বিজয়ের আত্মউপলব্ধি ও প্রত্যাশা

ছবি: এনামুল হক বিজয়, ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার পজিশন নিয়ে বরাবরই অথৈ জলে পড়তে হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণে এখন পর্যন্ত অনেক ম্যাচেই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে টাইগারদের। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ দিন পার হওয়ার পরেও এক তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী পেতে এখনও হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে নির্বাচকদের।
কখনও সৌম্য সরকার, কখনও লিটন কুমার দাস আবার কখনও আনামুল হক বিজয়- সবাইকেই টপ অর্ডার পজিশনে একে একে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। কিন্তু ধোপে টেকেনি কোনও স্ট্র্যাটেজিই। টপ অর্ডারের আস্থার প্রতীক হিসেবে বিজয়ের ওপর একটা সময় ভরসা রাখতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তাঁর 'ধীরে চলো' মানসিকতার কারণে সেভাবে তাঁকে সুযোগ দেয়ার পক্ষে ছিলেন না কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
আর সেই কারণেই কিনা দলে সেভাবে জায়গা পাকা করতে পারেননি এই ওপেনার। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে দারুণ পারফর্ম করার পুরষ্কার দীর্ঘ চলতি বছর পেয়েছিলেন বিজয়। দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে তাঁকে সুযোগ দিয়েছিলেন নির্বাচকেরা। কিন্তু সেই সিরিজে ৩ ম্যাচে সর্বসাকুল্যে ৫৫ রান সংগ্রহ করেন তিনি।
এরপরেও গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে বিজয়কে দলে রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। যথারীতি সেই সিরিজেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে যথাক্রমে ০, ২৩ এবং ১০ রান।
একে তো স্লথ ব্যাটিং, তাঁর ওপরে পারফর্মেন্সের এই করুণ হাল, সুতরাং এশিয়া কাপের স্কোয়াডে বিজয়ের জায়গা না পাওয়া অনেকটা অবশ্যম্ভাবীই ছিল বলা চলে। তবে সেই সিরিজে পারেননি বলে যে ভবিষ্যতে জাতীয় দলের দরজা তাঁর বন্ধ বিষয়টি এমন নয়। বাকি ওপেনারদের হাল বিজয়ের চেয়ে খুব যে বেশি ভাল, তা কিন্তু হয়। তাই তো ফের জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন এখনও হৃদয়ে লালন করেন বিজয় নিজেও। তবে এর জন্য যে নিজেকে পারফর্ম করতে হবে সেটি স্বীকার করেছেন তিনি নিজেও,
'আমরা এখনো ছোট মানুষ, এমন না যে ৩০-৩৫ বয়স হয়ে গেছে। অনেক কিছুই আমাদের চিন্তায় আসে, মিথ্যা বলা যাবে না। মাথায় আসে না এটা বললে ভুল হবে। কিন্তু নিজেকেও তো পারফর্ম করতে হবে। জিজ্ঞাসার চিহ্ন থাকে, 'তুমি কি পারফর্ম করছ?' একজন প্লেয়ার হিসেবে আমাকেও চিন্তা করতে হবে আমি কতটুক পারফর্ম করছি জাতীয় দলে কামব্যাক করার জন্য। আমি গত তিন বছরে চার হাজার রান করেছি বলেই নির্বাচকরা আমাকে নিয়ে ভেবেছে। এটা করেই আমাকে আসতে হয়েছে, আমাকে তো পারফর্ম করতে হবে।'
নিজের পারফর্মেন্সের যে কতটা বেহাল দশা সেটি অস্বীকার করার চেষ্টাও করেননি বিজয়। গত সাত ম্যাচে একটাও অর্ধশতক না হাঁকাতে পারা এই ব্যাটসম্যান তাই নির্বাচকদের দোষ দেখছেন না, নিজের ঘাড়েই সকল দোষ নিয়ে তিনি বলেছেন,
'কেউ যদি খারাপ করে তাহলে তো আমাকেও পারফর্ম করে প্রস্তুত থাকতে হবে। কেউ যদি ফর্মহীনতা কিংবা ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়ে, তাহলে আমি পারফর্ম করেই যেন প্রস্তুত থাকতে পারি। আমি গত সাত ম্যাচ খেলেছি, আমি যদি একটা ফিফটি করতে পারতাম তাহলে আমি দলে থাকতে পারতাম। সহজ ব্যাপার। আমি কি পারফর্ম করেছি? আমি তো দুটি ফিফটিও করতে পারি নি। আমি তো আশাও করতে পারি না।'
তবে জাতীয় দলে ফেরার জন্য কি করতে হবে সেটিও বেশ ভালো জানা আছে বিজয়ের। এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্মেন্স দিয়েই সুযোগ পেয়েছিলেন দলে। এবারও সেই ঘরোয়া ক্রিকেটকেই পাথেয় হিসেবে দেখছেন তিনি,
'এই জন্য আমার কাছে সামনে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট গুলোতে সুযোগ আছে নিজেকে প্রস্তুত করার, এইসব যদি আমি ভালো করতে পারি তাহলে আমি নিজেকে বলতে পারব, 'আমি প্রস্তুত'। কেউ যদি খারাপ করে বা অন্য কিছু হয়, তাহলে আমি সুযোগ পেলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। ব্যাপারটা আসলে এমন।'