রোডসের স্নায়ু চাপ সামলানোর কঠিন পরীক্ষা

ছবি: ছবিঃ ক্রিকফ্রেঞ্জি

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
মধ্য দুপুরে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে এসে প্রেস বক্সের নিচের দিকে এক কোণে চোখ গেলে দর্শকদের কিছুটা হবে অবাক হওয়ার কথা। খেলা শুরু হওয়ার আগেই স্কোর বোর্ডে লেখা, ৪ ওভারে ১ উইকেটে ২০ রান। 'এখানে কি হচ্ছে?,' এমন প্রশ্ন অনেককেই করতে দেখা গেছে।
পুরো মাঠ জুড়ে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের আনাগোনা। সুনীল যোশি, নিল ম্যাকেঞ্জিদের সাথে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কোচ স্টিভ রোডস। তিন কোচ মিলে ম্যাচের অবস্থা নির্ধারণ করে স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন।
অনেকটা ফাইনাল পরীক্ষার আগে দেয়া টেস্ট পরীক্ষার মত। সোমবার মিরপুরে অনুশীলন ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন পরীক্ষার আগে টেস্ট পরীক্ষাই দিতে হলো ক্রিকেটারদের। ধাপে ধাপে ব্যাটসম্যান ও লক্ষ্য বদলে ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আবহ আনার চেষ্টা করছিলেন স্টিভ রোডস।
'এটা আসলে ছেলেদের প্রস্তুত করার জন্য, তাদের আমরা চাপের মধ্যে ফেলতে চেয়েছি। অনেক সময় দেখা যায় যে, আপনি শুধু অনুশীলনই করে গেলে, সেখান থেকে কিছু অর্জন হয় না। আপনি ব্যাট করতে আসেন, কিছু বাউন্ডারি হাঁকান, কিন্তু অর্জনের কিছুই থাকে না। তাই কোচ স্টিভ (রোডস) ছেলেদের চাপের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করছিল।,' বলেছেন মিরপুরে ক্রিকেটারদের সাথে প্রথমবারের মত কাজ করা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি।
তবে অনুশীলনে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় ছিল ডেথ ওভারে ব্যাটসম্যান ও বোলারদের স্নায়ুর চাপ সামলানোর সামর্থ্যের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি। শেষ ওভারে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের একেক বার একেক লক্ষ্যে ব্যাট করতে দেখা গেছে। মূল কথা, ম্যাচ শেষ করে আসার কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছিলেন স্টিভ রোডস, ব্যাটসম্যান ও বোলারদের।

প্রথমবার মাশরাফি ও মিরাজদের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১০ রানের, মাশরাফি ও মিরাজের ব্যাট থেকে আসা বাউন্ডারিতে মাশরাফিরা পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য ৩০১ ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর লক্ষ্য বাড়িয়ে ৩১৩ করা হয়। এবার ব্যাটসম্যান মাশরাফি ও আরিফুল।
চ্যালেঞ্জে অবশ্য বোলার কামরুল ইসলাম রাব্বি জিতে যান। আরিফুলকে শেষ ওভারে আউট করেন তিনি, তারপর ফের ব্যাট করতে নামেন মিরাজ। কিন্তু দরকারি রান তুলতে পারেননি মাশরাফি ও মিরাজ। এরপর সর্বদা ব্যস্ত রোডস সবাইকে জড়ো করে ফের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন।
ব্যাটসম্যান মাশরাফি মাঠ ছাড়লে মিরাজের সাথে এবার ফিনিশিংয়ে দায়িত্বে ব্যাট ধরেন নাজমুল ইসলাম অপু। আর ডেথ ওভারে বোলিং এর দায়িত্বে ছিলেন আবু হায়দার রনি। নতুন লক্ষ্য, শেষ ওভারে দরকার ৯ রান। মিরাজ ও অপু অবশ্য এবারো ব্যর্থ হন।
কোচ রোডস ছিলেন নাছোড়বান্দা। বোলার পাল্টে তরুন শরিফুলকে বল তুলে দিয়ে মিরাজ ও আরিফুলকে আরেকবার স্পট লাইটে ফেলেন তিনি। এবার অবশ্য সফল হন আরিফুল। চার হাঁকিয়ে পরীক্ষায় পার পেয়ে যান। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত লোয়ার অর্ডারে খেলা মিরাজে সন্তুষ্ট মনে হয়নি রোডসকে।
তাই হয়তো টেল এন্ডার ব্যাটসম্যান শরিফুলকে মিরাজের সঙ্গী করে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তিনি। সেবার মিরাজ লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেলেও পরের চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হন মোহাম্মদ মিথুন। স্পিনার অপুর সামনে শেষ ওভারের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হয়।
কিন্তু বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে মিথুন পরাস্ত হন। আরেকবারের চেষ্টায় পারেননি আবু হায়দার রনি ও খালেদ। বলা চলে, স্কোয়াডে থাকা তরুন ক্রিকেটারদের এমন পরিস্থিতিতে ফেলে শাণিত করাই ছিল কোচিং স্টাফদের উদ্দেশ্য।
'আপনি যদি বিশ্বের সব ওয়ানডে দলের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন প্রায় সব দলই সামর্থ্যের দিক থেকে কাছাকাছি। যার কারনে ম্যাচের ফলাফল অনেক সময় শেষ বল অথবা শেষ ওভারে এসে থামে। এখানে ছেলেদের, বিশেষ করে তরুন ক্রিকেটারদের চাপের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। যখন বড় মঞ্চে এমন কিছু হবে তখন ছেলেরা জানবে, আত্মবিশ্বাস রাখবে নিজেদের সামর্থ্যের ওপর।
'কারণ তাঁরা এর জন্য অনুশীলন করেছে, এমন অবস্থায় খেলে এসেছে। আর বোলারদের জন্যও এটা ভালো অনুশীলন। এমন অবস্থায় ফিল্ড সেটিং কেমন হওয়া উচিত, তাঁর সেরা বলটা কি হবে... আর ব্যাটসম্যানরা, তোমরা কি চিন্তা করছ এমন অবস্থায়? স্নায়ুর চাপ কি তোমাকে পেয়ে বসছে? তুমি যদি আঁচ করতে পারো একজন বোলার এই বলটি করবে, তাহলে কোন শটটা তুমি নির্বাচন করবে?
'এইসব জিনিস অনুশীলন করার চেষ্টা হচ্ছে, এইসব আসলে প্লেয়ারদের চিন্তা করায়। ওরা একে অপরকে ভালো করে জানে, কার কোথায় শক্তি ও দুর্বলতা সেটা তাদের ভালোই জানা। সব মিলিয়ে এটা ক্রিকেটারদের চাপের মধ্যে ফেলা ও চিন্তা করতে বাধ্য করা।'