আবার ভারত, আবার নক আউটে হার

ছবি: ছবিঃ ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
ভারতের বিপক্ষে নক আউট ম্যাচ মানেই এক দুই রান কিংবা এক দুই উইকেটের হার, বাংলাদেশ ক্রিকেট এই বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। জুনিয়র ক্রিকেট হোক কিংবা সিনিয়র ক্রিকেট, নক আউট ও প্রতিপক্ষ ভারত হলেই কি যেন হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের।
মিরপুরে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সেমিফাইনাল ম্যাচেও একই চিত্র দেখা গেল। বাংলাদেশ দলের জয়ের জন্য ৩ রান দরকার ছিল, হাতে ছিল চার ওভার ও এক উইকেট। দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান রাকিবুল ও মিনহাজুলের ভুল বুঝাবুঝি ও রান আউট।
স্ট্রাইকে থাকা রাকিবুল অজয়ের লেগ স্ট্যাম্পের উপরের বলটি লেগ সাইডে খেলেছিলেন। শর্ট মিড উইকেটে থাকা ফিল্ডার থেকে একটু দূরে গড়িয়ে যাচ্ছিল বলটি, নন স্ট্রাইকে থাকা মিনহাজুল রানের সুযোগ দেখলেও দেখেননি রাকিবুল...আর তাতেই টাইগার যুবাদের স্বপ্ন ভঙ্গ।
তবে বাংলাদেশ দলের হারের শুরু হয়তো ইনিংসের সূচনা থেকেই হচ্ছিল। ১৭৩ রানের ছোট লক্ষ্য হলেও সেমিফাইনাল ম্যাচে বরাবরের মত ব্যর্থ বাংলাদেশি ওপেনাররা। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচেও একই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে দলীয় ৭ রানে মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন ওপেনার সাজিদ হোসেন।
বেশিক্ষন ক্রিজে থাকা হয়নি আরেক ওপেনার প্রান্তিকের ইনিংস। ২১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর সেখান থেকে বাংলাদেশকে টেনে দেয়ার দায়িত্বটা কাঁধে নেন মাহমুদুল হাসান জয় এবং অধিনায়ক তৌহিদ হৃদয়।
২১ রানের ছোট্ট জুটিতে আশা দেখালেও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসে ভাল খেলতে থাকা জয়। ২৫ রানে থামে তাঁর সম্ভাবনা জাগানো ইনিংস। বড় ভুলটা করেন অধিনায়ক হৃদয়। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে অপ্রয়োজনীয় স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সাজঘরে ফিরেন অধিনায়ক তৌহিদ হৃদয়। ব্যক্তিগত ১০ রানে বিদায় নেন দলপতি।

লেগ স্পিনার রিশাদকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিলেও সেটা কাজে দেয়নি। এক পর্যায়ে ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। তবে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন আকবর আলি। যদিও অল্পের জন্য অর্ধশতক মিস করেছেন তিনি।
মিডেল অর্ডারে শামিমের সাথে ৭৪ রানের জুটি গড়েন তিনি, একই সাথে জয়ের আশার পালে হাওয়া দেন তিনি। তবে আকবর নিজের ভুলেই আত্মাহুতি দেন। শট কভার অঞ্চলে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হন ব্যক্তিগত ৪৫ রানে।
আকবরের বিদায়ের পর উইকেট থিতু হয়ে খেলতে থাকা শামিম তুলে নেন ফিফটি। কিন্তু ব্যক্তিগত ৫৯ রানে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। জয়ের জন্য মাত্র ১২ রানের প্রয়োজন বাংলাদেশের। সেখান থেকে এক-দুই রানে এগোতে থাকা বাংলাদেশ দল শেষ পর্যন্ত ভারতের লক্ষ্য থেকে ২ রানে দূরে থাকা অবস্থায় অল আউট হয়।
বলা চলে, ভঙ্গুল ব্যাটিংই বাংলাদেশের হারের প্রধান কারণ। ভারতের মোহিত জাগ্রা ও সিদ্ধার্থ দেশাই তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন।
উল্টো চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশের বোলিংয়ে। পুরো আসরের মত সেমিফাইনালেও বাংলাদেশ দলের বোলিং ছিল ক্ষুরধার। নতুন বলে পেসার শরিফুলকে সামলাতে পারেনি ভারত। ওপেনার দেবদূত পাডেকাল দ্রুত সাজঘরের রাস্তা দেখান এই বাঁহাতি ফ্রন্ট লাইন পেসার। কিন্তু সহজে ভারতের টপ অর্ডারের দেয়ালে ফাটল ধরাতে পারেনি বাংলাদেশ। আরেক ওপেনার ইয়াশভি জেসওয়াল ও তিন নম্বরে নামা আনুজ রাওয়াত অর্ধশত রানের জুটি গড়ে দলকে বিপদ মুক্ত করেন।
দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানেই ভালোই গুছিয়ে নিচ্ছিল ভারত। পেসারদের সামলে স্পিনারদের বিপক্ষে হাত খুলে খেলে রান বাড়াতে থাকে এই জুটি। যদিও উইকেটে থিতু হতে দেয়নি বাংলাদেশি বোলাররা। উইকেটের আশায় ফ্রন্ট লাইন স্পিনার রিশাদকে বোলিংয়ে আনলেও অধিনায়ক তৌহিদের অফ স্পিনে ভাঙ্গে জুটি।
উইকেটে জমে যাওয়া আনুজ রাইতের বড় উইকেটটি আসে তৌহিদের অফস্পিনে। উইকেটের জন্য রিশাদকে অপেক্ষা করতে হয়নি। নতুন ব্যাটসম্যান সিমরান সিংকে শুন্য রানে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলেন লেগি রিশাদ।
মিডেল অর্ডারে নামা দুই ব্যাটসম্যান আইউশ রাথর হৃদয়ের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার পরেই বড় ধাক্কা খায় ভারত। ভাল খেলতে থাকা ওপেনার ইয়াশভি জেসওয়াল রিশাদকে লেগ স্ট্যাম্পের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। ৩৭ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় তাঁকে।
সেখান থেকে ফের জুটি গড়ে ভারতের মান রক্ষা করেন আইয়ুশ বাদোনি এবং সামির চৌধুরী। ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসা ভারতের হাল ধরে এই জুটি। ৯৩ বলে ৫৯ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপদ মুক্ত করার কাজটা ভাল ভাবেই করছিলেন। কিন্তু দলীয় ১৩৬ রানে এই জুটি ভাঙ্গেন বাঁহাতি পেসার মিনহাজুর রহমান। বাদোনিকে ২৮ রানে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি।
এরপর ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বেশিদূর এগোতে পারেনি। শরিফুল ও মৃত্যুঞ্জয়ের দ্বিতীয় স্পেলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে ১৭২ রানে অল আউট হয় ভারত। ১০ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেয়া পেসার শরিফুল ছিলেন দিনের সেরা বোলার। এছাড়া মৃত্যুঞ্জয়, রিশাদ ও তৌহিদ দুটি করে উইকেট শিকার করেছিলেন।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলঃ সাজিদ হোসেন, প্রান্তিক নওরোজ নাবিল, মাহমুদুল হাসান জয়, তৌহিদ হৃদয় (অধিনায়ক), আকবর আলী (উইকেটরক্ষক), শামীম হোসেন, মিনহাজুর রহমান, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, রকিবুল হাসান, রিশাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম।
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলঃ ইয়াশভি জেসওয়াল, দেবদুত পাডেকাল, অনুজ রাওয়াত, ইয়াশ রাথর, আইয়ুশ বাদোনি, সিমরান সিং (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), হর্ষ তেয়াগি, সিদ্ধার্থ দেসাই, অজয় গঙ্গাপুরাম, মহিত জংরা, সমির চৌধুরী।