মরুর বুকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের মিশনে মাশরাফি বাহিনী

ছবি: বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের গ্রুপটিকে সবথেকে কঠিন গ্রুপ হিসেবে দেখছিলেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। কেননা এই গ্রুপে বাংলাদেশের সাথে বাকি দুই দল হিসেবে ছিল শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান। সুতরাং দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই আশা করেছিলেন সকলে।
তবে আদতে দেখা গিয়েছে ঠিক উল্টোটা। যে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ভয় ছিল, সেই লঙ্কানরাই নিজেদের প্রমাণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ১৩৭ রানে পরাজিত হওয়ার পর আফগানদের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো স্বপ্ন দেখেছিল হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
কিন্তু আফগানদের কাছেও ৯১ রানের বড় পরাজয় নিয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে পড়তে হয়েছে তাঁদের। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই রশিদ খান, আসগর আফগানদের কাছে পরাস্ত হয়েছে লঙ্কানরা। ম্যাথিউসদের বিদায়ে এবার তাই মূল লড়াইটি হবে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মধ্যে।
আর সেই লড়াইয়ে আগামীকালই মাঠে নামতে যাচ্ছে দুই দল। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় (বাংলাদেশ সময়) গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আফগানদের মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বড় ধরণের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দুই দলের মধ্যে সেটি ধারণা করাই যায়।
কারণ লঙ্কানদের হারিয়ে বর্তমানে উভয় দলই অবস্থান করছে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায়। যদিও আফগানদের থেকে কিছু ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে আছে টাইগাররা। আফগান দলে রশিদ খানের মতো বিশ্বমানের লেগ স্পিনার থাকলেও বাংলাদেশের স্কোয়াডে একজন লেগিও নেই যেটি ইতিমধ্যে ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের শিবিরে।
এক রশিদই যে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপে ধ্বস নামানোর জন্য যথেষ্ট সেটি এর আগেও প্রমাণিত হয়েছে বারংবার। তার ওপরে রয়েছে মুজিবুর রহমান এবং মোহাম্মদ নবীর মতো স্পিনাররাও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই তিন স্পিনার মিলে তুলে নিয়েছিলেন ৬টি উইকেট।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে ওপেনার তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত ম্যাচে হাতের ইনজুরিতে পড়া তামিম এরই মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। আগামীকালের ম্যাচে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের বদলি কে হবেন সেটি নিয়েই এখন দোটানায় পড়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
এক্ষেত্রে লিটন কুমার দাসের সাথে ওপেনিংয়ে নামতে দেখা যেতে পারে মমিনুল হক কিংবা তরুণ নাজমুল হাসান শান্তকে। যদিও সেটি জানার জন্য ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

এদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ একটি জয় পাওয়ার পর উইনিং কম্বিনেশন ঠিক রাখতে আগামীকালের ম্যাচে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে আফগানরা।
পিচ এবং কন্ডিশন-
আবুধাবির কন্ডিশন বিবেচনায় বলা চলে আগামীকালের উইকেট ব্যাটিং সহায়কই হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে যে কয়টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে তার সবগুলোতেই প্রায় ব্যাটিং বান্ধব উইকেট দেখা গিয়েছে। মাঠটিতে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরটি ছিল ৩১৩ রানের।
২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই রান সংগ্রহ করেছিল পাকিস্তান। চলতি এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তানের ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই স্টেডিয়ামে। যেখানে শুরুতে ব্যাটিং করে আফগানরা সংগ্রহ করেছিল ২৪৯ রান। যদিও পিচে হালকা ঘাস থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না একেবারে।
তবে আশঙ্কার ব্যাপার হল এই মাঠে এখন পর্যন্ত খেলা হয়নি বাংলাদেশের বিধায় অনেকটা তিমিরের মধ্যেই আছে তারা। সুতরাং সেখানকার কন্ডিশন কিংবা উইকেট বুঝতে গলদঘর্ম হতে পারে টাইগাররা।
অপরদিকে আফগানরা এই মাঠে বেশ অনেকদিন থেকেই ক্যাম্প করেছে যার দরুন উইকেট সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা আছে তাদের। আর সেই কারণে আগামীকাল এই দিক থেকেও কিছুটা এগিয়ে থাকছে আসগর আফগানদের দলটি।
মুখোমুখি- এখন পর্যন্ত মোট ৫টি ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান। যেখানে ৩টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ এবং ২টিতে পরাজিত হয়েছে আফগানরা। সুতরাং এই দিক থেকে এগিয়ে আছে লাল সবুজের দেশটি।
স্পটলাইটে থাকবেন যারা-
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)- ওয়ানডে ফরম্যাটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের তকমা নিয়েই আরব আমিরাতে পা রেখেছেন সাকিব আল হাসান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে শুন্য রানে আউট হলেও আগামীকালের ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে চাইবেন তিনি।
এখন পর্যন্ত আফগানদের বিপক্ষে মোট ৪টি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। যেখানে ৩৬.২৫ গড়ে সংগ্রহ করেছেন ১৪৫ রান। আর তাঁর সেরা ইনিংসটি ৬৩ রানের। ব্যাট হাতেই শুধু নয়, বল হাতেও আফগানদের বিপক্ষে উজ্জ্বল সাকিব। এখন পর্যন্ত মোট ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। যেখানে তাঁর ইকোনমি রেট ৪.৩০।
রশিদ খান (আফগানিস্তান)- যেকোনো দলের বিপক্ষেই হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারেন আফগান লেগি রশিদ খান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ ওভারে মাত্র ২৬ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষেও তাঁর পরিসংখ্যানটি দারুণ।
মাত্র ৩টি ওয়ানডেতে ৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। যেখানে তাঁর ইকোনমি রেট মাত্র ৩.১০। সুতরাং আগামীকালের ম্যাচে এই রশিদই হয়ে উঠতে পারেন টাইগারদের হন্তারক।
বাংলাদেশ স্কোয়াড-
তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মোহাম্মদ মিথুন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), মমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, আবু হায়দার রনি, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম অপু।
আফগানিস্তান স্কোয়াড-
মোহাম্মদ শাহজাদ, ইহসানুল্লাহ জানাত, আসগর আফগান (অধিনায়ক), জাভেদ আহমদি, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহীদি, মোহাম্মদ নবী, গুলবদিন নাইব, রশীদ খান, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মুজিব-উর রহমান, আফতাব আলম, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, মুনির আহমদ, সৈয়দ শিরজাদ, শরফুদ্দীন আশরাফ, ওয়াফাদার।