উইন্ডিজ বধ কাব্যে রাঙ্গা হোক সিলেটের 'অভিষেক'

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত টেস্ট এবং টি টুয়েন্টি অনুষ্ঠিত হলেও কোনও ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার বাংলাদেশ এবং উইন্ডিজের মধ্যকার তৃতীয় ওয়ানডে দিয়ে সেই অপেক্ষাও ঘুচতে যাচ্ছে সিলেটের।
আগামীকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে খেলতে নামছে টাইগাররা। আর এই ওয়ানডেটি জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয়ারই লক্ষ্য থাকবে মাশরাফি বাহিনীর। পাশাপাশি রাঙ্গিয়ে রাখতে চাইবে সিলেটের ওয়ানডে 'অভিষেক'।
যদিও কাজটি যে সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য তা বলাই বাহুল্য। কেননা প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটের পরাজয়ের পর দ্বিতীয়টিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে সফরকারী উইন্ডিজ। সুতরাং সিলেটের মাঠেও সেই জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইবে তারা।
এর আগের ম্যাচে বেশ কয়েকটি ক্যাচ মিসের মাশুল গুনতে হয়েছিলো বাংলাদেশকে। বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে আড়াইশ ঊর্ধ্ব রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েও উইন্ডিজদের আটকাতে পারেনি তারা। এবার তাই সিলেটের মাঠে ভুলগুলো শুধরে খেলতে নামতে চাইবে লাল সবুজের দেশটি
এদিকে সিরিজ নির্ধারণী এই ম্যাচটিতে বাংলাদেশের একাদশে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৪ এবং ০ রানে আউট হওয়া ইমরুল কায়েসের বিকল্প চিন্তা করতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাঁর বদলি হিসেবে সিলেটে খেলতে পারেন মোহাম্মদ মিঠুন। সুযোগ থাকতে পারে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনেরও।
তবে একাদশে কয়জন স্পিনার এবং পেসার থাকছেন সেটি নির্ধারণ করা হবে সিলেটের উইকেট কিরূপ হবে তার ওপর ভিত্তি করে। যদিও ধারণা করা যাচ্ছে গত দুই ওয়ানডের মতো এই ম্যাচেও তিন পেসার এবং দুই স্পেশালিষ্ট স্পিনার থাকছেন দলে। অর্থাৎ মাশরাফি এবং মুস্তাফিজের সাথে তৃতীয় পেসার হিসেবে থাকবেন রুবেল হোসেন।
আর সাকিবের সাথে টাইগারদের স্পিন বিভাগ সামলানোর দায়িত্বে থাকবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আর তিন স্পিনার খেলানোর পরিকল্পনা থাকলে সেক্ষেত্রে রুবেলের পরিবর্তে জায়গা মিলতে পারে নাজমুল ইসলাম অপুর।
মুদ্রার উল্টো পিঠ অবশ্য উইন্ডিজদের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটের দারুণ একটি জয়ে সমতা ফিরিয়ে আনায় অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই মাঠে নামার জোর সম্ভাবনা রয়েছে তাদের।
মুখোমুখিঃ
দ্বিতীয় ওয়ানডেটি সহ এখন পর্যন্ত মোট ৩৩টি ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ এবং উইন্ডিজ। যেখানে ২১টি ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। সুতরাং আগামীকাল মাঠে নামার আগে এই পরিসংখ্যানটিও আত্মবিশ্বাস যোগাবে সফরকারীদের।

পিচ এবং কন্ডিশনঃ
পরিসংখ্যান বলছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে বরাবরই বেশ সুবিধা পেয়ে থাকেন স্পিনাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে এই মাঠে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন টাইগার স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
যদিও টেস্ট এবং ওয়ানডের উইকেটের মাঝে ফারাক যথেষ্ট তবে স্পিন নির্ভর বাংলাদেশ দলের সুবিধার্থে আগামীকাল স্পিন সহায়ক উইকেটই বানানো হতে পারে। আর তেমনটি হলে একজন বাড়তি স্পিনার দেখা যেতে পারে একাদশে।
স্পট লাইটে থাকবেন যারাঃ
সাকিব আল হাসানঃ
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ৬৫ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তাঁর ইনিংসটির কল্যাণে উইন্ডিজদের সামনে ২৫৬ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে মোট ১৪টি ওয়ানডেতে ৪২.২৫ গড়ে ৫০৭ রান সংগ্রহ করেছেন সাকিব। যেখানে তিনি হাঁকিয়েছেন ৬টি অর্ধশতক। আগামীকাল সিলেটের মাঠেও তাঁর দিকে চেয়ে থাকবে দল।
মাশরাফি বিন মর্তুজাঃ
প্রথম ওয়ানডেতে টাইগারদের জয়ের নায়ক ছিলেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। ৩০ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সিলেটে নিজের প্রথম ম্যাচে তাই পাদপ্রদীপের আলোতেই থাকছেন এই পেসার।
এখন পর্যন্ত উইন্ডিজদের বিপক্ষে ১৪টি ওয়ানডে ৪.৫৮ ইকোনমি রেটে ২২টি উইকেট শিকার করেছেন মাশরাফি। যেখানে ৪ উইকেট শিকার করার কীর্তি গড়েছেন একবার।
শাই হোপঃ
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের নায়ক ছিলেন এই উইন্ডিজ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তাঁর অপরাজিত ১৪৬ রানের ইনিংসটিই ছিটকে দিয়েছিলো বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে।
২৫৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলকে জয় এনে দিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। সুতরাং আগামীকালের ম্যাচে আবারও বাংলাদেশের হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারেন শাই হোপ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ ম্যাচে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে ফেলেছেন হোপ।
ওশানে থমাসঃ
ক্যারিবিয়ান এই গতি দানব গত ম্যাচে ৫৪ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। ১৪০ এর উপরে গতিতে বোলিং করা এই পেসারকে সামলাতে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়েছিলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। সিলেটেও গতি দিয়ে টাইগার বধ করতে চাইবেন ২ ম্যাচে ৪ উইকেট শিকার করা ২১ বছর বয়সী থমাস।
বাংলাদেশ স্কোয়াডঃ
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, আবু হায়দার রনি, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, নাজমুল ইসলাম অপু, আরিফুল হক, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ সাইফুদিন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন।
উইন্ডিজ স্কোয়াডঃ
রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), ফাবিয়ান অ্যালেন, দেবেন্দ্র বিশু, সুনীল আমব্রিস, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, ড্যারেন ব্রাভো, রস্টন চেজ, চন্দরপল হেমরাজ, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), কিমো পল, কাইরন পাওয়েল, কিমার রোচ, মারলন স্যামুয়েলস, ওশানে থমাস।