এ লজ্জা রাখি কই?

ছবি:

অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম সকালে সবুজ উইকেট ও ভেজা আবহাওয়ায় টসে হেরে ব্যাট করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। বলা বাহুল্য, উইন্ডিজ পেসাররা এমন কন্ডিশনের সুবিধা নিতে মুখিয়ে থাকবে।
তাই বলে মাত্র ২০ ওভারের মধ্যেই অল আউট হয়ে বাংলাদেশ? দেশের টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিন্ম স্কোরে অল আউট হবে অভিজ্ঞতায় ঠাসা বাংলাদেশ? কে জানত, এমন কিছুই হওয়ার ছিল বাংলাদেশের ভাগ্যে।
ওভারকাস্ট কণ্ডিশন, ডিউক বল ... সব মিলিয়ে কঠিন কন্ডিশনে শুরুতে স্বভাবতই সতর্ক হওয়া চাই। নতুন বলে দুই উইন্ডিজ পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও কিমার রোচের সামনে সেটাই করছিলেন তামিম-লিটন জুটি।
কিন্তু বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারলেন না টাইগার ওপেনার তামিম। রাউন্ড দ্যা উইকেট থেকে আসা কিমার রোচের লেন্থ থেকে বের হয়ে যাওয়া বলে কিপারের হাতে ধরা পড়েন টাইগার ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম স্তম্ভ তামিম।
দিনের ষষ্ট ওভারে ১৩ বল খেলে ৪ রান যোগ করে দলীয় ১০ রানে আউট হন তিনি। পরের ওভারে ফের আঘাত হানেন রোচ। এবার সদ্য ক্রিজে আসা বাঁহাতি মমিনুল হককে গালি ফিল্ডারের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিনত করেন তিনি।
ফুল লেন্থের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ১ রানেই থামতে হয় ইনফর্ম মমিনুল হককে। জোড়া উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট ধরতে ক্রিজে আসেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
কিন্তু ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা রোচকে থামাবে কে? একই ওভারে মুশফিককে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলানোর পর একে একে সাকিব ও রিয়াদের উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ১৮ রানে ৫ উইকেটের দলে পরিনত করেন কিমার রোচ।

মুশফিক রিভিউ নিয়ে লেগ বিফর থেকে রক্ষা পান নি। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে এসে সেকেন্ড স্লিপের হাতে ধরা পড়েন অধিনায়ক সাকিবও। ব্যর্থ হয়েছেন সহ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহও।
লেন্থ থেকে বের হয়ে যাওয়া বলে সম্পূর্ণ পরাস্ত হন তিনি। ১৮ রানেই তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের শুন্য রানে বিদায় নেয়ায় ভেঙ্গে পড়ে কাগজে কলমে শক্তিশালী বাংলাদেশের মিডেল অর্ডার।
মাত্র ছয় রান খরচায় পাঁচ ওভারেই ক্যারিয়ারের অষ্টম পাঁচ উইকেট অর্জন করেন কিমার রোচ। সবুজ উইকেটে ফুল লেন্থে ক্রমাগত বল করে যাওয়ার সুফল পেয়েছেন হাতেনাতেই।
বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপকে পরিনত করে প্রথম স্পেল শেষ করলেও ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের। তরুন মিগেল কামিন্স নিজের প্রথম স্পেলে এসেই জোড়া আঘাত হানেন।
এক ওভারেই তুলে নেন শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান লিটন ও সোহানের উইকেট। ১৪তম ওভারে এসে ৫৩ বল খেলে ২৫ রান করা লিটন উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। একই ওভারে থার্ড স্লিপে থামে সোহানের ইনিংস।
পরের ওভারে এসে মিরাজকেও সাজঘরে পাঠান তিনি। হোল্ডারের বলে রাব্বির বিদায়ে বাংলাদেশ দলের টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিন্ম স্কোরে অল আউট হওয়ার লজ্জা হাতছানি দিতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত হোল্ডারের বলে রাহির বিদায়ে মাত্র ৪৩ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ দল, যা টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বনিন্ম স্কোর। মাত্র ১৯তম ওভারেই সব উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসের সমাপ্তি টানে বাংলাদেশ দল।
টেস্টের প্রথম দিনের লাঞ্চ বিরতির আগেই অবিশ্বাস্য বোলিং পারফর্মেন্সে বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকদের হয়ে কিমার রোচের পাঁচ উইকেটের পর কামিন্স তিনটি ও হোল্ডার দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
বাংলাদেশ একাদশঃ
তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও আবু জায়েদ রাহী।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ-
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, ডেভন স্মিথ, কাইরন পাওয়েল, শাই হোপ, রস্টন চেজ, শেন ডওরিচ (উইকেটরক্ষক), জ্যাসন হোল্ডার (অধিনায়ক), দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ, মিগুয়েল কামিন্স, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।