেশ দল। ভালো অবস্থানেও ছিল টাইগাররা। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে উইন্ডিজ পেসার ওশানে থমাসের দুটি বৈধ বলকে নো-বলের সংকেত দিয়েছিলেন মাঠে থাকা আম্পায়ার তানভির আহমেদ। যার একটি বলে আউট হয়েছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। কিন্তু আম্পায়ারের দেয়া নো-বলের দরুন বেঁচে যান লিটন, বিতর্কের জন্ম তখনই।
বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল থমাসের পায়ের কিছু অংশ দাগের ভেতরে। ভুল সিদ্ধান্তে রাগান্বিত হয়ে আম্পায়ার তানভিরের দিকে তেড়ে এসে নো বলের সিদ্ধান্ত রিভিউ করার ভঙ্গি করেন উইন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। আম্পায়ারদের সাথে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি, যে কারণে খেলা বন্ধও ছিল প্রায় আট মিনিটের মতো। যদিও শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারের দেয়া সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল। খেলা মাঠে ঠিকই গড়িয়েছিল, জিতেছিল উইন্ডিজ দলই। তবে বছরের শেষটা বিতর্ক দিয়েই কেটেছে বাংলাদেশের।