গায়ানায় ওয়ানডে সিরিজ জিততে হলে ২৭২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাড়ি দিতে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ রানের আফসোস নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে।সাকিব, তামিমের পর মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর রানের পরও হতাশার হার সহ্য করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

অথচ বড় স্কোর তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার তামিম ও বিজয় প্রথম ওভার থেকেই দ্রুত রান নিয়ে বোলারদের চাপে ফেলার চেষ্টা করেন। বিজয় বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন।

কিন্তু দ্রুত রানের নেশায় বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে। জোসেফের বলে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরেন বিজয়। আউট হওয়ার আগে মাত্র ৯ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। দলের স্কোর তখন ৩২ রান।

সেখান থেকে রানের চাকা সচল রাখেন সাকিব ও তামিম। দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম দলীয় ফিফটি পূর্ণ করে এই জুটি। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলেই ফিফটি ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশের স্কোর।

রান থামাতে বোলিংয়ে পরিবর্তনে আনতে বাধ্য হয় উইন্ডিজ কাপ্তান হোল্ডার। কিন্তু বাউন্ডারি খুঁজে নিয়ে দলের স্কোর ব্যাটিং পাওয়ারতে ৭৯ রানে নিয়ে যায় সাকিব-তামিম জুটি, যা বিদেশের মাটিতে ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

একই সাথে জুটির ফিফটি পূর্ণ করেন দুই বাঁহাতি বাংলাদেশি সিনিয়র। ওভার প্রতি সাড়ে ছয় রান রেটে রান তুলে ইনিংসের ১৫তম ওভারেই দলের স্কোর একশ রান দেন সাকিব-তামিম জুটি। ২১তম ওভারের দিকে এসে ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করেন ওপেনার তামিম।

৭০ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪২তম ফিফটি তুলে নেন তিনি। তবে প্রথম ম্যাচের মত ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তিনি। ৫৩ রান করে লেগ স্পিনার বিশুর বলে ইনিংসের ২৬তম ওভারে স্ট্যাম্পিং হন তামিম।

তামিমের পথ ধরে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন ফিফটি হাঁকানো সাকিবও। ৩০তম ওভারে অ্যাশলি নার্সের বলে সহজ ক্যাচ তোলেন তিনি। ৭২ বলে ৫৬ রানে থামে সাকিবের ইনিংস। পর পর দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ দল।

চাপের মুখে মাঝের ওভারে রিয়াদ ও মুশফিকের অর্ধশত রানের জুটি বাংলাদেশকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখে। এই জুটিতে ভর করেই ইনিংসের ৪১তম ওভারে দলের স্কোর ২০০ ছাড়াতে সাহায্য করে। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাটে জয়ের পথেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। 

কিন্তু ৪৫তম ওভারে ভুল বোঝাবুঝিতে রিয়াদের রান আউট বিপদে ডেকে আনে। ৩৯ রানে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রিয়াদের রান আউটের পর খেই হারায় বাংলাদেশ। এর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে জেতা ম্যাচ কঠিন করে তোলে বাংলাদেশ দল। 

মুশফিক অর্ধশত হাঁকিয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখলেও শেষ ওভারে এসে হোল্ডারের লো ফুলটসে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফিরেন। দলীয় সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেও দলের জয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনার ম্যাচে তিন রানের জয় নিয়ে সিরিজে সমতা আনে উইন্ডিজরা।

এর আগে দিবারাত্রির দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টসে হেরে আগে ব্যাট করে শিমরন হেটমায়ারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে লড়াই করার মত পুঁজি পেয়েছে স্বাগতিকরা।

এছাড়া রভমেন পাওয়েলের ৪৪ রান মাঝের ওভারে দলের স্কোর সচল রেখেছে। মূলত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর হেটমায়ার ও পাওয়েলের শতরানের জুটিই উইন্ডিজদের স্কোর দুইশ ছাড়াতে সাহায্য করে।

শেষের দিকে হেটমায়ারের ঝড়ো ব্যাটিং উইন্ডিজদেরকে বড় পুঁজি এনে দেয়। বাংলাদেশের হয়ে রুবেল হোসেন তিনটি উইকেট শিকার করেছেন। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব ও মুস্তাফিজ।

বাংলাদেশ একাদশঃ

তামিম ইকবাল, আনামুল হক, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ,  মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান, মাশরাফি মর্তুজা (অধিনায়ক),  রুবেল হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশঃ

ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শাই হোপ, জেসন মোহাম্মদ, শিমরন হ্যাটমিয়ার, জেসন হোল্ডার (অধিনায়ক), রভম্যান পাওয়েল, দেবেন্দ্র বিশু, কেমো পল, অ্যাশলি নার্স ও আলজেরারি জোসেফ।

উইন্ডিজ - ২৭১ অল আউট (৪৯.৩ ওভার)

হেটমায়ার ১২৫ (৯৩), পাওয়েল ৪৪ (৬৭)

রুবেল ৩/৬১, মুস্তাফিজ ৪৪/২, সাকিব ৪৫/ ২

বাংলাদেশ - ২৬৮/৬ (৫০ ওভার) 

সাকিব ৫৬, তামিম ৫৪ ও মুশফিক ৬৮

ফলাফলঃ উইন্ডিজ ৩ রানে জয়ী