বিতর্কিত ম্যাচে সিরিজ জিতল উইন্ডিজ

ছবি: উইন্ডিজ দল

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বিতর্কিত ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫০ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ৩ ম্যাচ টি-টুয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে উইন্ডিজ। উইন্ডিজের দেয়া ১৯১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ১৪০ রানে।
উইন্ডিজের দেয়া বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ দলীয় ২২ রানেই ওপেনার তামিম ইকবালকে হারায়। তিনি মাত্র ৮ রান করে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন।
দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়ে সেই বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন লিটন ও সৌম্য। দ্বিতীয় উইকেটে এই দুজনে যোগ করেন ৪৩ রান। এর মাঝে চতুর্থ ওভারে ওশান থমাসের করা শর্ট লেন্থের বলটি স্ট্রাইকে থাকা লিটন দাস তুলে মারতে গিয়েছিলেন।
এই বলটি নিয়েই বিতর্কের শুরু। টাইমিংয়ের গড়বড়ের কারণে মিড অফ ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তোলেন লিটন। কিন্তু আম্পায়ার তানভির আহমেদ নো বলের সিগনাল দেন।
কারণ বিগ স্ক্রিনে দেখা যায় ফাস্ট বোলার থমাসের বুটের কিছু অংশ দাগের ভেতরে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বলটি নো বল হওয়ার কোন উপায় নেই। এর ফলে দীর্ঘ্য আট মিনিটের মতো খেলা বন্ধ থাকে।
দুই অধিনায়কের সাথে লম্বা সময় আলোচনা শেষে অবশ্য বলটি নো বলেই ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার। এর পরের ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন সৌম্য। তিনি ৯ রান করে লং অনে ক্যাচ দিয়েছেন কটরেলের হাতে।
এর পরের বলেই টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান লং অনে একই কায়দায় ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেছেন কোনো রান তোলার আগেই। এর পরই শুরু হয় টাইগার ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়া।
মুশফিক ১ রান করে কিমো পলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের হাতে। এরপর মাহমুদুল্লাহকে ব্যক্তিগত ১১ রানে ফিরিয়েছেন পল।
লিটন দাসের ব্যাট থেকে এসেছে বাংলাদেশের ইনিংসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। তিনি ৪৩ রান করে কিমো পলের বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ব্র্যাথওয়েটের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে।

আরিফুল ও সাইফুদ্দিনও বেশিক্ষণ উইকেটে স্থায়ী হতে পারেননি। আরিফুল রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছেন। আর সাইফুদ্দিন ফিরেছেন ৫ রান করে। এই দুজনও পলের শিকার হয়েছেন।
শেষ দিকে মিরাজ আবু হায়দার মিলে প্রতিরোধ গড়েছিলেন। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তা। মিরাজ ১৯ রান করে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে কটরেলের বলে অ্যালেনের হাতে ক্যাচ দিলে এই জুটি ভাঙে।
মুস্তাফিজ ব্যক্তিগত ৮ রানে ব্র্যাথওয়েটের বলে বোল্ড হলে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪০ রানে। রনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২২ আন করে। মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট উইন্ডিজের সেরা বোলার কিমো পল।
এর আগে টাইগার স্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শুরু থেকে ঝড় তোলা উইন্ডিজদের দুইশ'র নিচে আটকাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত মিরপুরে ১৯.২ ওভার ব্যাটিং করে সব উইকেট হারিয়ে ১৯০ রান সংগ্রহ করে টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
ইনিংসের প্রথম ৫৬ বলে লুইস ঝড়ে বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল ব্যাকফুটে। ২০০ রানের পুঁজি অনায়েসে করতে পারত সফরকারীরা। কিন্তু উইন্ডিজদের আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনার কাজটা দারুন করেছেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব এবং রিয়াদ।
শেষ ৬০ বলে মাত্র ৬৮ রান তুলতেই তাঁরা হারিয়েছে শেষ ৮ উইকেট। শুরুতে টস জিতে উইন্ডিজদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি ওপেনার এভিন লুইসের ব্যাটিং তাণ্ডবে মনে হচ্ছিল খাল কেটে কুমির ডেকে এনেছে টাইগাররা।
ওভার প্রতি ১৫ রান করে সংগ্রহ করতে শুরু করে দুই ওপেনার শাই হোপ এবং এভিন লুইস। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে ৭৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় সফরকারী দল। সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ১২ বলে ২৩ রান করা হোপ।
পরের ওভারেই আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। তিনে নামা ব্যাটসম্যান কিমো পলকে ফিরিয়েছেন তিনি। কিন্তু এক প্রান্ত দিয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেই যাচ্ছিলেন লুইস। ১৮ বলে তুলে নিয়েছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক, যেখানে ৫টি ছয় এবং তিনটি চার ছিল তাঁর।
রভম্যান পাওয়েলকে নিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন লুইস। ব্যাট হাতে মারকুটে মেজাজে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে ফেরান স্পিনার রিয়াদ। ৩৬ বলে ৮৯ রান করা লুইসকে সরাসরি বোল্ড করেন তিনি।
উইন্ডিজদের দলের রান তখন ১২২, ৯.২ ওভারে। লুইসকে আউট করে টাইগারদের খেলায় ফিরিয়ে আনা রিয়াদ পরের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পরে ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মত ০ রানে সাজঘরে ফেরেন শিমরন হেটমায়ার।
জোড়া উইকেট হারালেও নিকলাস পুরানের ব্যাটে রানের চাকা সচল রাখে উইন্ডিজরা। পুরান এবং রভম্যান পাওয়েল মিলে দলকে ১৫০ রানের পুঁজি এনে দেন ১৩ ওভারের মধ্যে। কিন্তু এরপরই ম্যাচে দারুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
মুস্তাফিজুর রহমান এবং সাকিব আল হাসানের জোড়া ব্রেক থ্রুতে উইন্ডিজদের আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনে বাংলাদেশ। পুরান ছাড়া আর কোন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান বেশীক্ষণ উইকেটে থিতু হতে পারেন নি।
লুইসের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান করে পুরান বিদায় নিলে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৯.২ বলে ১৯০ রানে অল আউট হয় সফরকারীরা। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব, রিয়াদ এবং মিরাজ নেন ৩টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
উইন্ডিজঃ ১৯০ অল আউট (১৯.২ ওভার)
(লুইস ৮৯, পুরান ২৯), (সাকিব ৩/৩৩, মাহমুদুল্লাহ ৩/১৮)
বাংলাদেশঃ ১৪০ অল আউট
(লিটন৪৩, মিরাজ ১৯ ও রনি ২২*) ( কিমো পল ৫/১৫, অ্যালেন ২/১৯)