সিলেটে আনুষ্ঠানিকতা সারতে চাইবে টাইগাররা

ছবি: ছবি- বিসিবি

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
টেস্ট সিরিজে দাপট দেখিয়ে জয় তুলে নেয়ার পর ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। উইন্ডিজদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও সফরকারীদের ব্যাকফুটে রাখতে চাইবে মাশরাফিরা। সিলেটের মাঠে শেষ ওয়ানডে ম্যাচকে শুধুই দেশের মাটিতে অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতা সারতে চাইবে পূর্ণ শক্তির বাংলাদেশ দল।
অন্যদিকে অধিনায়ক মাশরাফি মিরপুরের মাঠে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চাইবেন। তবে প্রথম ম্যাচের মত সহজ জয় প্রত্যাশা করছেন না তিনি। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ সেরা মাশরাফি বলেছেন, 'শতভাগ। ওরা ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য রাখে। ওরা যদি ২৫০/৬০ করত তাহলে ম্যাচটা ভিন্ন রকম হতে পারতো। ওরা শতভাগ সামর্থ্য রাখে।'
সহজে হাল ছাড়তে চাইবে না সফরকারীরাও। প্রথম ম্যাচে কোন রকম লড়াই করতে না পারলেও সিরিজ বাঁচিয়ে সিলেট যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উইন্ডিজরা। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটে বলে দারুন পারফর্ম করা অলরাউন্ডার রস্টন চেইজ বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাকে হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন,
'না (হাসি), ওরা এতো সহজে জিতবে না। আমরা আবার নতুন করে পরিকল্পনা সাজাবো। যেখানে খারাপ করেছি সেখানে উন্নতি করার চেষ্টা করবো। আমরা কখনই বলি নি সিরিজ শেষ হয়ে গেছে। আমরা আরও শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে ফিরবো।'
বাংলাদেশ দল সিরিজ নিশ্চিত ম্যাচে একাদশে তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে চাইবে না। তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে লিটন দাস ও তিন নম্বরে ইমরুল কায়েসকে রেখে ছয় নম্বরে সৌম্য সরকারকে ব্যবহার করে একাদশ সাজাতে চাইবে মাশরাফিরা। তিন পেসার ও দুই স্পিনারের সাথে সৌম্য ও মাহমুদুল্লাহর পার্ট টাইম বোলিংয়ে আস্থা রাখবে টিম ম্যানেজমেন্ট।
উইন্ডিজ টপ অর্ডার প্রথম ওয়ানডেতে ব্যর্থ হলেও লোয়ার অর্ডারে রস্টন চেইজ, কিমো পল দারুন ব্যাটিং করেছে। এছাড়া বোলারদের মধ্যে চেইজের অফ স্পিন ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে বেশ কার্যকরী ছিলো। দুই ফাস্ট বোলার কিমার রোচ ও ওশান থমাস নিজেদের দিনে যে কোন ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামাতে পারে। তবে মারলন স্যামুয়েলস, ড্যারেন ব্রাভোদের নিয়ে নিয়ে টপ অর্ডার থেকে বড় চাইবে উইন্ডিজ দল।
পিচ এবং কন্ডিশনঃ

প্রথম ম্যাচে মিরপুরের উইকেট থেকে ঘরের মাঠেের সুবিধা ভালোভাবেই নিতে পেরেছে বাংলাদেশি বোলাররা। স্পিনাররা নতুন বলে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে যাওয়ার পর মাশরাফি, মুস্তাফিজ ও রুবেলরা সিম ও স্লোয়ার বলে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের রান থামিয়ে রাখতে সমর্থ্য হয়েছে। উইকেটের মন্থর আচরণ কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছিলেন মাশরাফি ও মুস্তাফিজ।
দ্বিতীয় ম্যাচেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়া প্রথম ম্যাচে ডিউ ফ্যাক্টর বড় ভূমিকা না রাখলেও টসে জিতে দুই দলই আগে ব্যাট করতে চাইবে।
মুখোমুখিঃ
এখন পর্যন্ত দুই দল মোট ৩২টি ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে জয়ের পাল্লা ভারি ক্যারিবিয়ানদের দিকেই। মোট বিশটি ম্যাচে টাইগারদের বিপক্ষে জয় পেয়েছে তারা। অপরদিকে বাংলাদেশ জিতেছে দশটিতে। বাকি দুইটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটাই এগিয়ে বাংলাদেশ। দুই দলের সর্বশেষে ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
স্পট লাইটে থাকবেন যারাঃ
তামিম ইকবালঃ উইন্ডিজদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত মোট বিশটি ওয়ানডে খেলেছেন টাইগার ওপেনার তামিম। যেখানে তাঁর সংগ্রহ দুটি শতক এবং তিনটি অর্ধশতক যোগে ৬৩৫ রান। ইনজুরি থেকে ফেরা তামিম প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলেছেন ১০৭ রানের বিধ্বংসী একটি ইনিংস। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে আলো ছড়াতে না পারলেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আবারও জ্বলে উঠতে পারেন ২৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
মুশফিকুর রহিমঃ গেল ম্যাচে টাইগারদের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন মুশফিক। ৭০ বলে তাঁর খেলা ৫৫ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। এই ম্যাচে চার নম্বরে ব্যাট করবেন মুশফিক। দ্বিতীয় ম্যাচেও রানের ধারা বজায় রাখতে চাইবেন তিনি।
শিমরণ হেটমায়ারঃ বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র চারটি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে ২১ বছর বয়সী হেটমায়ারের। আর চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বাদে বাকি তিন ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়েছেন এই উঠতি তারকা। টাইগারদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত তাঁর সংগ্রহ ২১৩ রান। যেখানে রয়েছে একটি করে শতক এবং অর্ধশতক। সুতরাং মঙ্গলবারের ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য রাখেন এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার।
মারলন স্যামুয়েলসঃ টাইগারদের বিপক্ষে সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে দলের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের ভূমিকা অনেক বেশি দরকার। রবিবারের ওয়ানডেতে ৪৮ বল খেলে উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন স্যামুয়েলস। যদিও ২৫ রান করে ফিরে গিয়েছেন তিনি। তবে উইন্ডিজের ব্যাটিং কাঠামোকে সমৃদ্ধ করতে ২০৫ ওয়ানডে খেলে ফেলা স্যামুয়েলসকে বিশেষ কিছু করে দেখাতেই হবে।
বাংলাদেশ স্কোয়াডঃ
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, আবু হায়দার রনি, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, নাজমুল ইসলাম অপু, আরিফুল হক, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ সাইফুদিন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন।
উইন্ডিজ স্কোয়াডঃ
রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), ফাবিয়ান অ্যালেন, দেবেন্দ্র বিশু, সুনীল আমব্রিস, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, ড্যারেন ব্রাভো, রস্টন চেজ, চন্দরপল হেমরাজ, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), কিমো পল, কাইরন পাওয়েল, কিমার রোচ, মারলন স্যামুয়েলস, ওশানে থমাস।