রান করার জন্য কুৎসিত ব্যাটিং করতেও রাজি- তামিম

ছবি: তামিম ইকবাল- ক্রিকফ্রেঞ্জি

২০১১-১২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ ছিলেন স্টুয়ার্ট ল। খুব বেশিদিন টাইগারদের নিয়ে কাজ না করলেও তার কিছু উক্তি এখনও অনেক ক্রিকেটারদের মনে দাগ কেটে আছে। তেমনই একজন ক্রিকেটার হলেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে একেবারেই স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তামিম। তার স্লথ গতির ব্যাটিং দেখে অনেকে টেস্টের সাথে তুলনাও করেছিলেন। কিন্তু দিন শেষে তামিমের সেই ধীর গতির সেঞ্চুরিই বাংলাদেশকে ২৭৯ রানের বড় পুঁজি এনে দিয়েছিলো।
বরাবরই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করার স্বভাব থাকলেও হুট করে এভাবে পাল্টে যাওয়ার কারণ তামিম নিজেই খোলাসা করেছে দেশের শীর্ষ বাংলা দৈনিক কালের কণ্ঠকে। জানিয়েছেন এক্ষেত্রে তার পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন উইন্ডিজদের বর্তমান এবং বাংলাদেশের সাবেক কোচ স্টুয়ার্ট ল।
ল একবার নাকি তামিমকে বলেছিলেন রান কিভাবে আসছে সেটির থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কত রান এসেছে। আর কথাটিই গেঁথে গিয়েছিলো তামিমের মাথায়। সেই থেকেই রান করার জন্য চাইলে টেস্টের মতো ব্যাটিং করতেও রাজি তিনি। তামিমের বক্তব্য,
'স্টুয়ার্ট একবার বলেছিলেন, ‘রান কিভাবে আসছে সেটা নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো তুমি কত রান করেছ। সেই থেকে আমি রানের জন্য আগলি (কুৎসিত) ব্যাটিং করতেও রাজি।'
শুধু ল-কেই নয়, তামিমের পথপ্রদর্শকের তালিকায় রয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফিসও। অভিষেকের পর থেকেই নাফিসকে দেখে আসছেন তামিম। নিজের ব্যাটিংয়ে উন্নতি করার জন্য সর্বদা আলাদা ট্রেনিং সেশন চালিয়ে যেতেন তিনি। তার থেকে শিক্ষা নিয়ে একই কাজ এখন করেন তামিম নিজেও। তিনি বলছিলেন,

'আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে নাফীস ভাইকেই শুধু দেখতাম নিজের জন্য আলাদা ট্রেনিংয়ের শিডিউল করে নিতেন। উনার সঙ্গে সেভাবে কখনোই কথা হতো না। তবে নীরবে আমি উনার এ জিনিসটা অনুসরণ করেছি, এখনো করি।'
কিন্তু দল জিতলেও ১৪৭ বল খেলে সেঞ্চুরি করার পর স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনা উঠেছে তামিমকে ঘিরে। তার পাশাপাশি সাকিবকে নিয়েও কথা কম উঠছে না। কেননা তিনি নিজেও ব্যাটিং করেছেন স্বভাববিরুদ্ধ।
অনেকের মতে সেঞ্চুরি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই নাকি এই স্লথ গতির ব্যাটিং করেছেন তারা। তবে এই বিষয়টিকে পাত্তাই দিলেন না তামিম। সেঞ্চুরির জন্য যে খেলেননি সেটিও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন তিনি। উইকেট স্লো থাকার কারণেই এভাবে ব্যাটিং করা হয়েছে উল্লেখ করে তামিম বলেন,
'এত দিন ধরে ক্রিকেট খেলেও যা শুনতে হয়নি, তা আজ শুনলাম! যাক, মানুষের বলার কাজ বলেছে। সাকিব আর আমি নিজে তো জানি এই উইকেটে কত কষ্ট করে রান করেছি। হ্যাঁ, সেঞ্চুরি করে আমি খুশি। তবে সেঞ্চুরির জন্য খেলিনি। যদি তা-ই হতো, তাহলে ৬০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করত না গেইল।'
এক্ষেত্রে আবারো স্টুয়ার্ট ল- এর সেই বক্তব্যটি আবারো তুলে ধরলেন টাইগার ওপেনার। দ্রুত আউট না হয়ে কষ্ট করে এবং ধরে খেলে রান বেশি করলে মানুষ মনে রাখবে বেশি বলেই বিশ্বাস করেন তামিম। তার ভাষ্যমতে,
'স্টুয়ার্টের কথাটা মনে ধরে আছে। আপনি ৬০ রান করে একটা বাজে শট খেলে আউট হলে লাভ কী? তার চেয়ে কষ্ট করেও যদি রানটা বাড়াতে পারেন সেটাই দলের কাজে লাগবে, মানুষও মনে রাখবে।’
এদিকে টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজাও সমর্থন করেছেন তামিমকে। তার মতে তামিম খুব ভালো করেই অবগত তাঁর করণীয় সম্পর্কে। তাঁর একটি বড় ইনিংস যে দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি চোখে আঙ্গুল দিয়েও দেখিয়ে দিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তিনি বলেন,
'তামিম ওর খেলাটা ভালো করে জানে। ব্যাটসম্যান তো মাঝেমধ্যে ভুল করবেই। তবে আমরা জানি তামিমের গুরুত্ব কতটা। ওর একটা বড় ইনিংস আমাদের কতটা সাহায্য করে।’ ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে প্রতি মুহূর্তে নতুন পথ খুঁজতে হয়।
পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নতুন অনেক কিছু শেখারও আছে। একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম নিজেও এই বিষয়টি ভালোভাবেই জানেন। নতুন বিষয়গুলোর আয়ত্ত করতে না পারলে পরবর্তীতে ধাপে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তাঁর কথাতেই এর প্রমাণ মিললো,
'এই এত দিন পরও আমাকে সব সময়ই কিছু না কিছু শিখতে হচ্ছে। ক্রিকেটে আপনি নতুন নতুন পথ না খুঁজলে এক জায়গাতেই থেমে থাকবেন। মাশরাফি ভাইয়ের কথাই ধরেন কিংবা সাকিব-মুশফিক-রিয়াদ ভাই (মাহমুদ উল্লাহ) আমরা প্রত্যেকেই পরের স্টেজে যাওয়ার জন্য নতুন নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে আবারও মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। আর এই ম্যাচেও টাইগার ওপেনার তাঁর পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবেন এটাই প্রত্যাশা সকলের। কেননা তামিমের ব্যাট হাসলেই যে হাসিতে উদ্ভাসিত হয় গোটা বাংলাদেশ এটি তো প্রমাণিত হয়েছেই।