বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

ছবি:

বাংলাদেশ - ১৮৪/৫ ওভার - ২০
লিটন ৬১, রিয়াদ ৩২*
ব্র্যাথওয়েট ২/৩২, পোল ২/২৬
উইন্ডিজ - ১৩৫/৭ ওভার - ১৭.১
রাসেল ৪৭, রামদিন ২৩
মুস্তাফিজ ৩/৩১, সাকিব ১/২১
ফলাফলঃ ১৯ রানে জয়ী বাংলাদেশ (বৃষ্টি আইনে)
সিরিজ জয়ের জন্য বেশ বড় লক্ষ্য তাড়া করতে হত উইন্ডিজদের। স্বাগতিকরা ওপেনিং জুটি থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছিল। কিন্তু টাইগার পেসাররা সেটা হতে দেয় নি। আবু হায়দার ও রুবেলের মিতব্যয়ী বোলিংয়ের পর আঘাত হানেন মুস্তাফিজ।
দারুন পরিকল্পনার ফল হিসেবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে সাজঘরে ফিরতে হয় ওপেনার ফ্লেচারকে। ৭ বল খেলে ৬ রান যোগ করে ফিরতে হয় তাকে। বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি লুইসের বদলে সুযোগ পাওয়া ওপেনার ওয়ালটনের ইনিংস।
আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে পঞ্চম ওভারের মাঝ পথে বাঁহাতি স্পিনার অপু মাঠ ছাড়ার পর অসম্পূর্ণ ওভার সম্পূর্ণ করতে বল তুলে নেন সৌম্য। সেই ওভারেই স্লো বলে ওয়ালটনকে ফাঁদে ফেলেন সৌম্য।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে জোড়া উইকেট হারানোর পর চাপে পড়ে উইন্ডিজরা।

দুই ওপেনারের বিদায়ে রান আটকে নতুন ব্যাটসম্যানদের কাজ কঠিন করে তোলে বাংলাদেশ। ব্যাটিং পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে এসে ফের উইকেটের দেখা মিলে। সাকিবের আর্ম বলে সরাসরি বোল্ড হন অভিজ্ঞ স্যামুয়েলস।
ধুঁকতে থাকা উইন্ডিজদের হয়ে হাল ধরেন পাওয়েল ও রামদিন। জুটি গড়ে উইন্ডিজদের আশা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে এই দুই ডানাহাতি। কিন্তু ১২তম ওভারে এসে ফাস্ট বোলার রুবেলের প্রথম শিকারে পরিনত হন রামদিন।
২১ রান যোগ করে সরাসরি বোল্ড হন তিনি। মুস্তাফিজের তৃতীয় ওভারে ফিরতে হয় ইনফর্ম পাওয়েলকেও। শেষের দিকে ব্যাট করতে নেমে বাড়ন্ত রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে রান বাড়াতে থাকেন আন্দ্রে রাসেল। তাকে সঙ্গ দেন আরেক হার্ড হিটার ব্র্যাথওয়েট।
একের পর এক বিশাল ছয়ে ভীতি ছড়াতে থাকেন রাসেল। হায়দারের বলে ব্র্যাথওয়েট আউট হয়েও প্রায় ২২০ স্ট্রাইক রেটে রান তোলা রাসেল ছিল বাংলাদেশের ভয়ের কারন। সেই ভয় দূর করেন নিজের শেষ ওভারে বল করতে আসা মুস্তাফিজ।
বিধ্বংসী রাসেলকে লো ফুল টসে বাউন্ডারিতে থাকা আরিফুলের ক্যাচ বানিয়ে ছাড়েন তিনি। ২১ বলে ৪৭ রান যোগ করে রাসেল আউট হওয়ার পরেই দ্বিতীয়বারের মত বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। তবে বৃষ্টি আইনে এগিয়ে থাকায় ১৯ রানের জয় নিয়ে টি-টুয়েন্টি সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ।
গুরুত্বপূর্ণ সময় দুর্দান্ত বোলিং করে তিন উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রেখেছেন মুস্তাফিজ। সাকিব, রুবেল, রনি ও সৌম্য একটি করে উইকেট নিয়ে ২-১ ব্যবধানে স্মরণীয় সিরিজ জয়ে অবদান রেখেছেন।
এর আগে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে অবিশ্বাস্য সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। লিটন ও তামিমের ব্যাটে ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই অর্ধশত পূর্ণ করে বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি ইতিহাসের দ্রুততম অর্ধশত।
লিটন দাস ও তামিম ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ওভার প্রতি ১৪ রান রেটে ব্যাট করছিল। তবে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে এসে বাংলাদেশ ক্যাম্পে আঘাত হানে কাপ্তান ব্র্যাথওয়েট। স্লোয়ার বলের ফাঁদে ফেলে দুর্দান্ত ফর্ম থাকা তামিমের উইকেট আদায় করেন নেন তিনি।
১৩ বলে ২১ রান করা তামিমের পথ ধরেন তিন নম্বরে নামা সৌম্য। পরের ওভারে কিমো পোলের স্লো বলের ফাঁদে পড়তে হয় সৌম্যকেও। এক বাউন্ডারিতে ৫ রান যোগ করে দ্রুত সাজঘরে ফিরতে হয় তাকেও।
ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে ৭১ রান তুলে নিলেও শেষ দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করে যান লিটন দাস। মাত্র ২৪ বল খেলে দুইশ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটে ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টুয়েন্টি ফিফটি তুলে নেন তিনি।
মুশফিকের সাথে লিটনের জুটিতে মিডেল ওভারে ভালোই দাপট দেখাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ১২ রানে মুশফিক কট বিহাইন্ডে আউট হওয়ার পর থামতে হয় লিটন দাসকেও। ৩২ বলে ৬১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অসময়ে আউট হন তিনি।
মিডেল ওভারে ফের দ্রুত দুই উইকেট পতনের পর রিয়াদ ও সাকিবকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হয়। জুটি গড়ার চেষ্টায় সময় নিয়ে খেলেন এই দুই অভিজ্ঞ। কিন্তু ১৬তম ওভারে ফের আঘাত হাতে উইন্ডিজ পেসার কিমো পোল।
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই সাকিবকে ২৪ রানে থামান তিনি। দলের স্কোর তখন ১৪০ ছাড়িয়ে গেছে। ডেথ ওভারে আরেক অভিজ্ঞ রিয়াদের ব্যাটে চেয়ে ছিল বাংলাদেশ। সদ্য ক্রিজে আসা আরিফুলকে নিয়ে দলের স্কোর বাড়ানোর দায়িত্ব নিতে হত তাকে।
শেষের দিকে রিয়াদের ব্যাট থেকে আসা ৩২ রানের সুবাদে বাংলাদেশ দল পাঁচ উইকেটে ১৮৪ রান তুলতে সক্ষম হয়। উইন্ডিজদের হয়ে কিমো পোল ও ব্র্যাথওয়েট দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশ একাদশ-
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ (সহ-অধিনায়ক), নাজমুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার, আরিফুল হক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ-
কার্লোস ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), স্যামুয়েল বদ্রি, আন্দ্রে ফ্লেচার, চ্যাডউইক ওয়ালটন, অ্যাসলে নার্স, কিমো পল, রোভম্যান পাওয়েল, দীনেশ রামদিন (উইকেটরক্ষক), আন্দ্রে রাসেল, মারলন স্যামুয়েলস, চ্যাডউইক ওয়ালটন, কেসরিক উইলিয়ামস।