শাই হোপের কাছেই হারল বাংলাদেশ

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
মিরপুরের হোম অফ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলকে একাই হারিয়েছেন শাই হোপ। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকানোর দিন ব্যক্তিগত ১৪৬ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। ডানহাতি এই উইকেট রক্ষকের সেঞ্চুরির উপর ভর করে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা আনতে সক্ষম হয়েছে উইন্ডিজরা।
এদিন দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও একপ্রান্ত আগলে ধরে ব্যাট করছেন শাই হোপ। বাংলাদেশের কোন বোলারকেই পাত্তা দেন নি, দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং করে শেষ ওভার পর্যন্ত উইকেটে থিতু হয়ে ব্যাট করেছেন।
১১৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর ৪৯ তম ওভারে এসে মুস্তাফিজুর রহমানের ওভারে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি। এরপর শেষ ওভারে হোপ এবং কিমো পলের ব্যাটে ভর করে ২ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় উইন্ডিজরা।
এদিন ২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চন্দরপল হেমরাজের উইকেট তুলে নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে হাল ধরেন শাই হোপ এবং ড্যারেন ব্রাভো।
দুজন মিলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৬৫ রান। তবে কিন্তু ইনিংসের ১৭ তম ওভারে এসে রুবেলের ব্যাক অফ দা লেন্থের বলকে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ব্রাভো। তিনি বিদায় নেন ২৭ রান করে।
ব্রাভো ফিরলেও স্যামুয়েলসকে সঙ্গে নিয়ে ফের জুটি গড়েন শাই হোপ। দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে দেখে শুনে রান যোগ করতে থাকেন। সেই সঙ্গে ফিফটিও তুলে নেন হোপ। তবে অন্যপ্রান্তে থাকা মারলন স্যামুয়েলসকে বিদায় উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিইয়ে বিদায় করেন মুস্তাফিজ।
স্যামুয়েলসকে ফেরানোরর পর ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। দ্রুত হেটমায়ার, পাওয়েল এবং চেজকে বিদায় করে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান বোলাররা। ৬ উইকেট হারালেও উইন্ডিজদের একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন হোপ।
১১৮ বল খেলে তুলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। হোপের সেঞ্চুরির পর আর পেছনে ফেরে তাকায় নি উইন্ডিজরা। ইনিংসের ৪৩ থেকে ৪৭ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলাররা উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন।

চাপে পড়ে পল এবং হোপ বাংলাদেশকে উইকেট নেয়ার সুযোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাচের সেই সুযোগ লুফে নিতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ফলে ইনিংসের ৪৮ থেকে শেষ ওভারে গিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা।
৪৯তম ওভারে ১২ বলে ২২ রান দরকার হলেও মুস্তাফিজের ৪৯তম ওভারে ১৬ রান নিয়ে দলকে আশার আলো দেখান শাই হোপ। শেষ ওভারে মাহমুদুলাহ রিয়াদের ওভারে ৪ বলে ৬ রান নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান হোপ এবং পল।
১৪৬ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে জেতানোর পাশাপাশি ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন হোপ। আর হোপকে সঙ্গ দেয়া কিম পল অপরাজিত থাকেন ১৮ রানে। বাংলাদেশের পক্ষে রুবেল এবং মুস্তাফিজ নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে এই ম্যাচে শুরুতে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ২৫৫ রানের পুঁজি পেয়েছিলো বাংলাদেশ। টাইগারদের এই রানের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন দলের তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান।
কেননা তাঁদের প্রত্যেকেই হাঁকিয়েছেন অর্ধশতক। তামিম ৫০ রান করে ফিরলেও মুশফিক এবং সাকিব যথাক্রমে ৬২ ও ৬৫ রান করেছেন। এছাড়াও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন ৩০ রানের আরেকটি কার্যকরী ইনিংস। ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উইন্ডিজদের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে সক্ষম হয় মাশরাফি বাহিনী।
উইন্ডিজদের পক্ষে এদিন সবথেকে সফল বোলার ছিলেন পেসার ওশানে থমাস। ৫৪ রান খরচায় ৩টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এছাড়াও ১টি করে উইকেট পেয়েছেন কিমার রোচ, কিমো পল, দেবেন্দ্র বিশু এবং রোভম্যান পাওয়েল।
বাংলাদেশ একাদশঃ
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন।
উইন্ডিজ একাদশঃ
রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), মারলন স্যামুয়েলস, ড্যারেন ব্রাভো, দেবেন্দ্র বিশু, চন্দরপল হেমরাজ, রস্টন চেজ, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), শিমরন হেটমায়ার, কিমার রোচ, কিমো পল, ওশানে থমাস।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশঃ ২৫৫/৭ (৫০ ওভার) (সাকিব-৬৫, মুশফিক- ৬২), (থমাস- ৩/৫৪, বিশু-১/২৭)
উইন্ডিজঃ ২৫৬/৬ (৪৯.৪ ওভার) (হোপ- ১৪৬*, পল ১৮*), (রুবেল ৫৭/২, ৬৩/২)
লক্ষ্যঃ ২৫৬ রান
ফলঃ ৪ উইকেটে জয়ী উইন্ডিজরা
টসঃ উইন্ডিজ (ফিল্ডিং)